এই তো বেশিদিন হই নাই। কিছুদিন আগেও সন্তান এ প্লাস পাওয়াতে মিষ্টি খাইলাম অভিভাবকদের কাছ থেকে। আজ সেই অভিভাবকদের অনেকেই সন্তান সরকারী কলেজে আসবে কি আসবে সেই চিন্তায় এ প্লাস পাওয়ার আনন্দ গুড়েবালি !
একজন ফোন এ তাঁর স্ত্রী কে বলছেন- " মাথা আবার খুব গরম। কেন যে গোল্ডেন পাইল না। আর শুনো, ওরে রাতে মোবাইল টিপা টিপি বন্ধ করতে বল। ওর মোবাইল আমি বাইর করতসি।" !
এস।এস। সি পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন কলেজে ভর্তির ফলাফল দেখে মনে হচ্ছে পড়ালেখার অধিকার শুধু গোল্ডেন ৫ দের। প্রতিটা কলেজে পুরা মেরিট লিস্ট এমন কি অপেক্ষমাণ লিস্ট এও গোল্ডেন ৫ ! শুধু ৫ ওয়ালাদের ও অবস্থান নাই ! ৫ এর নিচেদের কথা আর নাই বললাম !!
অভিভাবকদের পেরেশানি যে এখন কেমন হবে কে জানে ! কেন যে সিস্টেম পরিবর্তন করে না !! কলেজগুলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটা র্যাঙ্ক দিতে পারে আর সেই র্যাঙ্ক অনুযায়ী সিধান্ত দিয়ে দেয়া হবে প্রথম এত জন ভর্তি ফর্মের নাম্বারের ভিত্তিতে এই কলেজ এ ভর্তি হবে এবং এভাবে ক্রমান্বয়ে অন্য গ্রেড ধারীরা অন্যান্য কলেজে। এতে একজন গোল্ডেন ৫ কে ৪-৫ কলেজে ফর্ম নিতে হবে না। আর এটা হলে ভরতিচ্ছুদের এবং অভিভাবকদের সুবিধা হবে এবং তাদের একিসাথে ৩-৪ কলেজে ছুটতে হবে না যে কখন না জানি আবার কোন কলেজ অপেক্ষমাণ লিস্ট থেকে ডাক দেয় !!
তারপরও এত কষ্ট হত না যদি সব কলেজ একিদিনে ভর্তির তারিখ নির্ধারণ না করত। আরে বাবা একেক কলেজ একেকদিনে দে না কেন বুঝি না ! সব একিদিনে দেয় আর এই জন্য একিদিনে সব কলেজে ছুটাছুটি করতে হয় !!
হাইরে ! কি দরকার এই চাপ, এই ক্ষোভ। কি দোষ এই পোলা মাইয়াগুলার। দিন রাত মা-বাপের স্বপ্ন পূরণে ব্যাস্ত। সব দোষ সিস্টেমের।
এর মধ্যে আবার ভর্তির সময়ে বিভিন্ন লবিং এবং দুর্নীতির কথা নাই বললাম। যারা ৪ বা ৩ পেয়েছে তাদের যে কি হবে !! তাদের মনে হয় যেন কোন স্বপ্ন নাই, পড়াশুনার ইচ্ছা নাই ! সরকারী কলেজগুলোর সাথে সাথে ভাল প্রাইভেট কলেজগুলো ও সব এ প্লাস দিয়ে রাখে। আর তাই যদি হয় তবে কেন এ প্লাসের নিচের একজন শিক্ষার্থীর কাছে কেন ফর্ম বিক্রি করে ?
এ বছর সর্বমোট পাশের সংখ্যা ১১,৫৪,৭৭৮ জন। যদিও সারা বাংলাদেশে একাদশ শ্রেণীতে আসন সংখ্যা ১৫ লাখ। (বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো)
সেই হিসেবে আসনের সংকট না হলেও এত এত ভাল ভাল এ প্লাস ধারীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোথায় ? তথ্য মতে সারা দেশে সব বোর্ড মিলে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাত্র ১৬৬টি। পাশের হার আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকলেও ভাল কলেজের সংখ্যা বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নাই।
এইদিকে আবার শিক্ষা এবং প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের পরিমাণ ১১ দশমিক ৭ শতাংশ হলেও তা বাস্তবায়নে দেখা যায় অপ্রতুল যদিও কাগজে কলমে ঠিকই ৯৫ ভাব ব্যয় দেখানো হয়ে যায় !