somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের দেশ অষ্ট্রেলিয়া... গ্রেট ওশেন রোড ধরে ছুটে চলা-১

১১ ই মে, ২০১১ সকাল ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রিসবেনের বন্ধু ডন বলেছিল মেলবোর্নে গেলে গ্রেট ওসেন রোড যেতে ভুলো না, মেলবোর্ন ফিরে বড়পা কে সেটা বলেছিলাম, বড়পার বাসা থেকে গ্রেট ওসেন রোড অনেকখানি দূরে। কোন এক রোদ্দুরভারা দিন দেখে আমরা বেড়োবো সেটাই ছিল প্ল্যান। কাছাকাছি এদিক ওদিক আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি আর আমাদের আসবার দিন ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে, এদিকে ওয়েদার ফোরকাস্ট বলছে আগামী সাতদিন শুধু বৃষ্টি আর বৃষ্টি  । মেলবোর্নের মে মাসের বৃষ্টি মানে বিচ্ছিরি হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। ঘুরে বেড়ানোর জন্য মোটেও সুবিধার না। তবে আশার কথা হোল এই ফোরকাস্ট যতই বলুক ঝুম বৃষ্টি হবে, আসলে সারাদিনমান বৃষ্টি হয না। বৃষ্টির স্বভাবই হোল এই, জায়গায জায়গায় ছাড়া ছাড়া ভাবে বৃষ্টি হবে…...তাই গেল কদিন বৃষ্টির হবার কথা তাকলেও আমরা দিব্বি বৃষ্টিছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। হয়তো একটু সময়ের জন্য একপশলা বৃষ্টি হোল। এই আশার উপর ভরসা করে রাতে ডিনারের সময আমরা চটজলদি প্ল্যান করে ফেললাম আগামীকাল মঙ্গলবার ১০ মে সাতসকালে সব্বাই ছুটবো গ্রেট ওসেন রোডের দিকে। গ্রেট ওসেন রোড মেলবোর্ন সিটি থেকে ৩ ঘন্টার গাড়ীচলাপথ, কাজেই আমাদের বাড়ী থেকে আরো একঘন্টা বেশী।

সকাল এ উঠে সব গুছিয়ে আমাদের বেড়ুতে বেলা দশটা হয়ে গেল। চললাম আমরা মেলবোর্ন সিটি পেড়িয়ে, ইয়ারা নদীর নীচের টানেল দিয়ে চলে, বিশাল বড় ওয়েস্ট গেট ব্রীজ পার হয়ে আরো দূরে।


ওয়ারেবী নামের একটা জায়গাতে একটু থামলো আমাদের গাড়ী, আবার ছুটে চলল। গাড়ীতে আমাদের জিপিএস নেই। আগের দিন রাতে মেইল ওয়ে দেখে নেয়া ছিল পথঘাট। রাব্বী ভাই, যিনি গাড়ী চালান প্রতি মুহুর্তেই কনফিউজড হয়ে যান আর আমাদেরও চিন্তিত করে ছাড়েন। এরপর আমাদের দুবোনের সিদ্ধান্তে আমরা সঠিক পথেই যাই। এপর আমরা পেরুলাম জিলং। জিলং আমার নামে-চেনা শহর। "লীজ" এর বাড়ী জিলং। লীজ ইরি’র একজন বড় সাইন্টিস্ট। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি জিলং এর পাহাড়ী টিলা টিলাময় এলাকা। অত বড়বড় পাহাড় নয মাঝারী টিলা। এখানে টিলাগুলোতে বসতি গড়ে উঠছে, বাড়ী উঠছে ঝটপট। এই ছোট টিলাময শহর দেখে আমি মুগ্ধ হযে চলছি......কে জানতো আরো কত বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমার জন্য!






জিলং পেড়িয়ে আমরা এঞ্জেল সী ধরে গ্রেট ওসেন রোডে উঠে পড়লাম, আমাদের ধারনা ছিল গোটা রোডটাই সাগর পাড় ধরে....তবে আমরা যেটি দিয়ে শুরু করলাম সেটা পাহাড়ের উপরের বনাঞ্চল ধরে চলছে, বা পাশে সাগর, তবে ঘন আর বিশাল বৃক্ষরাজির জন্য সাগর দেখা যাচ্ছে না। কিছু দূর যাবার পর এঞ্জেল সীর “সার্ফ কোস্ট” এ দাঁড়াবার জায়গা পেয়ে সবাই দাঁড়ালাম। এই প্রথম আমাদের “সাউথ ওসেন” দেখা! আহা কি যে সুন্দর! খাড়া পাহাড়ের ঠিক পায়ের কাছে নীল সবুজ সাগরের উপচে পড়া ঢেউ! মুগ্ধতায় ঠান্ডার অনুভূতি তুচ্ছ মনে হয। অবশ্য বাতাস ছিলনা বলে শীতও কমই ছিল, সাধারনত সাগর পাড়ে তুমুল বাতাস থাকে। নাকি আসলেই উত্তেজনায় শীত উধাও হয়েছিল কে জানে!







