somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অঙ্গনা, তুমি বড্ড ভারী, এই পৃথিবীর বুকে ।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ঢের গড়িয়ে গেছে, চার দেয়ালের সকল দরজা জানালা রুদ্ধ করে দিয়েছি । আমার কোন ভয় নেই, শঙ্কা নেই। ওরা আমাকে কখনো দেখে নি, হয়তো আর কখনো দেখবে না, ওদের ভেতরের বিষাক্ত রক্ত টগবগিয়ে উঠবে না, সে সুযোগ তারা কখনো আর পাবে না। আমি ফিরবো না, লিখেছি হৃদয়ে এক অলিখিত পণ। দৈনন্দিন রৌদ এসে কড়া নেড়ে যায়, সন্ধ্যা ফিসফিসিয়ে কী যেন যায় বলে, জোনাক জ্বলা জোসনা নিরাশ হয়ে নীরবে করে প্রস্থান।

'ছুঁড়ে ফেলে দিলাম তোমাদের এইসব অহেতুক আবদার ! তোমাদের এতসব সৌন্দর্যে আমার কী আসে যায়, যেখানে আমি হই বিবর্জিত, নিষিদ্ধ নগরীতে নিক্ষিপ্ত ? এর থেকে ভালো, তোমাদের সৌন্দর্যে তোমরা একাকী ডুবে মরো, আত্মাহীন বিভ্রান্তিতে ।'

অথচ নীরবে আমি কাঁদি, দেয়ালের রঙে আঁকি ওদের প্রতিচ্ছবি, নানান ঢংয়ে। দেয়ালের রং খসে পড়ে । ওরা তা জানে না, ওদের আমি কতটুকু ভালোবাসি সমস্ত হৃদয় জুড়ে, আফসুসের নেশা খুন করে আমাকে প্রতিটি ক্ষণ। ইচ্ছে হয়, নিজেকে চিবিয়ে নিজে খেয়ে ফেলি- দেহের প্রতিটি ভাঁজ, জাগতিক আকর্ষর্নিয়া। এরপর সকল দরজা জানালা খুলে দেব, সঁপে দেব নিজেকে প্রকৃতির কাছে । সকল নিষেধাজ্ঞারোপ তুলে নেব, নির্দেশিকাহীন অযাচিত প্রবেশ ঘটুক ক্ষণে ক্ষণে। কিন্তু, অদেহ জুড়ে যে অচ্ছুৎ ঘৃণা? সে নিষ্পাপে বিশ্বাসী, নির্লজ্জ কখনো তাকে স্পর্শ করে নি, সে কখনো চায় না তার বিশুদ্ধ জলে কারো অবাধ্য ডুব । সে এতোটা অস্পর্শিয়া ! এই অদেহ ।

ওপারের প্রকৃতি সদা অভিমানে মরে, আঁধারে কেন আমার মিথ্যে আলো নিয়ে এতো মাখামাখি! আমার এই অবুঝ বুকে কতকাল আসে নি ধমকা হাওয়া, শীতল শিহরণ, কোমল হৃদয়ের প্রেম ! আমি তা বেমালুম ভুলে গেছি, এ বক্ষ পরাণে নিক্ষিপ্ত হয়েছে । আজ এই লাল পাথরে লিখি না আমি শুধু পৃথিবীর নাম, লিখি অন্যসব। কারণ ওরা দেয় না আমাকে বিস্বাদী কলঙ্ক, বস্তুত ওখানে মাংসল কোন কঙ্কাল নেই । আমি নির্দ্বিধায় পাখা মেলে উড়ে বেড়াই ওদের বুকে। আর ওদেরকে দীক্ষা দেই, তোমার বুকে মানুষ জন্ম দিও না, কারণ তুমি বুঝতেই পারবে না ওরা কখন যে অমানুষ হয়ে গেছে ! বিশ্বাস করো, ওপারের দরজা জানালা ঘূণে ধরার আপ্রাণ চেষ্টায় মগ্ন, ওপারের ঘূণও হয়েছে বিশ্বাসঘাতক, সন্ধ্যা হলেই কিলবিলিয়ে বের হয় দরজা ভাঙতে। আমি এখনোও লজ্জার সুরক্ষায় অপ্রতিরোধ্য, সর্বদা নীল হই, পুড়ি, জল তো সেই কবে শুকিয়ে গেছে।

এই ঘরে কোন আকাশ নেই, কোন পাখি নেই, মেঘ নেই, বৃষ্টি নেই, বৃক্ষ নেই, চন্দ্র নেই, প্রেম নেই, আবেগ নেই, যন্ত্রণা নেই- সুখ নেই। এই যৌবন ভরা দেহে ঘামহীন লোমকূপ, পরিচ্ছন্ন ইতিহাস, ছায়াহীন অবয়ব। হৃদয় নামে এক সন্ধ্যা আছে, যেখানে সূর্যাস্তের কোন প্রমাণ মেলে না । মায়াবী দু'চোখ আছে, দৃষ্টিতে দৃষ্টিহীন । অদৃশ্য একজোড়া ওষ্ঠ আছে, শ্রুতিহীন অনুভব । সমস্ত দেহ অধরা এক অদ্ভুত কিংবদন্তী!

এমনি এক আবাস আমার। তবুও প্রকৃতিকে আমি হৃদয় দিয়ে বলেছি, আমি ফিরবো, যদি তুমি হতে পারো সোচ্চার, যদি তুমি করতে পার কলঙ্কমাখা সমস্ত সজ্জার বিনাশ । আবারও কথা দিলাম, তুমি জাগ্রত হলে আমি বিশ্বাসী হবো, আমি ফিরবো, এমনি আমার মতো, ঠিক যেন আমি অজস্র নির্ঘুম অপেক্ষায়.....


অঙ্গনা- নারী ।


লেখাটার অন্তর্নিহিত আলাপনঃ
[এই লেখাটা সমসাময়িক সামাজিক অবস্থানের উপর লেখা । প্রতিদিন পত্রিকা বা নিউজ চ্যানেল খুললেই নারী নির্যাতন, ধর্ষন, এভনরমাল এবিউজ এসবের খবর পাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার । যেন এগুলো ঘটাই স্বাভাবিক । কিন্তু তা নয়, তাই এই লেখায় একজন নারী পৃথিবী থেকে নিজেকে আলাদা করে বন্দি করে নিয়েছে, তার ভেতরের বেদনার কথা বলেছে, সে পৃথিবীর প্রকৃতি থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে মানুষনামক অমানুষগুলোর জন্য। শেষে সে ফিরে আসার কথাও বলেছে, যদি প্রকৃতি নিজস্ব শক্তিতে এসব অমানুষদের শেষ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে তবেই সে ফিরে আসবে, তার মত আরো অনেক নারী ফিরে আসবে । সে পৃথিবীর মানুষদের তৈরী ন্যায় নীতির উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে । তাই সে নিরুপায়, তাই সে প্রকৃতির সাহায্য কামনা করে । এটি একটি কাল্পনিক দৃশ্যপট । ]

ছবি বন্ধু- নেট ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×