ফলে একাত্তরে যখন বাঙালি অস্ত্র হাতে পাকিসত্দানী বাহিনীর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে, এমনকি জীবন দিতে পর্যনত্দ দ্বিধা করে না তখন পাকিসত্দানী বাহিনী পর্যনত্দ অবাক হয়ে গিয়েছিল, মাছলিখোর বাঙালি এতো সাহস পেলো কোত্থেকে? (পড়ুন 1971 সালে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিসত্দানী সামরিক গোয়েন্দা আইএসআই-এর চীফ সিদ্দিক সালিকের বই উইটনেস টু সারেন্ডার এবং জেনারেল আসগর এর জেনারেল এ্যান্ড পলিটিঙ্)।
শেষ পর্যনত্দ তারা যে সিদ্ধানত্দটিতে উপনীত হয় তা হলো, এই সাহসের উদ্গাতা হচ্ছে শেখ মুজিব, তাই তাকেই শায়েসত্দা করতে হবে। কিন্তু ততোদিনে শেখ মুজিব তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকি-খেদানোর সমসত্দ আয়োজন সম্পন্ন করেছেন, যে কারণে যুদ্ধ এগিয়ে নিতে বাঙালিকে কোনও বেগ পেতে হয়নি। 1965 সালে শেখ মুজিব গোপনে ভারত সফর করেছিলেন একাত্তরের পটভ্থমি তৈরির জন্য, যাতে বাঙালি ভারতে আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনায় কোনও সমস্যার সৃষ্টি না হয় (বিশদ জানতে পড়ুন মুজিবুল হক খোকা'র অসত্দরাগে স্মৃতি সমুজ্জ্বল, মাসুদা ভাট্টির বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ঃ ব্রিটিশ দলিলপত্র এবং এম আর আখতার মুকুলের আমি বিজয় দেখেছি এবং এ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাসের রেপ অব বাংলাদেশ)। আসলে আমার পিএইচডির বিষয় এটা বলেই আমি এখন এগুলো নিয়ে লেখাপড়া করছি এবং আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে চাইছি। আশাকরি আপনারা কেউ আপত্তি করবেন না?
আসলে আমি বলতে চাইছি যে, একাত্তরে যদি মইত্যা, ময়লানা সাঈদীর বা গো-আজমদের মতো কতিপয় কুলাঙ্গার বাদে আপামর বাঙালি সাহসী না হতো তাহলে বিজয় অর্জন ছিল অসম্ভব। পাকিসত্দানীরা ভয়াবহ গণহত্যার মতো ধ্বংসলীলা সাধন করেও বাঙালিকে সাহস-চু্যত করতে পারেনি। কিন্তু দুঃখজনক সত্যি হচ্ছে একুশ শতকে এসে বাঙালি বোধ করি অনেক ঝিমিয়ে পড়েছে, সাহসহীন হয়ে পড়েছে, একটা ভয়ের সংস্কৃতি চালু করে সুক্ষ্মভাবে কাজটি করেছে জামায়াতিরা, কখনও রগ কেটে, কখনও খুন করে, কখনও বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশের দু'দু'জন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করাও এই ভয়ের সংস্কৃতি চালুর অন্যতম নিদর্শন। এখানে এ বিষয়ে বিসত্দারিত লেখার অবকাশ নেই বলে বাদ দিচ্ছি। কিন্তু আমি একথা বলতে চেয়েছি যে, এই ভয়ের সংস্কৃতি বিকাশের কারণেই আজ আমাদের এই দুরবস্থা, আমাদের ঘাড়ের ওপর খড়গ উঁচিয়ে আছে তালেবানী হায়েনা আর আমরা খাচ্ছি-দাচ্ছি-বংশবৃদ্ধি করছি।
আপনারা কি খুব বিরক্ত হবেন যদি আমি এই মহান মার্চ মাসে প্রায় প্রতিদিন ধরেই বিভিন্ন ডকুমেন্ট আর বই থেকে একাত্তরে বাঙালির সাহসীকতা আর বীরগাঁথা তুলে ধরি? তুলে ধরি সেই সব ঘাতকদের অপকর্মের কথা? তুলে ধরি তথাকথিত তলাবিহীন ঝুড়ি বাংলাদেশকে ঘিরে বিশ্ব রাজনীতির হালচাল?
আপনাদের অনুমতির অপেৰায় রইলাম। সবার জন্য দিনটি সুন্দর হোক, আজ উত্তাল মার্চের প্রথম দিন, সবাইকে অগি্ন-শুভেচ্ছা।