somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীল অভ্র
কোনো কিছুর সাথেই খাপ খাওয়াতে না পারা একজন। খানিকটা বোহেমিয়ান তবে ঐতিহ্যর প্রতি ভীষণ অনুরাগী। নিজেকে প্রায়শই মনে হয় ভুল জায়গায় ভুল মানুষ। এলোমেলো আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক চিন্তা ভাবনা নিয়েই যাপিত জীবন।

ধর্ষণ এবং গণ ধর্ষণ, আমাদের সামাজিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুনিয়ার প্রায় সকল বিষয়েই আমার জ্ঞান খুব সামান্য বা নাই বললেই চলে।
তবু এই লিখাটা লিখছি, সকলের কাছ থেকে বিষয়টা সম্বন্ধে আরো ভালো করে জানার জন্য।
যাই হোক, সমাচার খানা এই,
কাল আমি একটি রিপোর্ট দেখলাম ইউটিউবে।
একজন মহিলা বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ওপর প্রতিবেদন করতে এসেছেন।
তিনি এসে নারী নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীর সাথে কথা বললেন, কথা বললেন, যারা নারী নির্যাতন করেছে তাদের সাথেও।
পুলিশের সাথেও এই বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করলেন।
আমি ইসলাম ধর্মের অনুসারী, অন্য ধর্মে নারীদের বিষয়ে কী বলা আছে বা তাদের প্রতি কী রকম আচরণ করার নির্দেশ দেয়া আছে আমার জানা নাই। ইসলামে নারীর প্রতি আচরণ কী হবে সে সম্বন্ধেও যে পুরোটা জানি, তা না।
প্রতিবেদনে দেখলাম মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো গ্যাং রেইপ বা গণ ধর্ষণ।
আক্রান্ত নারীর জবানেই শোনা গেলো তিনি কীভাবে আক্রান্ত হয়েছেন, অপরাধীদের মধ্যে কেউ ধরা পড়েছে কি না। বর্তমানে তার শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা ইত্যাদি।
যারা এসব অপরাধ করেছে তাদের জবানিতেও শোনা গেলো তারা কেনো এই অপরাধ করছে। করার কারণ কী।
এই অব্দি সব একরকম প্রত্যাশিত ছিলো।
একজন আক্রান্ত মানুষ যেমন তীব্র মানসিক এবং শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগবেন তেমনই একজন অপরাধী সে যত বড়ো অপরাধী হোক না কেনো, তার অপরাধের পক্ষে যুক্তি দেখাবে।
তবে এই দৃশ্যে উক্ত অপরাধীরা বেশ অনুতপ্ত ছিলো, যা তাদের মুখে তারা প্রকাশ করেছে।
এবার আসা যাক আলোচনায়,
ওই মহিলা রিপোর্টার যখন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বললেন, তিনি প্রথমে জানালেন যে তার এলাকায় গ্যাং রেইপ তেমন একটা হয় না, বছরে এক বা দুইটা হয়, এবং, সাধারণ রেপ কেইস গুলোর জন্য মেয়েরাই দায়ী, অভিযুক্তের সাথে তাদের আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক থাকে, বা অবৈধ মেলামেশা থাকে, পরবর্তীতে সমাজের চোখে সেসব ধরা পড়লে ভিক্টিম কেইস করতে আসে, প্রকৃতপক্ষে এগুলো রেইপ বা ধর্ষণ না, মেয়ের নিজের ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে।
তিনি, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলা, নিজেকে পর্দার ভেতর না রাখা, অশ্লীল বা বেপরোয়া হয়ে চলা ইত্যাদি কারণে নারীরা ধর্ষণের শিকার হয় বলেও মত প্রকাশ করেন।
সেই রিপোর্টার সুনামগঞ্জের এক প্রত্যন্ত গ্রামে প্রতিবেদন করতে গেলে সেখানে আক্রান্ত নারী, অপরাধী, এবং বিভিন্ন সমাজপতিদের তার আলাপ হয়।
তিনি, ইসলামে এর বিধি বিধান কী জানতে মসজিদের ইমামের সাথে কথা বলতে চান। উক্ত এলাকার এক যুবককে তিনি অনুরোধ করেন তাকে মসজিদে নিয়ে যেতে, সেই যুবক জানায় যে মহিলাদের মসজিদে প্রবেশের অনুমতি নাই। উনি কীভাবে কথা বলবেন জিগ্যেস করলে যুবক তাকে মসজিদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন।
নামাজ শেষ করে ইমাম মসজিদ থেকে বার হয়ে আসেন, মহিলাকে দেখে তাকে দূরে সরে যেতে বলেন, রিপোর্টার ইমাম সাহেব কে প্রশ্ন করেন,
ধর্ষণের ব্যাপারে ইসলামের মত কী,
