somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ফুটবল ম্যাচ।

১৩ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-তুই খেলবি না তোর আব্বা আইসা খেলবো।

সব কটা দাঁত প্রদর্শন পূর্বক কথাটা বললেন শুভ ভাই। সবকটা দাঁত দেখা গেলেও বেশ বুঝতে পারছি সেটা মোটেও সূখের চিহ্ন নয় বরং রাগের প্রদর্শনী, যেটাকে আমরা দাঁত কিড়মিড় বলি। তা রাগ করার যথেষ্ট কারণ আছে। আজ পাড়ার বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের মাঝে ফুটবল ম্যাচ আর হাফ টাইমে কিনা হতভাগা ফজলুটা পা মচকে বসে আছে। অগত্যা অবিবাহিত কুলের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য আর কাউকে না পেয়ে শেষটাই আমাকে এসে ধরেছেন শুভ ভাই। আমি আবার ফুটবল খেলায় ক্রিকেট করার মতোই পারদর্শি অর্থাৎ উত্তেজনার চোটে মাঝে মাঝে বল হাত দিয়ে ধরে ফেলি। তাছাড়া আমার বডি মোবারকও বিশেষ সুবিধার না। গত বছর কুমার পাড়ার কুমারদের হাতে (আসলে পায়ে) রাম ঠ্যাঙানি খেয়ে শপথ নিয়েছিলাম আর কোন দিনও মাঠ মুখো হবো না। সে শপথ মনে হয় এই বেলা ভাঙতে হবে শুভ ভাইয়ের কোপানলে পড়ে। কোন কুক্ষনে যে খেলা দেখতে এসেছিলাম।

-তাহলে আব্বারেই ধইরা নিয়া যাও, আমাক হুদাহুদি টানাটানি করতাছো কেন? বললাম আমি।

-সেইডা করতে পারলেতো ভালই হইতো। কিন্তু তোর আব্বাহুজুর যে তোর আম্মাজানরে বিবাহ কইরা ফালাইছে।

তাওতো ঠিক। আব্বাজান বিবাহ করে তার ইহ জীবন সাঙ্গ করেছেন সেই কবে। উনি অবিবাহিতদের দলে খেললে লোকজন ধরে নিবে ভীমরতি হয়েছে। তাছাড়া উনার ফুটবল খেলার বয়সও নাই। আর সবাই যদি খেলে তাহলে চাঁদা দিবে কে পাড়ার ক্লাবে? ইস আব্বাজান যে কেন বিবাহ করলো! তার জন্যই আজ আমার এই বিপদ। অসহায়ের মতো এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলাম। কেউ কি নাই এই বিপদ থেকে আমাকে উদ্ধার করতে পারে। একটু দূরে বিবাহিতদের দলে হিলটন ভাইকে বত্রিশটা দাঁত প্লাস একটা আক্কেল দাঁত ফ্রী বের করে কেলাতে দেখে পিত্তি জ্বলে গেল। মানুষ এতো বড় বেঈমান হতে পারে কে জানতো। এইতো গতমাসে উনি বিয়ে করলেন। আমরা বেশ নাচানাচি, হৈচৈ আর খনাপিনা করলাম। আর এক মাস ঘুরতে না ঘুরতেই উনি আমাদেরকে বেমালুম ভুলে গিয়ে বিবাহিতদের দলে ভিড়েছেন। সাধে কি মহাকবি বলেছেন, "দোস্ত দোস্ত না রাহা ...।"

-নে এতো ভাবাভাবির কাম নাই। তুই এক্ষুনি মাঠে নামবি নইলে ভবের মাঠ থেকে তোকে জন্মের মতো লাল কার্ড দেখাইয়া বাইর কইরা দিমু।

অতএব মাঠে নামলাম মানে নামতেই হল আর কি। যদিও নামতে চাইনি। অধঃপতন আমার মোটেও পছন্দ না। কিন্তু বিধি আজ কমুনিষ্ট, মান বাম তাই নামা ছাড়া আর কোন গতি ছিল না। হিলটন ভাই চোখ লাল লাল করে হুমকি দিলেন যে মিড ফিল্ডের ওপাশে গেলে আমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবেন। আমার ঠ্যাং মাত্র দুইটা আর এর কোনটাই আমি হারাতে চাই না তাই ডিফেন্সেই থেকে গেলাম। হা ডিফেন্স! বিবাহিতদের গোদা গোদা পা দেখে নিজেকে বড়ই ডিফেন্সলেস মনে হচ্ছে। গোল পোস্টের ডিফেন্স কেমনে করবো আমি এইটা ভাবতে ভাবতে ভাবতে কাল ঘাম ছুটে গেল।

বল যেখানে আছে তার থেকে একশো হাত দূরে থাকার চেষ্টা করতে লাগলাম। আমার ভিতর ম্যাগনেট আছে কিনা আল্লা মালুম। মাঠের যেখানে যাই বলও সেখানে গিয়ে উপস্থীত হয় তার সাথে সাথে এক দঙ্গল খেলোয়াড়। ইয়া মাবুদ এ কোন বিপদে ফেললে। আজ কি আস্ত অবস্থায় ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যেতে পারবো না? ততক্ষনে মাঠে উপস্থীত দর্শক আর খেলোয়াড়েরা আমার ইনটেনসন বুঝে ফেলেছে, সূতরাং আমাকে টেনসনে ফেলার জন্য সবাই উঠে পড়ে লাগলো। লক্ষ্যবস্তু গোল পোস্ট থেকে আমাতে স্থানান্তরিত হয়ে গেল। যার পায়েই বল সেই যায় তেড়ে ফুড়ে আমার দিকে ধেয়ে আসে কাল বৈশাখী ঝড়ের মতো আর আমি বীরের মতো পলায়ানপর থাকি। কিন্তু এইভাবে আর কতোক্ষন? খেলা শেষ হবার হাফ মিনিট আগে বল আমার পায়ে সেলাম ঠুকে সেঁটে থাকলো। ততক্ষনেও কেউ গোল করতে পারেনি নি। পারবে কি সবাই তো আমার সাথে খেলছে। হিলটন ভাই বলে উঠলেন,

-ওরে হাতের লক্ষি পায়ে ঠেলিস না। বলটা হাতে তুইলা নে।

তক্ষুনি শুভ ভাই সাবধান করে দিল,

-খবরদার এইবার যদি হ্যান্ডবল করিস তাইলে পরেরবার হ্যান্ডবল করার জন্য কোন হ্যান্ডই থাকবে না তোর বডিতে।

এদিকে আমি বল পায়ে পেয়ে, উত্তেজিত, উদ্বেলিত, উৎকণ্ঠিত এক কথায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রইলাম কয়েক সেকেন্ড। তারপরেই কর্তব্য নির্ধারন করে ফেললাম, বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী। বল পায়ে নিয়ে প্রান পণে ছুটছি। কোথায় ছুটছি জানি না। শুধু জানি ছুটছি। এই ছুটো ছুটির মাঝেই গোল পোস্টটা দেখতে পেলাম। আমার পায়ে যেন রোনালদিনহো এসে ভর করলো। দূর্দান্ত এক রেইনবো সট। গোওওওওওওওওল .........

তারপর?

আমি ঘরের ভিতর লুকিয়ে লুকিয়ে ব্লগাচ্ছি। শুভভাই লাঠি হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, আমাকে কাছাকাছি পেলে ওটার সাহায্যে পৃষ্ঠপোষকতা করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। আর বিবাহিতরা আমার নামে স্লোগান দিয়ে বিজয় মিছিল করছে। ভুলে সেম সাইড হয়ে গেছে :((
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১১:০৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×