ছেলেটার সাথে কম ক্রিকেট খেলিনি। আমার বেশ কয়েক বছরের জুনিয়র ছিলো। অনেক সম্মান করতো ও আমাকে। ওদের সাথে যখন খেলা দিতাম, খেলাতে যেকোন গন্ডগোল হলে ও পিচ্চি হলেও নিজেই সমস্যার সমাধান করার জন্য এগিয়ে আসতো। দেখলেই সালাম দিয়ে তারপর কথা বলা শুরু করতো। খুবই ভাল ছিলো। আসলেই খুব ভাল ছিল। আমি নিজেও ওকে ভালবাসতাম। দেখতেও অনেক সুইট ছিলো। আমরা এতো এতো বইপত্র পড়েও মানুষের সাথে এ আচার ব্যাবহার শিখতে পারিনি। কিন্তু ও না পড়াশুনা করেও কিভাবে এতো ভাল ব্যবহার শিখলো এটাই সেলুকাস লাগে আমার কাছে। ও সৎ ছিলো, পরিশ্রমী ছিলো।
হুমমম এটা ঠিক যে ও অশিক্ষিত ছিলো, কিন্তু হলফ করে বলতে পারবো ও আমাদের তুলনায় অনেক ভাল ছিলো। আমরা শিক্ষা গ্রহন করি নিজেকে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য, কিন্তু ও কৃত্রিম শিক্ষা গ্রহন না করেও বাস্তব শিক্ষার বলে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলো।
ড্রাইভিং শিখতো, আর অবসরে টাকার জন্য মানুষের যেকোন কাজ করে দিতো। মনে আছে সামনের বছর আমাদের বাড়ির একটা অনুষ্ঠানে ও এসে আমার এক দাদাকে বলেছিলো যে দাদা আমি আপনাদের থালা বাসন সব ধুয়ে দিবো, আমাকে দুপুরে খেতে দিবেন??
আমি সামনেই দাড়ায় ছিলাম, আমার সামনে ও বলতে লজ্জা পাচ্ছিলো। বলে বোঝাতে পারবো না যে ওইদিন কতটা খারাপ লেগেছিলো। আমার এমন কোন দিনের কথা মনে পরে না, যেদিন আমি ওকে কিছু বলেছিলাম আর ও আমার কথা শুনে নি।
ওর নাম ছিলো আশরাফুল। যাকে এখন থেকে সবসময় ছিলই বলতে হবে, আছে বলা যাবে না আর কখোনই। কারন ও গত হয়ে গেছে। গতরাতেই রোড একসিডেন্টে মারা গেছে। আর কখোনই ও আমাকে সালাম দিবে না, সবসময় মুখে হাসি লেগে থাকা পিচ্চি ভাইটাকে আর দেখতে পারবো না। ঢাকায় গেছিলো ও গাড়ি নিয়ে। গাড়ির মেইন ড্রাইভার এর সমস্যা ছিলো বলে আসার পথে ওই অনেকটা পথ ভালভাবে চালায় নিয়ে এসেছিলো। এরপর গাড়ির মেইন ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করে। কিন্তু গত দুইদিন না ঘুমানোর ফলে উনার গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছিলো। তারপরও উনি গাড়ি চালাতে শুরু করেন। আর কিছুক্ষন পরেই ঘুম ঘুম চোখে একটা বড় গাছের সাথে গাড়ি লাগিয়ে দেন। আশরাফুল মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়। আর দুইদিন পরে রংপুরে মারা যায়।
বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, যে গত দুইদিন আগেই ওদের সাথে খেললাম। হেরেও গেলাম।
ও সেদিন জিতেছিলো কিন্তু জীবনযুদ্ধে আর জিততে পারলো না, হেরে গেলো। চিরতরে হারিয়ে গেলো।
খুব নিষ্ঠুর এই পৃথিবী। ভাল মানুষদেরকে সবসময় আগে নিয়ে চলে যায়। গত ১ বছরে আমাদের বাড়ির আশে পাশের মোট চারজন প্রায় আমার কাছাকাছি বয়সের ছেলে মারা গেলো। প্রদিপ ভাই, পারভেজ, রবিউল আর এখন আশরাফুল। এই চারজনের মৃত্যুর কারন একসিডেন্ট। জানি না কেনো তারা এতো তাড়াতাড়ি ঈশ্বরের এতোটা প্রিয় হয়ে গেলো।
আর শেষে আপনাদের নিকট একটা অনুরোধ রেখে গেলাম কখোনই ঝিমাতে ঝিমাতে গাড়ি চালাবেন না। নিজে সতর্ক হোন অন্যকে সতর্ক করুন। মনে রাখবেন জীবন একটাই। একটা ছোট ভুলই আপনাকে আর আপনার পরিবারকে চিরতরে তছনছ করে দিতে সক্ষম।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




