somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীল অভ্র
কোনো কিছুর সাথেই খাপ খাওয়াতে না পারা একজন। খানিকটা বোহেমিয়ান তবে ঐতিহ্যর প্রতি ভীষণ অনুরাগী। নিজেকে প্রায়শই মনে হয় ভুল জায়গায় ভুল মানুষ। এলোমেলো আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক চিন্তা ভাবনা নিয়েই যাপিত জীবন।

জীবনের নৌকায় ভেসে থাকাদের নিয়ে কিছু কথা

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলুন একটা মন খারাপের গল্প শোনাই আপনাদের।
আজ তো ছুটির দিন ছিলো, সবাই বেশ মজায় মজায় দিন কাটিয়েছেন,
সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
কর্মব্যস্ত একটা সপ্তাহ পার করে এরকম একটা ছুটির দিনে আরাম-আয়েশ
করে, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ঘুরে আনন্দ উদযাপন করা দোষের কিছু না।
ওকে, শুরুটা তো বলে দিলাম, পড়ে হয়ত খুব একটা খারাপ লাগেনি,
তবে পরের লাইনগুলোতে হয়ত এত মিষ্টি বা মজার কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে না,
যদি মনে করেন পড়ে কিছু অনুভব করবেন তাহলে চলুন, আর না হলে স্কিপ করে যেতে পারেন, ধন্যবাদ।

