somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই রিভিউ : ফাউন্ডেশন সিরিজ পর্ব ১ (ফাউন্ডেশন ও ফাউন্ডেশন এন্ড দি এম্পায়ার)

০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সায়েন্স ফিকশন হল আধুনিক যুগের রূপকথা।-
সূনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

আর এই রূপকথার সবচেয়ে বড় কথক হলেন আইজ্যাক আসিমভ। বলা হয়ে থাকে আইজ্যাক আসিমভ হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট কল্পকাহিনী লেখক, 'গ্র্যান্ডমাস্টার অফ সায়েন্স ফিকশন।' সম্পূর্ণ অবাস্তব এক জগৎকেও পাঠকের কাছে বাস্তব করে তোলার এক অসামান্য দক্ষতা আছে আইজ্যাক আসিমভের। তার বইগুলোতে নতুন এক বাস্তবতা কল্পনা করা হয়, যেখানে আমাদের বর্তমান বাস্তব এর ছিঁটেফোটা খুঁজে পাওয়া গেলেও তা শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে সেই নতুন বাস্তবেরই এক অবিচ্ছেদ্য উপকরন।

আইজ্যাক আসিমভের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা হলো ফাউন্ডেশন সিরিজ। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে, সিরিজের প্রথম বই ফাউন্ডেশনের প্রকাশের মধ্য দিয়ে, এরপর ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়, ফাউন্ডেশন এন্ড দি এম্পায়ার ও দি সেকেন্ড ফাউন্ডেশন। এই তিনটি বইকে একত্রে বলা হয় ফাউন্ডেশন ট্রিলজী। এটিই অরিজিনাল ফাউন্ডেশন সিরিজ। পরবর্তীতে ৮০ এর দশকে এ সিরিজের আরো ৮টি বই বের হয় - ফাউন্ডেশন্স এজ, ফাউন্ডেশন এন্ড দি আর্থ, প্রিলিউড ট্যু ফাউন্ডেশন এবং ফরোয়ার্ড দি ফাউন্ডেশন। এ পর্বে মূলত আলোচনা করা হবে ফাউন্ডেশন ট্রীলজি নিয়ে।

ফাউন্ডেশন সিরিজের পটভূমি হলো ফার্স্ট গ্যালাকটিক এম্পায়ার, যার ব্যপ্তি সৌরজগতের ন্যায় প্রায় ২৫ মিলিয়ন তারা নিয়ে, এর জনসংখ্যা
কোয়াড্রিলিয়নে হিসাব করা হয়, যা একটি অকল্পনীয় বড় সংখ্যা। প্রায় ১২ হাজার বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত এ সাম্রাজ্যকে বলা হত মানবসভ্যতার সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন। মনে করা হত কোনো কিছুই এর পতন ঘটাতে সক্ষম নয়।

কিন্তু বাস্তবতা এতটা মধুর ছিলো না। এম্পায়ার এর অকল্পনীয় উন্নত সভ্যতায় ধীরে ধীরে ঘুন ধরছিল। তার বাইরের জৌলুশ আর ক্ষমতায় সেই ক্ষয়কে দেখা না গেলেও ভিতরে ভিতরে তা ছড়িয়ে পড়ছিল, ধীরে ধীরে এগিয়ে আগিয়ে আনছিল এর ধ্বংসের সময়কাল।

সত্যটি প্রথম উপলব্ধি করতে পারেন এম্পায়ার এর অত্যন্ত গুরুত্বহীন রাজ্য 'হ্যালিকন' এর একজন গণিতবিদ, তার নাম হ্যারী সেলডন। ৩০ বছর বয়সে ল্যাবটারীতে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে নেহাৎ মজা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ইকুয়েশন নিয়ে একটি হাইপোথিসিস দাঁড়া করানর সময় তিনি একটি অদ্ভুত সামঞ্জস্য খুঁজে পান সমাজতত্ত্ব এবং গণিতের মধ্যে, যা তাঁর পরবর্তী জীবণকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। পরবর্তীতে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি এই যোগসাজশকে একটি বিজ্ঞানে রূপান্তরিত করেন, যার নাম হলো সাইকোহিস্টোরী।

