somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী স্বাধীনতা বা অধিকার এবং ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারী জাগরণ, নারী স্বাধীনতা, নারী মুক্তি ইত্যাদি খুবই উচ্চারিত শব্দ যুগল বর্তমান সময়ে। বিশেষ করে যারা প্রগতিশীলতার চর্চা করে এবং যারা প্রগতিশীল এবং আধুনিক। এই কথাগুলো আরও যদি ভেঙ্গে বলি তবে বলা যায় নারীর অবাধে চলাফেরার অধিকার, নারীর অর্থনৈতিক অধিকার, পেশা গ্রহণের অধিকার ইত্যাদি। আমরা যারা নারী জাগরণের কথা বলি তাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা নিজের ঘরের নারীর বেলায় এই উচ্চারণ গুলো না করে বরং বিপরীতটাই করে। ঘরের কোন নারী নিজের পায়ে নিজে দাঁড়িয়ে নিজেকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে চাইলে তখন তাকে অনুপ্রাণিত করা হয় কৌশলী হয়ে। তারাই তখন বুঝান যে নারীর শিক্ষিত হওয়া জরুরী তবে সেটা নিজের জন্য এবং সন্তানের জন্য। ঘরের বাহিরে গিয়ে চাকরি করা নিষ্প্রয়োজন। নারী ঘরের বাহিরে গিয়ে চাকরি করবে, এই ব্যাপারে পুরুষ সমাজ বা মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষের মূল আপত্তি কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার থেকে ধর্মীয় বিধিনিষেধ নিয়ে বেশি। এই ক্ষেত্রে নারীর জন্য প্রথম বাধা আসতে পারে তাঁর পোশাক। তাকে অবশ্যই হিজবা বা বোরকা পড়তে হবে। আর যদি নারী আগে থেকেই হিজাব বা বোরকা পড়ে থাকে তবে দ্বিতীয় বাধা; পছন্দ অনুসারে পেশা গ্রহণে। এই সমস্যাগুলো মূলত মুসলিম সমাজেই বেশি পরিলক্ষিত। নারীর অবাধ চলাফেরার প্রতি ধর্মীয় নিষেধাবলী এই ক্ষেত্রে নারী জাগরণের বিরুদ্ধে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর তাই ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বিচার করা খুব প্রয়োজন এবং এই ব্যাপারে ইসলামের কি দৃষ্টিভঙ্গি সেটা মুসলিম সমাজের কাছে পৌঁছানো খুব জরুরী।
আমরা যদি ইসলামিক সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের দিকে তাকাই তবে দেখতে পাব যে অতীতে ইসলামিক যুগের শুরুতে নারীর অবাধ চলাফেরার ব্যাপারে মূলত কোন বাধা ছিল না। খুলাফায়ে রাশিদীনের আমলে নারীদের ঘর থেকে বের হতে কোন বাধা ছিল না। নারীরা ঘর থেকে বের হলে তাদের কপাল একটা রুমাল দিয়ে বাঁধা থাকতো। সম্ভবত এটাই ছিল তখনকার পোশাক সংস্কৃতি। ত্রয়োদশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত মুসলিম সমাজে কোথাও বোরকার প্রচলন দেখা যায় নি। খলিফাদের আমলে নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতা ছিল। তারা বিভিন্ন সভায়ও যোগ দিত খলিফাদের বা বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের বক্তব্য শোনার জন্য। এখন আমরা মুসলিম সমাজে যে হারেম পদ্ধতির কথা শুনে থাকি সেটার সাথে ইসলামের শরীয়তের এর কোন সম্পর্ক নেই বরং তা খোলাফায়ে রাশিদীনের যুগের পর বাইজান্টাইনদের অনুকরণে প্রবর্তিত হয়। প্রাক- ইসলামী যুগে সঙ্গীতজ্ঞ আরবদের মধ্যে অনেক নারীও ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আল-খানসার নাম বিখ্যাত। খলিফা উসমানের সময় হিজাজে সঙ্গীত বিশেষ প্রসার লাভ করে। তাঁদের মধ্যে তুওয়জ-এর নাম বিখ্যাত। তিনিই সম্ভবত আরবীতে প্রথম ছন্দের প্রবর্তন করেন। তিনিই প্রথম দফ ব্যবহার করে আরবী সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এই তুওয়জ এর শিষ্য ইবনে সুরাইজ ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী যিনি আল-হাসানের কন্যা সুকাইনার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। তিনিই প্রথম পারসীয় বীণার ব্যবহার করেছিলেন। উমাইয়াদের আমলে নারীরা শাসনকার্যে অংশগ্রহন করে খ্যাতি অর্জন করেছিল। এদের মধ্যে ছিলেন খায়জুরান, উলাইয়া, জুবাইদা, বুরান প্রমুখ। সাধারণ নারীরা নিয়মিত যুদ্ধেও অংশ নিতেন এবং পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে কবিতা, সঙ্গীত প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। আল- মুতাসিমের সময় উবাইদা আল-তুনবুরিয়া নামক এক রমণী তাঁর সৌন্দর্য চর্চা এবং সঙ্গীত প্রীতির জন্য জাতীয় গৌরব লাভ করেছিলেন।
আমরা যদি আমাদের রাসুল (সঃ) এর স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা) এর জীবনী দেখি তাহলেও দেখতে পাই যে তিনি নিজেও একজন নারী জাগরণের ক্ষেত্রে পাথেও। নিজেই ব্যাবসা-বাণিজ্য করতেন এবং নিজের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ব্যাপারে ছিলেন আধুনিক। আব্বাসীয় খিলাফতের যুগে মহিলাদের স্থান ছিল উচ্চে। খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী জুবাইয়দা সমাজ সেবা ও সংস্কৃতি বিকাশে অনন্য অবদান রেখে গিয়েছিলেন। খলিফা মুতাজিদের স্ত্রী কাত্রুন্নাদা তাঁর প্রাসাদে সাহিত্য সভা করতেন। তাঁর পুত্রের খিলাফতের সময়েও এই মহিলা রাজসভায় সভাপতিত্ব করতেন এবং রাষ্ট্রদূতদের স্বাগত জানাতেন। এই মহিলারা সে সময় মুখের উপর শুধুই “নিকাব” পড়তেন যা আমরা বর্তমানে আগের যুগের রাজা-বাদশাদের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে দেখতে পাই। সেটা ছিল সেই সময় শুধুমাত্র রাজবংশীয় নারীদের যা ছিল উঁচু বংশের নারীদের কে সাধারণ নারী থেকে পৃথকীকরণের একটা রেওয়াজ। ত্রয়োদশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত মুসলিম সমাজে কোথাও বোরকার প্রচলন সে সময় দেখা যায় নি সাধারণ মুসলিম নারীর ক্ষেত্রে। মোটামুটি দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ দশক পর্যন্ত নারীদের ছিল পূর্ণ স্বাধীনতা।