গত কিছুদিন থেকে পুরো দেশ জুড়ে বেশ বৃষ্টিপাত হয়েছে, এখনো কিছু কিছু এলাকায় হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদিগুলোর পানি বিপদসীমার উপরে বয়ে গেছে, প্লাবিত হয়েছে ব্যাপক এলাকা।
গ্রামাঞ্চলের কথা এখানে আমি খুব একটা লিখবো না, গ্রামাঞ্চলের মানুষের সাথে আমাদের শহরাঞ্চলে থাকা মানুষের জীবন যাপনের ধারার সাথে ব্যাপক তফাত। আর আমরা আমাদের নিজেদেরকে গ্রামবাসী থেকে বেশ উন্নত আর আধুনিক মনে করি।
আমাদের শহরে অনেক মানুষ আসেন গ্রাম থেকে, চোখে থাকে রঙ্গিন স্বপ্ন,
একটু বেঁচে থাকার আশায়, একটু ভালো কিছুর আশায়।
এসে ঠাঁই নেন ফুটপাথ, বস্তির ঝুপড়ি, বাস স্ট্যান্ড, কিংবা রেলওয়ের প্লাটফর্মে। রাতে বার হয়ে এসব জায়গায় চোখ বুলোলেই দেখা মিলবে মাথার নিচে কাপড়ের পুঁটলি, ব্যাগ, চটের বস্তা, প্লাস্টিকের বাসন, বসার পিঁড়ি, ইট, কাঠের টুকরো ইত্যাদি দিয়ে ঘুমোচ্ছেন। ঘুম আবার যে সে ঘুম নয়, গভীর ঘুম, চোখের পাতা দু’টো একদম ঘুমে বুঁদ হয়ে আছে। কী পরম শান্তিময় ঘুম ওদের!
একসময় ঘুম ভাঙে, সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ রিকশা ঠেলেন, কেউ তরকারি কুড়িয়ে বিক্রি করেন, কেউ পণ্যের বোঝা কাঁধে তোলেন, কেউ চিপস, চকোলেট, চানাচুর ইত্যাদি বিক্রি করেন।
এদের মধ্যে শারীরিকভাবে অক্ষম অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
সারাদিন ঘুরে ঘুরে নিজের নিজের কর্ম সেরে রাতে আবার সেই জায়গায় ফেরেন যেখানে ঘুমোবেন। আবার ঘুমিয়ে পড়েন।
কেউ কেউ আছেন রাতে ঘুমোন না, তারা বাড়তি পারিশ্রমিকের আশায় রাতে কাজ করেন, কেউ রিকশা চালান, কেউ পণ্যবাহী যানবাহনের পণ্য খালাস করেন, কেউবা করেন পাহারাদারের কাজ।
এভাবেই নিজের জীবন চাকার ঘূর্ণন সচল রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান।
এদের জীবনে আনন্দ বিনোদন নেই বললেই চলে, এদের জীবনে কোনো উৎসব নেই, পার্বন নেই, কর্মব্যস্ত সপ্তাহ বা মাস শেষে আয়েশে দিন কাটানোর ছুটি নেই। এদের বছর শেষে কোনো বোনাস নেই, পদোন্নতি নেই, কিংবা নেই অবসর গ্রহনের সুযোগ। এদের মৃত্যু অব্দি শ্রম দিয়ে যেতেই হয়। এদের একদিন কাজ বন্ধ হলে জুটবে না খাবার, হয়ত ঘুমোবার জায়গাটুকুও মিলবে না।
এদের জীবনের এই চক্র ভাঙবার বা রূপান্তরের কোনো পদ্ধতি নেই, বা থাকলেও আজ অব্দি সেটা প্রয়োগ করা হয়নি। ফলে ওদের জীবন নিরন্তর এক তারে বাঁধা।
অনেক ধৈর্য ধরে এতক্ষন পড়েছেন, জানি পড়ার পর কিছু ভাবনা মাথায় এসে জড়ো হয়েছে, কিছু জিজ্ঞাসা, কিছু পরিকল্পনা কিংবা স্বপ্ন জমেছে হয়ত মস্তিষ্কের কুঠুরিতে।
এখন, আপনার ভাবনাগুলোকে একটু ডাইভার্ট করে দেই,
দেখুন তো কেমন লাগে-
পুরো দেশের কথা বলবো না। শুধু ঢাকার কথা বলবো।
কারণ ঢাকায় এরকম বস্তি এবং ফুটপাথে বাস করা মানুষের সংখ্যা অজস্র।
এই যে অবিরাম বৃষ্টি হলো, পথ ঘাট সব ডুবে গেলো,
আমরা কেউ সেলফি তুলেছি, কেউ বা গ্রুপ ছবি তুলেছি,
কেউ বা ব্যঙ্গ করেছি যে রিকশা এবং নৌকা একই রাস্তায় চলছে,
ফেইসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, যানবাহন ইত্যাদির ছবি প্রচার করছি।
প্রশাসন এবং সরকার ব্যবস্থা ইত্যাদির মুন্ডুপাত করছি।
কেউ আমরা ভেবে দেখেছি, এই থই থই করা পানিতে ওইসব মানুষের কী অবস্থা হয়েছে, ওরা কেউ কাজ পেয়েছে কি না, কাজ শেষে ফিরে প্রতিদিনের যে ঘুমোনোর জায়গা সেখানে পানি দেখে ওরা কোথায় ঘুমোলো, কিংবা, এই যে পুরোটা দিন বৃষ্টি হলো, এতগুলো মানুষ কোথায় আশ্রয় নিলো।
জানি, অনেকের কাছেই উত্তরগুলো অজানা। এমনকি আমাদের মেইনস্ট্রিম অনেক তারকা রিপোর্টারও এসব বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ বোধ করেন না।
কারণ এসব নিউজ মানুষ খুব একটা ‘খায়’ না।
কিন্তু, ওইসব বাস্তুহীন মানুষগুলো খেয়েছে কি খায়নি তা নিয়ে কারোরই তেমন মাথা ব্যথা নাই।
না থাকারই কথা।
যাদের জীবনে কোনো আনন্দ উৎসব নাই, যাদের পকেটে আনন্দ কেনার মত টাকা নাই, তাদের কাছে আমরা কোন দুঃখে আনন্দ বিক্রি করতে যাবো।
শত হলেও সমাজে আমাদের একটা স্ট্যাটাস আছে। যার তার সাথে তো আমরা মিশতে পারি না।
হুম, আর কিছু বলার নাই।
অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×