somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধখাওয়া একটা আর্টিকেল

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিনেমাফ্রিক হওয়ায় ভালো কোনো সিনেমা আসলেই আমি হলে দেখতে যাই।সেটা মাসের
শুরু হোক বা শেষে।আমাকে দেখে পরিবারের কোনো এক অল্পবয়সী শখের জ্যোতিষ
মশাই বলেছিলেন,ছেলে চুপচাপ হতে পারে,কিন্তু ছেলে উন্মাদ হবেই।আমি আসলেই
উন্মাদ।তাই মাসের শেষ বা শুরু আপাত দৃষ্টিতে কোনো এডভেঞ্চার থেকেই আমাকে সরাতে
পারে না।আর আমার ছোট্ট জীবনে এই যুগে গরমে সিদ্ধ হয়ে সিনেমা দেখার সংখ্যা ১১-১২ হবে
হয়তো।সংখ্যা কম মনে হতে পারে।তবে আমার ২২-২৩ বছরের জীবনে এর চাইতে বেশি
ভালো সিনেমা ( ট্রেইলর দেখে যেগুলো মনে হয় আর কি!) বের ও হয়নি বটে।সেই
ক্লাস সেভেনে যখন থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বার দেখতে যাই সিনেমা হলে
শুধু আমি আর আমার ছোট ভাই-ই পতাকাকে সম্মান জানাতে দাঁড়িয়েছিলাম। বাবা
সিনেমাহলে ঢোকানোর সময় দাঁড়াতেই বলেছিলেন।আমরা দুজন বাদে ওই অন্ধকারে আর
কেউ দাঁড়িয়েছিলো বলে মনে পরে না।বাবা সিনেমাহলে ঢোকেননি বটে। তবে ওই একটা
শিক্ষা কেনো জানি মনে গেঁথে গিয়েছিলো।আর এরপরে জোড় করে দাঁড়াতাম না
সত্যিই।মন দিয়ে জাতীয় সংগীতের শব্দ শুনলে লোম কেনো জানি এমনিই দাঁড়িয়ে
যেত।যেখানে লোম দাঁড়িয়ে যায়।আমার না দাঁড়ানোর সাধ্য কোথায়!
.
আমি বাদে খুব অল্পকয়েকজনকেই এভাবে সিনেমাহলে প্রোমোদের উদ্দেশ্যে এসে
দাঁড়াতে দেখেছি। প্রতিবারই পুনরাবৃত্তি ঘটতো আসলে।আর পেছন থেকে অনেক
লোকের বাজে কথাও শুনেছি।শেষ যেবার ঢুকি ' ডুব ' দেখতে আমি সহ পাশের ৫ টি
বন্ধু যখন দাঁড়ালাম দেখি আমাদের দেখাদেখি হলের ৩/৪ অংশ মানুষ দাঁড়িয়ে
গেলেন।ভালো লাগলো।
.
আমরা ছোটবেলায় শপথে এতো বেশিই ' সদা সত্য কথা বলবো ' শপথ করেছি যে বড় হয়ে
সত্য বলতে আমাদের বাজে রকমের অসহ্য লাগে।সত্যের প্রতি একটা বিরক্তি নিয়েই
আমরা যে হাত তুলে শপথ করতাম সেই হাতেই ঘুষের টাকা নেই।আর এই জাতীয়সংগীত
এতো বিরক্তিভরে গেয়েছি সেই স্কুল,কলেজে। যে জাতীয় সংগীত ও আমাদের
বিরক্তির উদ্রেক করে ছেড়েছে বটে।প্রাইমারী পাশ করেনি এমন লোকের সংখ্যা কম
হলেও জাতীয় সংগীত শুনে না দাঁড়ানো লোকের সংখ্যা এদেশে কম নয়।
.
আমার ব্যক্তিগতভাবে অনেক বন্ধু বা দূর সম্পর্কের ভাই বাইরে থাকায় তাদের দেশের প্রতি
শ্রদ্ধা দেখলে অবাক লাগে।যেসব দেশে যাওয়ার জন্য মানুষ পাগল থাকে সেসব
দেশে গিয়ে আবার মাতৃভূমির কথা মনে পড়ে কিভাবে? এজন্যেই বোধ হয় বলে,মানুষ
যেটা চায় সেটা যতক্ষণ না পায় ততক্ষণই ভালো।সেটা পেলে আর ভালো লাগে না
তার।
.
আমরা বড় অদ্ভূত।আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাওয়ার আগে কোথাও চান্স না
পেয়ে যখন হতাশা দুমুচড়ে ফেলে তখন আমাদের একটাই চাওয়া থাকে ঈশ্বরের কাছে
,গ্রাম হোক জঙ্গল হোক একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ায় দেও! সেই
চাওয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা গালাগালি করে চৌদ্দগুস্টি উদ্ধার করে ফেলি যখন
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা দেখি।বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক শিক্ষক ও এরকম
হতাশায় ভোগেন।
.
আমি ব্যক্তিগতভাবে ছোট থেকেই বিড়ালের মাঝে বাঘ হয়ে থাকার চাইতে বাঘের
মধ্যে বিড়াল হয়ে থাকতে পছন্দ করতাম।তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এখনো মন থেকে
আমি মেনে নিতে পারিনি।কারণ আমি যা শিখতে চাই,সেটা রাস্তার পাশের চায়ের
দোকানদার হোক বা ভালো কোনো সহপাঠী হোক তার কোনো কিছুই শিখতে পারিনি।হয়তো
তারা যা শেখাতে চায় সেগুলোতে আমার আগ্রহ কম।আগ্রহের কথা বলতে গেলে আমার
আগ্রহ ছোট থেকেই একটু বেপরোয়া। মানে আমি খুব ছোট থেকেই বাজে রকমের
ইচ্ছ্বা শক্তি নিয়ে বড় হয়েছি।ইচ্ছ্বার ডানাগুলো কখনো কেটে নির্দিষ্ট কোনো
জায়গায় আমি থিতু হইনি।
.
আমাদের দেশ খুব ভালো মানের ট্রেন্ড ফলো করে চলে বলে বোধ হয়।সবাই যখন কোনো
লোককে গালি দেয় আমরা সবাইই গালি দিতে শুরু করি।সেই লোক ভালো হোক বা মন্দ
হোক।কিন্তু আশেপাশে যখন ভালো কিছু হয় সেটাকে কেনো গ্রহণ করি না!এই
প্রশ্নের উত্তর কেউই জানে না।
.
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এই একই জিনিসের সম্মুখীন হয়েছে হয়তো অনেকেই।অনেকের
কাছে বিশ্ববিদ্যালয় মানে শুধু পড়তে আসা-যাওয়া এটাই মনে হয় এবং অনেকে
চাকরি লাভের শ্রেষ্ঠ পন্থা হিসেবে এটাকেই ধরে নেন।ক্লাসে খুব অবাক লাগে
মানুষ যখন Uber চেনেনা বা Pathao এর মতো জনপ্রিয় স্টার্টাপের কথা বললে হা
করে তাকিয়ে থাকে।মানুষ Google Doc এর কথা বললেও তাকিয়ে থাকে।আমি কাউকে
ছোট করছি না।একটা মানুষ না জানতেই পারে।আমি নিজেও অনেক কিছু
জানিনা।কিন্তু আমরা কিন্তু গালি দিতে জানি।বিশ্ববিদ্যালয়কে এমনকি অনেকসময়
শিক্ষককে...