তো সাইকোহিস্টোরী আসলে কি? সাইকোহিস্টোরি 'মব সাইকোলজী' বা সাধারণ মানুষের মানসিকতা এবং কর্মপ্রবৃত্তি গণনা করতে পারে। যার ফলে তারা ভবিষ্যতে কি করবে বা করতে যাচ্ছে তা আগে থেকেই জানা সম্ভব। আর সাধারণ মানুষ নিয়েই যেহেতু মানব সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তাই মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ এর মাধ্যমে নিরুপণ করা সম্ভব।

সাইকোহিস্টোরি দ্বারা সেলডন এম্পায়ারের আসন্ন পতন দেখতে পেলেন, তার গবেষণা এম্পায়ারের পতনের পরবর্তী প্রায় ৮০ হাজার বছর সম্পর্কেও একটি ধারণা দিল, যা হবে অরাজকতাময় এবং হানাহানিপূর্ণ। এম্পায়ারের পতনের ফলে জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতি পুরোপুরি থেমে যাবে, মানবসভ্যতা পেছনের দিকে চলতে শুরু করবে। ৮০ হাজার বছর পরে হয়ত আরেকটি সেকেন্ড গ্যালাকটিক এম্পায়ার তৈরি হবে, কিন্তু তার আগের সময়টি হবে এক অন্ধকার সময়। এ ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে সেলডন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যা 'সেলডন প্ল্যান' নামে পরিচিত। সাইকোহিস্টোরী দ্বারা চালিত এ পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হল অরাজক সময়টিকে ৮০ হাজার বছর থেকে কমিয়ে এনে মাত্র ১ হাজার বছরে নিয়ে আসা, তারপরেই দ্বিতীয় আরেকটি সাম্রাজ্যের সূচনা করা। এ কাজ করার জন্যে তিনি একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, যা হল ফাউন্ডেশন।

ট্রিলজীর প্রথম বই 'ফাউন্ডেশন' এ বর্ণিত হয়েছে এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত। এনসাইক্লোপিডিয়া সৃষ্টির কথা বলে নিরীহ সংগঠন হিসাবে শুরু হওয়া এই ফাউন্ডেশন পতনশীল সাম্রাজ্যের দূরতম কোণের একটি গ্রহে অবস্থান নেয়। শুরু হয় ১০০০ বছরে পুরো গ্যালাক্সী দখল করার পরিকল্পনার। কিছুকাল পরে গ্যালাক্সীর দূরতম প্রান্তে এম্পায়ারের কতৃর্ত্বের অবসান ঘটলে শুরু হয় অরাজক অবস্থার।এই সময়ে ফাউন্ডেশনকে মুখোমুখি হতে হয় হাজারো বাধার, এবং তা মোকাবেলা করতে গিয়ে সৃষ্টি হয় কিছু মহান নেতার, যারা ফাউন্ডেশনকে পরিণত করেন একটি উল্লেখযোগ্য শক্তিতে।

গ্যালাক্সীর প্রান্তে এম্পায়ার কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেললেও কেন্দ্রে তা এখনো অত্যন্ত ক্ষমতাশীল। এম্পায়ারের শেষ শক্তিশালী সম্রাট ক্লীয়ন দ্বিতীয় সুনিপুন দক্ষতায় এম্পায়ারকে আবারো সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। এদিকে এককালের অজেয় ইম্পেরিয়াল নেভির জেনারেল বেল রায়োজ ফাউন্ডেশনের গ্যালাক্সীপ্রান্তে প্রভাব এবং গ্যালাক্সী দখলের আসল উদ্দেশ্য জানতে পেরে শংকিত হয়ে ওঠে। ফাউন্ডেশনকে থামানোর জন্য নেভির সবচেয়ে শক্তিশালী - টুয়েন্টিথ ফ্লিট নিয়ে রায়োজ যাত্রা শুরু করে ফাউন্ডেশন রাজধানী টার্মিনাস অভিমুখে। ফাউন্ডেশন এবং এম্পায়ারের মধ্যে শুরু হয় এক দীর্ঘ যুদ্ধের। এমন এক গল্প নিয়ে রচিত ট্রিলজীর দ্বিতীয় বই 'ফাউন্ডেশন এন্ড দি এম্পায়ার' এর প্রথম অংশ।

কে জেতে সেই যুদ্ধে? তা আর নাই বা বললাম।
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×