somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীল অভ্র
কোনো কিছুর সাথেই খাপ খাওয়াতে না পারা একজন। খানিকটা বোহেমিয়ান তবে ঐতিহ্যর প্রতি ভীষণ অনুরাগী। নিজেকে প্রায়শই মনে হয় ভুল জায়গায় ভুল মানুষ। এলোমেলো আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক চিন্তা ভাবনা নিয়েই যাপিত জীবন।

নিম্ন মাঝারী জীবনের গল্প

৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নেয়া পাপ না, ভুলও না। ভুল বা অপরাধ হল জন্মের পর এই এতটা বছর পার করে দিলেও আমি এবং আমার বাবা নিম্ন মাঝারী শ্রেণী থেকে নিজেদের উপরে তুলতে পারিনি। পারিনি অর্থ বিত্ত জমা করতে, পারিনি যে করেই হোক- সাধু বা অসাধু পন্থা অবলম্বন করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে।
পারিনি যে তাই শাস্তি বা দূর্ভোগে আমাদের নিয়মিতই পড়তে হয়। সে আমরা যতই মানিয়ে চলার চেষ্টা করি না কেনো।
এই যেমন এবার সরকার বেতন বৃদ্ধি করেছে, সেই পে-স্কেল এখনো বেতনের সাথে জুড়ে দেয়া হয়নি ঠিকমত। কিন্তু বেতন বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে আবারো দাম বাড়ানো হলো গ্যাস, বিদ্যুতের।
নিম্ন মাঝারী শ্রেণীতে থাকার জ্বালা জানে না আর কেউ। যারা থাকে একমাত্র তারাই জানে। সে জানাটা কাউকে বলাও যায় না, যাবে না।
এই যে মূল্য বৃদ্ধি হলো। এখন লিটারে বা ঘনফুটে ৫ টাকা মূল্য বৃদ্ধি হলো, কিন্তু, বাস্তবে যেটা হবে সুবিদ বাজার থেকে বন্দর যেতে আগে ১০ টাকা লাগতো সিএনজি অটো রিক্সায়। এখন সেটা ১৫ টাকা হয়ে যাবে, এই যে বাড়তি ৫ টাকা, হয়ত অনেক মানুষই বলবে ৫ টাকা কি আর টাকা হলো, হ্যাঁ, জনাব হলো না। কিন্তু আমরা যারা নিম্ন মাঝারী শ্রেণীতে থাকি, তারা ২টাকা হিসেব করে চলতে হয়, ৫ টাকার ভাড়ার জায়গাটুকু হেঁটে গিয়ে আমরা চিন্তা করি এভাবে ৪-৫ বার গেলে নাস্তার পাউরুটি বা এক প্যাকেট বিস্কিট কেনা যাবে।
নিম্ন মাঝারী হলে আরো অনেক সমস্যা আছে। সামাজিকতা রক্ষা করাও যায় না। যাওয়া খুব দরকার, তবু আত্মিয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধবের অনেক দাওয়াত বা আমন্ত্রণ বাদ দিতে হয়। গেলে হাতে করে কিছু একটা নিয়ে যেতে হবে শুধু সেটা না, গেলে পকেট খরচের যে হিসেবের টাকা আছে সেটাতে টান পড়বে, তাই। একদিকে গেলে অন্যদিকে মানিয়ে নিতে হয়।
নিম্ন মাঝারী শ্রেণীর আরেকটা অসামাজিক আচরণ হলো, মেহমান বা অতিথি বাড়িতে আসলে খুব বেশি খুশি না হওয়া। মাসের শুরুতে হলে তো কোনো রকমে মানিয়ে নেয়া যায়, কিন্তু মাসের মাঝখানে বা শেষের দিকে হলে মাথার ওপর বাজ পড়ে যেনো।
কারণ, অতিথি আসলে চা-নাশতা খাওয়াতেই হবে, ভাত খাওয়ানোর জন্যেও অনুরোধ করতে হবে। এখন, এই সামাজিকতা বা ভদ্রতা রক্ষা করতে গিয়ে অনেককেই গলির মোড়ের দোকান থেকে হিসেবের অতিরিক্ত বাকি করতে হয়, মাস শেষে যা পরিশোধ করতে গিয়ে নাকের জল আর চোখের জল এক হয়ে যায়।
এই কয়েক বছর আগেও এইসব সমস্যা প্রকট ছিলো না। এখন সেটা ধীরে ধীরে মহামারী আকার ধারণ করছে। আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে বিষম ব্যবধান তার মূল কারণ। যে হারে কিছুদিন পরপর দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য বেঁচে থাকা ক্রমেই অসম্ভব হয়ে উঠছে।
আমার আব্বা হয়ত এখন সুবিদ বাজার থেকে আম্বরখানা রিকশা বা অটো নিয়ে যেতে হলে ১০ বার চিন্তা করবেন। কারণ তাতে যে খরচ বৃদ্ধি পাবে তার কারণে হয়ত আমাদের কে সকাল অথবা সন্ধ্যার নাস্তার মধ্যে একটাকে বাদ দিতে হবে।
পেঁয়াজ বা ডিমের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে কিছুদিন পর অটো ডায়েটিং চালু হয়ে যাবে আমাদের মত যতগুলো পরিবার আছে তার সবগুলোতেই। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ঘোষণা দিয়ে হয় না। একদিন হঠাৎ ভূমিকম্পের মত দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। মাসের হিসেব করা খাতায় হাজার আঁকিবুঁকি করেও যা আর মেলানো সম্ভব হয় না। নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো একটা তাই তালিকা থেকে বাদ পড়ে।
নিম্ন মধ্যবিত্ত হলে এরকম অজস্র সমস্যার পাহাড় ডিঙিয়ে জীবন ধারণ করতে হয়। একবার ইস্ত্রি দেয়া জামা যেমন কম করে হলেও ৩-৪ বার পরতে হয়, সতর্ক থাকতে হয় যেনো কুঁচকে না যায়, বিশ্রীভাবে ভাঁজ না পড়ে যায়। নিম্ন মধ্যবিত্তের পুরো জীবনের থিম এটাই। সবখানে, সর্বাবস্থায় এমনভাবে চলতে হবে যাতে এই কূল ওই কূল তো রক্ষা হতেই হবে সাথে নিজের যে আত্মসম্মানবোধ আছে তাতেও কোনো আঁচড় পড়তে দেয়া যাবে না।
এরকম অভ্যাস করতে করতে একসময় দেখা যায় পর্দায় অভিনেতাদের চেয়ে অজস্র গুণ দক্ষভাবে নিজের জীবনকে সকলের সামনে অবিরত উপস্থাপন করে যেতে হয়। ক্লান্তি বা আত্মশ্লাঘা আসলে তা-ও স্মিত হাসির আড়ালে সুকৌশলে ঢেকে রাখতে হয়।
এই জীবন প্রায় সময়ই আর নিজের জীবন থাকে না, যাপিত জীবনটা অন্য কারো হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে। অন্যদিকে, সব আড়ালে রেখে যে মানুষটা সর্বদা সুখের অভিনয় করে যাচ্ছে তার কষ্ট বা অনুভূতি উপলব্ধি করার আগ্রহ কারো জাগে না। কেউ জানতে চায় না বুকের গভীরে কত বেদনা কবর দিয়ে তার ওপর মানুষটা পুষ্প শোভিত করে রেখেছে।
এ জীবন তাই নিজের হয়েও নিজের নয়। এ জীবনের আদ্যপান্ত সব পাওয়ার অকৃত্রিম অভিনয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×