" We are in the place right now in this genre you can buy your camera
or you can use your cellphone to make videos that will reach thousands
of people. You don't need the formalities of filmmaking they teach in
school. Instead take the camera, go in adventure and make something that
will people actually care about. There’s a lot of tutorials over
Internet. Why you are waiting for your teacher! "

Casey Neistat
Youtuber/Travel Film Maker.

এটা হয়তো ফিল্মমেকিং এর শুনতে ভালো লাগার মতো একটা উক্তি হবে।এটা একটু
নিজের জীবনের পছন্দের জায়গার সাথে মিলিয়ে নিলেই জীবন অনেক সহজ হয়ে
যায়।আমাদের সমস্যা আমাদের এই পছন্দের জায়গাটাই আমরা বুঝতে পারিনা
সারাজীবনে।তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে রাস্তার পাশের দোকানে কিছুক্ষণ পর পর
ঢুঁ মারতে মারতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দাঁড় কাঠ পেরিয়েই সরকারী কোনো অফিসে
ঢুকে যাই বিশাল বিদ্যার বোঝা নিয়ে।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভক্তি হয়তো তখনি
জন্মায় যখন সে আমাকে কিছু দিতে পারে।কিন্তু আমাদের বিদ্যের ঝোলাটাও থাকে
ফটোকপির দোকানে।চাকরি করার মতো দুটো সার্টিফিকেট বাদে আর কিছু
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ পর্যন্ত থাকে বলে আমার মনে হয়না।

আমাদের এতোটাই বাজে অবস্থা আমরা হয়তো অনেকে বিসিএস,ব্যাংক বা
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি বাদে অন্য কোনো পেশা যে আছে এটাও
জানিনা।কিন্তু অজুহাত দেই স্থায়ী চাকরির।সবচেয়ে বড় অজুহাত দেই ছোট
বিশ্ববিদ্যালয়ের।

" We all are humans. Boundless creativity. To unlock it we need to go
outside. Keep exploring, keep learning "
.
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হয়ে গেলেও আমরা অনেকেই আশেপাশের একটা গ্রাম বা
দর্শনীয় স্থানেও যাই না টাকার অজুহাতে বা সময়ের।যেখানে উন্নত দেশের
শিক্ষার্থীরা কাজ করে টাকা জমিয়ে সেমিস্টার ব্রেকের কিছু অংশ শুধু ঘোরার
পেছনেই ব্যয় করে।দোকানে ঢুঁ মেরে খরচ করা টাকার সংখ্যাও চার বছর শেষে কম
করে যত হবে সেটা টাকায় হিসেব করলে কতো হবে ভেবে দেখেছেন।এইটাকায় দিন শেষে
কতো এক্সপেরিয়েন্স কিনতে পারতেন তাও একটু ভেবে নেয়া উচিৎ আমাদের।
.
জন্মাবার পরে পড়লেন আর পড়লেন ২৫-২৭ বছর এভাবে কাটালেন আর ২৫ বছর অফিসের
দরজায় দাড়োয়ানের সালাম পেয়ে আর বাসার দরজায় বউ-ছেলেমেয়ের আবদার শুনেই
কাটালেন।বাকী ২০-৩০ বছর তো দাদা-পরদাদারা বিছানাতে শুয়েই
কাটিয়েছেন।আমাদের ও হয়তো সেভাবেই কাটাতে হবে।এরপরে সারাজীবন তো শুয়েই
থাকবো।যতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছো পৃথিবী দেখছো Why you are not going to explore
it?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×