এ,বি,এম মুসা আওয়ামি ঘরানার কলামিস্ট। এটা সবাই জানে। তো উনি এমন কিছু নির্জলা সত্য কথা লিখেছেন যা পড়লেই বুঝতে পারবেন। দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমকে। এই পর্যবেক্ষণের পুরোটা সময়ে তার রয়েছে নানারকমের বিচিত্র অভিজ্ঞতা। সংবাদমাধ্যমের বিকাশ যেমন দেখেছেন, তেমনি বন্ধ হয়ে যাওয়াও দেখেছেন। স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা দেখেছেন, কণ্ঠরোধ করার প্রক্রিয়া দেখেছেন। বিরল ও বিচিত্র অভিজ্ঞতায় সিক্ত এই প্রাজ্ঞ সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়েছিল সাপ্তাহিক। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে উঠে আসে সমসাময়িক অনেক বিষয়। সরকার, রাজনৈতিক দল বা বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের ব্যাখ্যা দেন তিনি। ‘কৌশলী’ আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করেন বর্তমান সরকারের নানা কর্মকাণ্ডকে। স্বৈর সরকার ও গণতান্ত্রিক সরকারের সময়কার গণমাধ্যম স্বাধীনতার স্বরূপ বিশ্লেষণ করেন তিনি। সাংবাদিক সমাজকেও দায়ী করেন সৃষ্ট দুরবস্থার জন্য। প্রচার-প্রচারণায় সরকারের দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে জানান তার পরামর্শ। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মহিউদ্দিন নিলয় ও আনিস রায়হান। ছবি তুলেছেন মাহ্মুদা তুলি।
সাপ্তাহিক : প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে সরকারের আসলে করণীয় কি?
এবিএম মূসা : বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, তাদের নিজস্ব উন্নয়ন-কার্যক্রমের প্রচারের কোনো ব্যবস্থা নেই। এক যে বিটিভি আছে, জনগণ তার কোনো খবর বিশ্বাস করে না। এর বাইরে অন্য কোথাও সেভাবে সরকারের গণমুখী, কল্যাণকর কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরা হচ্ছে না। এই সরকার এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। আবার সরকারবিরোধী এমন অনেক প্রচারণা আছে, যা কিনা ভিত্তিহীন। এ ধরনের গাদাগাদা সংবাদ এখন প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য রাখতে দেখা যাচ্ছে না। সরকার এক ধরনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। আবার মারমুখী হচ্ছে, যুক্তিতর্ক দিয়ে কোনো অভিযোগ কমানোর জন্য যোগ্য ব্যক্তি এই সরকারে নেই। গণমাধ্যমের সামনে সরকারের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের যে ধরনের নানামুখী কথাবার্তা তাতেও বোঝা যায় যে, সরকারের ভালো কর্মকাণ্ড এবং নানা বিষয়ে সঠিক অবস্থান তুলে ধরার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, গ্যাস সেমিনার হচ্ছে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু বিদ্যুৎ, পানির জন্য সরকার কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তা নিয়ে কোনো সেমিনার হচ্ছে না। সরকার এই জায়গাটিতে বড় ধরনের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে চোখ রাঙিয়ে পজিটিভ নিউজ করার কথা বলে, অথচ সরকারের কর্মকাণ্ডের পজিটিভ প্রচার নেই। তাই কলম ও বৈরী সম্প্রচারের জবাব দিচ্ছে স্বৈরাচারী কায়দায়।
সাপ্তাহিক : সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
এবিএম মূসা : এখন আর কেউ শুধু সংবাদপত্রের কথা বলে না। ব্যাপক অর্থে গণমাধ্যম শব্দটি ব্যবহৃত হয়। সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া তথা টেলিভিশন চ্যানেল সব মিলিয়ে গণমাধ্যম। এক সময়ে রেডিওকে যে গুরুত্ব দেয়া হতো তা টেলিভিশনের কল্যাণে ক্ষীণ হয়ে এসেছে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংবাদের বিস্তৃতি গণমাধ্যম অংশীদারিত্ব করছে। সকল মত প্রকাশের মাধ্যম ও সাংবাদিকতার, স্বাধীনভাবে লেখা, কথা বলা ও পরিবেশন করাটা হচ্ছে স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা এবং বিতর্কের মূল বিষয়বস্তু। এদেশে পাকিস্তান আমলে এক সময়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক বাকবিতণ্ডা হয়েছে। আঘাত নেমে এসেছিল সাংবাদিকদের ওপর। গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকরা প্রাণ হারিয়েছেন, কারাভোগ করেছেন। নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে। মধ্যবর্তী বিশেষ কিছু সময় ধর্তব্যের মধ্যে না নিলে বলা যায় গত প্রায় ৬ দশক ধরে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা এ ধরনের পরিবেশেই কাজ করছেন। এতে তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, অস্তিত্ব বজায় রেখে কর্তব্য পালন করেছেন।
সাপ্তাহিক : আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কিভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন?
এবিএম মূসা : সৎ বা অসৎ সাংবাদিকতা, বস্তুনিষ্ঠ বা অপসাংবাদিকতা নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও স্বাধীনতা তথা অবাধ ও মুক্ত পরিবেশে সাংবাদিকতার যৌক্তিকতা কেউ খণ্ডাতে পারেননি। এর কারণ হচ্ছে, আপৎকালে জনগণ যখন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার বঞ্চিত হয়, অভিযোগ বা মনের ব্যথা, প্রকাশের উপায় খুঁজে পায় না। তখনই তারা স্বাধীন সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের সহায়তা কামনা করে। এক সময় লোকেরা পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করত, ‘দেশে আইন আছে না? আদালতে যাব।’ যে কোনো কারণে হোক, জনগণের সেই আস্থার জায়গায় ফাটল ধরেছে। জনগণ এখন যন্ত্রণা, বঞ্চনা, নিপীড়ন, অধিকার হরণ, ক্ষুদ্রÑবৃহৎ সকল সমস্যার সমাধানে গণমাধ্যমের সহায়তা চায়। অন্যদিকে সরকার যখন জনগণের এসব অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রশমন করতে ব্যর্থ হয় তখন গণমাধ্যমের মুখ চেপে ধরে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ ও নিরস্ত করার নানা উপায় খুঁজে বের করে। এসব উপায় স্বৈরতান্ত্রিক শাসনামলে সরাসরি সরকারের নির্বাহী আদেশে অথবা কালো আইনের মাধ্যমে কিংবা কূট আইনি পন্থায় করা হয়ে থাকে। স্বৈরতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকারের আমলে বাংলাদেশে গণমাধ্যমকে পরোক্ষ নিরস্ত-নিয়ন্ত্রণ করা হয়, কোন অছিলায় বা অজুহাতে বা কী উদ্দেশ্যে করা হয় তা ব্যাপক আলোচনাসাপেক্ষ।
বাকীটুকু এইখানে......
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১০ রাত ৯:৩৬