আরো খানিকক্ষন পরে এইরকম আরো একটুকরো বীচ, দাঁড়াবার সুযোগ আছে সেখানে। বীচটা একটু নীচে, ঠিক খাড়া পাহাড়ের নীচে নয়....পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়। আমি আর জাফনা চললাম বালুকাবেলায় পেছন পেছন বড়পা রাব্বীভাইও এলেন। খানিকক্ষন ছবি তুলে চোখভরা মুগ্ধতা নিয়ে আবার আমরা চরতে শুরু করলাম। চলতি পতে এই একই রকম ছোট চোট বাঁকে একই রকম পাথুরে অথবা বালুময় বীচ পড়লো প্রতিটাতে থেমে চললে নির্ঘাত আমাদের "এপালো বে" পৌছাতেই সন্ধ্যা হবে......তাই আমরা শুধু দেখেই "আহ কি সুন্দর" বলতে বলতে চলতে থাকলাম। এদিকে জাফনা বলছে 'আম্মু, তুমি যা দেখ তাই বল আহ কি সুন্দর"...। আর আমি বলি "বাহ সুন্দর লাগলে বলব না!'





সাগর পাড়ের খাড়া পাহারের গা বেয়ে সাপের মতন আকাবাকা যে পথ, সে পথ যে কি সুন্দর! দুটো পাহাড় পাশাপাশি একটি দিয়ে অনেকখানি ভেতরে ঢুকে নেমে পড়লাম, আবার পরেরটির নাগাল পেয়েই ঠিক একই পথে বিপরীত দিকে আবারো উপরে উঠে পড়ছি, আমার মুগ্ধ হবার ক্ষমতা অপরিসীম, কাজেই আমি আবার আহা উহু শুরু করলাম। এই খাড়া পাহাড় এর গায়ে যে সাপের মতন (এত বেশ আকা বাকা যে জোরে গাড়ী চালালে মাথা ঘুরতে শুরু করে, বমিও পেতে পারে) এই ওঠা এই নামা পথ, এই পথ যখন বানিয়েছে তখন কিভাবে বানালো বিস্মিত হতে হয়........একটা দেশ কত উন্নত তা তার পথঘাট দেখলে বোঝা যায়, আরো কত কত বছর পর আমাদের বান্দরবানে অথবা খাগড়াছড়িতে অথবা কক্সবাজারের পাড় ছুয়ে এই রকম পথ তৈরী হবে কে জানে!

রাব্বী ভাই এর ভাষ্যমতে এই রাস্তাঘাট বানানো হয়েছিল সব কয়েদীদের দিয়ে আর এবোরিজিনদের দিয়ে, কথাটা সত্য কিনা জানা নেই তবু মনে হয় হতেই পারে....প্রতিটা সভ্যতার পেছনেই এক নিমর্ম ইতিহাস লুকানো থাকে। আমাদের সরকার আমাদের টপটেররদের নিয়ে এইরকম প্ল্যান শুরু করলেই পারে :প।


চলতে চলতে আমরা পৌছলাম লরনে বীচে, লরনে একটা সাজানো গোছানো বীচ শহর। বীচের পাড়ে সুন্দর ছবির মতন গোছানো একটা পার্ক ওখানে দুপুরের খাবারের জন্য গাড়ী থামালাম........দেখি এক ঝাক সাদা ধবধবে কাকাতুয়া! কাকাতুয়াগুলো টুরিস্টদের পাল্লায় পড়ে শহুরে হয়ে উঠেছে, রুটি, বিস্কট, আপেল যা খাবার দিচ্ছে তাই খাচ্ছে! খাবার যার হাতে, তার গায়ে হাতে উঠে পড়ছে। তাই আমরা খাবার নিয়ে গাড়ীতেই বসলাম। ছিমছাম লরনা বীচে জাফনার অনেক দিন থাকার ইচ্ছে হোল। তবু আমরা আবার ছুটলাম সামনের দিকে কারন এপালো বে এখনো অনেক দূরে।







একই রকম মনকাড়া সাগড় পাহাড়ে মিলনমেলা দেখতে দেখতে আমরা পৌছুলাম এপোলো বে তে। এপালো বে আরো সুন্দর! বড় বালুময় বীচ। কিন্তু শখের টুয়েলভ এপোসোলের দেখা যে এখনো পেলাম না! আমাদের ধারনা ছিল টুয়েলভ এপোসল এপোলো বে তে। আসলে রাব্বী ভাই আর বড়পা বলছিল সেইরকম। আমি ঠিক জানি টুয়েলভ এপাসোল পোর্ট কেম্পবেল এ যা কিনা এপোলো বে থেকেও ৯৫ কিলোমিটার দূরে! তাই কিছু বলছিলাম না। রাব্বী ভাই এর ব্যাকপেইন, এতদূর গাড়ী চালানো উনার পক্ষে কঠিন, এমনিতেই সারাদিন গাড়ী চালাচ্ছেন, তাই আমরা এখান থেকেই ফিরবো ধারনা করছিলাম। কিন্তু উনি তখন ক্ষেপেছেন, টুয়েলভ এপোসোলস না দেখিযে ছাড়বেন না। তাই পথ জেনে নিয়ে চললেন পোর্ট কেম্পবেল টুয়েলভ এপোসোলস এর দিকে।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১১ সকাল ১০:৩০
১৭টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×