somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শূন্য দশকের কবিতা প্রসঙ্গে

০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা গুরুত্বহীন প্রশ্ন করেছেন এক অনুজ: 'শূন্যের কবি' কথাটির ব্যাপ্তি কতটুকু? বললাম, তুমি কি তাদের পথানুসরণ করতে চাচ্ছ, যারা নামের আগে এ জাতীয় তকমা পাকাপোক্ত করে রাতারাতি জীবনানন্দ বনে যেতে চায়? দেখ, লিখতে এসে পাঠককে দশকি পরিচয় জানিয়ে যারা কবিযশ প্রার্থনা করছেন, আমি সবসময় তাদের এড়িয়ে চলেছি।
.
'শূন্যের কবি' কথাটির ব্যাপ্তি জানার আগে 'শূন্যের কবিতা'র চরিত্র-লক্ষণ সম্পর্কে অবগতি থাকা জরুরি। 'শূন্যের কবিতা'র অস্তিত্ব আছে, কিন্তু এ-নামে লেখা যত গদ্য ও কৃত সম্পাদনা-সংকলন রয়েছে, সবই ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার মতো। 'শূন্যের কবিতা' বলতে যা বুঝি, শূন্য দশকের সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক ইত্যাদি পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে রচিত কবিতা, কেবল শূন্য দশকে লিখতে আসা তরুণদের কবিতা নয় - সমপরিপ্রেক্ষিতসংলগ্ন নবীন-প্রবীণ (সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ, ময়ুখ চৌধুরী, হেনরী স্বপন, হাফিজ রশিদ খান, খালেদ মাহবুব মোর্শেদ, মাসুদ খান, মজনু শাহ, মুজিব ইরম, টোকন ঠাকুর, চন্দন চৌধুরী, আরণ্যক টিটো প্রমুখ) সবার কবিতা বুঝি। অর্থাৎ সবুজ তাপসদের কবিতা নয়, উক্ত সময়ের ঘটনাকে ধারণ করা মুজিব ইরমদের কবিতাকেও বুঝি। কোনো গদ্য ও সংকলনে মুজিব ইরমদের এ-জাতীয় কবিতা তুলে ধরে শূন্যের কবিতা মাপার পাল্লাটিকে কাঠধরা করা হয়নি। 'শালুক'র আগস্ট ২০০৭ সংখ্যায় মজনু শাহদের শূন্যের ঘটনাঘনিষ্ট কবিতাকে শূন্যের কবিতা বলা হয়নি। 'দূর্বা'র ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সংখ্যায় প্রকাশিত শামীম রেজার ‘নতুন শতাব্দীর সূচনায়, নতুন কবিতার খোঁজে’ নিবন্ধেও মজনু শাহদের কবিতাকে আমলে নেয়া হয়নি।
.
দশকাশ্রয়ী লেখকদের বেশিরভাগই জলে খড়কুটো ধরে আত্মরক্ষা-চাওয়া পিঁপড়ের মতো। তারা ভালো/সুন্দর কবিতার পেছনে ধাবিত হওয়ার চেয়ে চটজলদি কবিস্বীকৃতি ও পুরস্কারপ্রাপ্তিকে গুরুকর্ম মনে করেন, এবং এজন্যে তারা 'অমুক দশকের কবি ও কবিতা', তমুক দশকের কবি ও কবিতা' শিরোনামে সম্পাদনা-সংকলন প্রকাশ করেন অথবা এ জাতীয় মতলবি কাজ যারা করেন তাদের পেছনে সারিবদ্ধ হন। তাদের কৃতকর্মে নির্দিষ্ট কোনো দশকের কবিতার চারিত্র্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সারবান বক্তব্য থাকে না। অর্থাৎ কোন্ কোন্ গুণগ্রাম বর্তমান থাকার কারণে এগুলো আশির, ওগুলো নব্বই কিংবা শূন্য দশকের কবিতা বা কোন্ কোন্ বিলক্ষণ থাকার কারণে এরা আশির, ওরা নব্বই কিংবা শূন্যদশকের কবি বা কোন্ কোন্ ব্যাপার বর্তমান থাকার কারণে আশির কবিতা থেকে নব্বইয়ের কবিতা স্বতন্ত্র- এ-জাতীয় বিশ্লেষণধর্মী-মূল্যায়নধর্মী আলোচনা দশকপন্থি তালিকাবাজদের বক্তব্য ও লেখায় গরহাজির। 'অনিরুদ্ধ আশি' কবিতা সংকলনে খোন্দকার আশরাফ হোসেন ‘আশির দশকের কবিতা : ঐতিহ্যসূত্র ও নবনির্মিতি’ গদ্যে আশির কবিতার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এগুলো গ্রহণীয় নয়। এগুলো এর আগের ও পরের কবিতায়ও বিদ্যমান। নব্বই দশকাশ্রয়ী কোনোকোনো লেখকের কৃত সম্পাদনা ও সংকলনে নব্বই দশকের কবিতার চরিত্র বয়ানে স্বাজাত্যবোধ, দেশাত্ববোধ, উত্তর-আধুনিক চেতনা এবং নতুন নতুন চিত্রকলে্পর প্রসঙ্গ সামনে আনেন। ব্যাপারগুলো কি তাদের অগ্রজ ও অনুজদের লেখায় বর্তমান নেই? শূন্য দশকাশ্রয়ী কোনোকোনো লেখকের কৃত সংকলনে শূন্যের কবিতার মূল প্রবণতা হিসেবে ছন্দহীনতার দেখানো হয়েছে। এটা অন্যান্য দশকের কবিতা হতে শূন্য দশকের কবিতাকে আলাদা করতে পারার যথার্থ বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। হাফিজ রশিদ খান ‘এই সময়ের কবিতা : কাল –
পুরাকালের সিম্ফনি’ গদ্যে শূন্য দশকের কবিতার গুণগ্রাম বয়ান করেছেন এই বলে, “শূন্যদশকের কবিতায় লোকজীবনের প্রবাদ-প্রবচন, মায়াবী আত্মীয়তা, সান্দ্র ভাবুকতা, শেকড়খোঁজার প্রবণতা ওঠে আসছে। সেই সঙ্গে যোগ হচ্ছে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠিসমূহের মিথকেন্দ্রিক নানা কল্পনা, স্মৃতি, নস্টালজিয়ার নানাটান”। হাফিজ-চিহ্নিত বৈশিষ্ট্যগুলোও শূন্য দশকের কবিতার বেলায় যথার্থ নয়, কেননা এগুলো আশি ও নব্বইয়ের কবিতায়ও পরিলক্ষিত।
.
তাহলে আমরা কী বুঝলাম? যা বুঝলাম, শূন্য দশকের ঘটনা নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক থেকে শুরু করে সবুজ তাপস পর্যন্ত সবারই কিছু কবিতা রয়েছে। কিন্তু শূন্য দশকের নির্দিষ্ট কোনো কবি নাই। তারপরও কিছু লেখক 'শূন্য দশকের কবি' হতে সংকলনবদ্ধ হলো (হচ্ছে)। তাদের নিজেদের কবিসত্তার শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে সমূহ সন্দেহ ছিল (আছে) বিধায় আত্ম-অস্তিত্বরক্ষার স্বার্থে এমনটা করলো (করছে), আমার বিশ্বাস।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×