প্রথম ছবিটি রাজীব মীরের। সমুদ্রহৃদয়ের অধিকারী একজন মানুষ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় এ-মানুষটির সাহচর্য আমিও পেয়েছি। স্পষ্টভাষী। আমাকে খুব ভালোবাসতেন। ভালোবাসার মাত্রা এমন ছিলো যে, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পাশ দিয়ে করিডোর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখতে পেলে আমাকে চলন্ত ক্লাসেও ঢুকতে বাধ্য করতেন, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আমার কবিসত্তার পরিচয় দিতে পারলে তৃপ্ত হতেন। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পেলে মহাখুশি, চট্টগ্রামের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একসাথে উপস্থিত থাকতে পেরেছি। একজন চমৎকার মানুষ। লেখালেখির বেলায়, কোনোকিছু লেখার পর আমাকে দেখাতে পারলে খুব আনন্দিত হতেন। চট্টগ্রাম থাকাকালে তিনি মূলত গদ্য ও কলামই লিখতেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত হওয়ার পর অর্থাৎ ঢাকায় ফিরে তিনি কবিতাকর্মী হয়ে ওঠেন। পাঙক্তেয় কবি।
২১ জুলাই, ২০১৮ মধ্যরাতে ভারতের চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কবি রাজীব মীর জড়ান্তরিত হয়েছেন। এ-প্রিয় মানুষটিকে বেশ মনে পড়ছে; তার স্মৃতিতে আমার ডায়েরি থেকে একটা পৃষ্ঠা ও আমার একটা ছবির বয়ান তুলে ধরলাম:~
১.
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৬; চট্টগ্রাম: 'খড়িমাটি'র সম্পাদক মনিরুল মনিরের বাসায় সকাল ১১টার সময় উপস্থিত থাকার কথা। সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন গোসল করতে গেলাম, মনিরুল মনির ও রাজীব মীর কল দিয়েছেন। রাজীব মীর তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। মনিরের কলের মানে বুঝলাম। রাজীব মীর কেন কল দিলেন, বুঝলাম না। রাজীব মীরকে দুটো মিসকল দিয়ে ভাত খেতে বসলাম। তিনি কল ব্যাক করলেন। জানতে পারলাম, তিনি মনিরের বাসায় অাছেন এবং আমার সাথে আড্ডা দিতে চাচ্ছেন।
মনিরের বাসায় গেলাম। রাজীব মীরের সাথে দেখা হল। বললেন, 'সবুজ, মনিরুল মনিরকে প্রশ্ন করলাম- তরুণদের মধ্যে কে কবিতা ভালো বোঝে। সে তোমার নাম বললো। একটা গদ্য লিখলাম, চোখ বুলিয়ে দেখ।' গদ্যটা (তা খড়িমাটির পরবর্তী সংখ্যায় প্রকাশিত) ভাসাভাসা পড়লাম। ভালই লিখলেন। তার সাথে লেখালেখির বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হল।
রাজীব মীর বললেন, "তোমাকে বই বের করার জন্যে সহযোগিতা করব বললাম, তুমি দেরি করছো কেনো?"
সাথে সাথে মনির বলল, "তাকে আমিও বলেছি, 'খড়িমাটি'র পেছনে তার একটি পাণ্ডুলিপি ছাপবো, সে রাজি হচ্ছে না।"
বললাম, সকলের হৃদ্যতাকে পুঁজি করেই একদিন কবিতার বই করব। আমি সময় নিচ্ছি স্যার। আমি চাচ্ছি, প্রথম বইটা ঋদ্ধ হোক।
মনিরের বাসায় দুপুরের আহার সেরে তিনজনই চলে আসলাম বাতিঘরে। দেখলাম, আসমা বীথি সম্পাদিত 'ঘুড়ি' বের হল। রাজীব মীর ম্যাগাজিনটা হাতে নিয়ে আমার কবিতাগুলো পড়লেন। তিনি আমার ভূয়সী প্রশংসা করলেন, আমার পরম শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন।
সন্ধ্যায় রুবেল দাশ প্রিন্সের কাছে জানতে পারলাম, স্বরূপ ভট্টাচার্য্য 'ঘুড়ি'তে তার কবিতা জুনিয়রদের কবিতার শেষে ছাপানোর কারণে আসমা বীথিকে বেশ বকলেন। এটা সত্য যে, বীথি যাদের কবিতার শেষে স্বরূপ ভট্টাচার্য্যের কবিতা ছেপেছে, তারা তার জুনিয়র। যারা 'সিনিয়র-জুনিয়র' প্রত্যয়ে আস্থাবান, এটা তাদের কাছে কিছুটা দৃষ্টিকটু লাগবে।
২.
দ্বিতীয় ছবিটা আমার, তবে এতে আমার বলতে কিছু নেই! ছবিটি তুলেছেন কবি সাগর শর্মা। মাথার টুপিটা সাগর শর্মা অথবা কবি প্রান্ত পলাশ- কেউ একজন কিনে দিয়েছেন। চোখের চশমাটা সাগর শর্মার চোখ থেকে নিয়ে পরেছি। গায়ের সুয়েটারটা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তখনকার অন্যতম শিক্ষক রাজীব মীর গিফ্ট করেছেন। শার্টটা আমার ছোটভাই বিল্লাল কিনে দিয়েছেন। শরীরটা পিতা-মাতার কাছ থেকে পাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