রাসুল (সঃ) এর সময়ে মেয়েরা মসজিদে পুরুষের সাথেই নামায পড়তেন। এমনকি গভীর রাত্রিতেও মেয়েরা মসজিদে অবস্থান করতেন। পুরুষদের পিছনে মহিলারা দাঁড়াতেন। এই নিয়ম নবীজির ইন্তেকালের পরও দীর্ঘদিন জারি ছিল। পড়ে ২৬৫ হিজরিতে মেয়েদের নামাজের জন্য মসজিদের মধ্যে দড়ি দিয়ে পর্দা দিয়ে পৃথক জায়গার ব্যবস্থা করা হয়। সেই সময়েও মেয়েরা যুদ্ধে সৈন্যদের খাদ্যদ্রব্য বয়ে নিয়ে যেতেন, আহতদের সেবা করতেন। মেয়েরা ক্ষেতে পুরুষদের সাহায্য করতেন। পেশা গ্রহনের ব্যাপারেও নারীর পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। ইমাম আবু হানিফা এই ব্যাপারে জোর দিতে গিয়ে উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, “ নারীর পক্ষে কাজী হওয়াতেও কোন আপত্তি নেই”।

মূলত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ২৮,২৯ ও ৩৬ অনুচ্ছেদে নারীর স্বাধীনতা এবং অধিকারের ব্যাপারে যে সকল নিশ্চয়তা উচ্চারিত হয়েছে তা কোনভাবেই ইসলামিক আইনের পরিপন্থী নয় এবং নারীর স্বাধীন চলাফেরায়, পেশা গ্রহণে ইসলামিক আইন-ব্যবস্থা কোন বাধার সৃষ্টি করে না।
ধর্মীয় সীমাবদ্ধতা ছাড়াও পুরুষ সমাজে থাকে নানা রকম সঙ্কীর্ণতা আর এই সঙ্কীর্ণতা এক প্রকার হীনমন্যতার নির্দেশ। কারণ এরা মনে করে নারী আয় করলে নারী সংসারে অধিকার খাটানোর বা পুরুষের উপর কতৃত্ব খাটানোর চেষ্টা করবে। মূলত এই মানসিকতার পুরুষরা সংসারে নিজেদের পুরুষতান্ত্রিকতা বজায় রাখার ব্যাপারে সচেস্ট এবং সংসারে স্বামী- স্ত্রী যে একে অপরের “জীবন সঙ্গী” সেই ব্যাপারে একদমই উদাসীন। এদের কাছে স্ত্রী “জীবন সঙ্গিনী” থেকে সন্তান জন্মদানের, লালনের এবং সাংসারিক সেবাদানের একটি নিরবিচ্ছিন্ন যন্ত্র ছাড়া কিছু না। তাই একটা বিস্তারিত জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম কোন ভাবেই নারীর স্বাধীনতাকে অবমূল্যায়ন করে না বরং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দেয়।


সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ৩:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×