ইমাম জবাব দেন, যারা পর্দা পুশিদা করে না, ঘরের চার দেয়ালের ভেতর থাকে না, ঘরের বাইরে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করে, তাদের ওপর পুরুষের কুদৃষ্টি পড়ে, তারা ধর্ষণের শিকার হয়, যারা পর্দা করে না, তারা জাহান্নামে যাবে।
পর্দা কী, এর উত্তরে বলেন সমস্ত শরীর আবৃত করে রাখা এবং চার দেয়ালের বাইরে না যাওয়া।
ইমাম এবং তার সাথে থাকা কিছু মুরুব্বি মত প্রকাশ করেন মহিলারা পর্দা না করার কারণেই ধর্ষণের শিকার হয়, ঘরের বাইরে বেপরোয়া বা উদ্ধত চলাফেরার কারণেই পুরুষেরা তাদের ধর্ষণের সুযোগ পায়।
এরপর সেই রিপোর্টার পুনরায় পুলিশ কর্মকর্তার কাছে গেলে তিনি জানান তার এলাকায় গত মাসে কোনো গ্যাং রেইপ বা গণ ধর্ষণ হয়নি, কোনো আসামী ধরা পড়েছে কি না এর উত্তরে তিনি না বলেন, অনেক আসামী প্রকাশ্য দিবালোকে ঘোরাফেরা করছে, এলাকায় অবস্থান করছে, এসব বললে ওই রিপোর্টারকে এসব বানানো, সত্য না বলে মত দেন, নিজের চোখে দেখে এসেছি, বললেও রিপোর্টারের কথা কানে তোলেননি পুলিশ কর্মকর্তা। ধর্ষণের কেইসের পরিসংখ্যান আছে কি না জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা সদুত্তর দিতে পারেননি।
ধর্ষণের কারণ কী জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পর্দা না করা, ইসলাম না মানা, বেপরোয়াভাবে চলা, রাত দুপুরে বাড়ির বাইরে যাওয়া ইত্যাদি। এবং, ধর্ষণ মূলত নারীর আচরণগত সমস্যার কারণেই সংগঠিত হয় বলে মত দেন। তাদের অস্বাভাবিক কর্মকান্ডেই পুরুষ তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
খেয়াল করেছেন, সেই মসজিদের ইমাম এবং পুলিশ- দু-জনের কথায় কিন্তু সুর একই।
যাই হোক, এবার বলি কিছু কথা।
পুলিশ রাষ্ট্রের সেবায় নিয়োজিত কর্মচারী বা কর্মকর্তা। তাদের স্বল্প জনবল এবং সম্পদে যেমন সব অপরাধ নির্মূল করা বা অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না, উপরন্তু, দলীয় নেতা, এমপি, মন্ত্রী, মাতুব্বর, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি, প্রশাসনিক বা সরকারী উচ্চ পদের কর্মকর্তাদের চাপে তাদের আইনানুগ ব্যবস্থা নিতেও অনেক সমস্যা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচারকাজ পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়ে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি বা পরিবার ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।
এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব অবশ্যই- সকল নাগরিকের জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
আমার কথা অন্যখানে, যখন সাধারণ মানুষ এভাবে এক পক্ষকে আগে থেকেই অপরাধীর ‘ট্যাগ’ লাগিয়ে রাখছে, সেখানে পুলিশ বা রাষ্ট্র কীভাবে সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারবে, কারণ, একটি সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে স্বাক্ষী দরকার, তদন্তকাজে সহযোগীতা দরকার। অথচ সেই সহযোগীতা কীভাবে প্রত্যাশা করা যায় যখন একটি সমাজ কাউকে আগে থেকেই অপরাধী ট্যাগ করে রাখে।
আরেকটি খুব স্পর্শকাতর বিষয় হলো ধর্ম।
ইসলাম ধর্মের কোন জায়গায় বলা আছে যে পর্দা না করলে বা চার দেয়ালের বাইরে গেলেই কোনো নারীকে ধর্ষণ করা যাবে, তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া যাবে, বা তাকে ধর্ষণ করলে সম্পূর্ণ দায় নারীর ওপর বর্তাবে??
ইসলামে কি শুধুই নারীর পর্দার বিধান আছে, পুরুষের পর্দার কোনো বিধান নাই?
একজন নারী সে যত অশ্লীল বা বেপরোয়াভাবে চলুক, একজন পুরুষের কাজ কি তাকে টিজ করা? ধর্ষণ করা? তার শ্লীলতাহানি করা?
একজন নারী বেপর্দা বা অশ্লীলভাবে চলার জন্য তাকে ধর্ষণ করা জায়েজ? এর জন্য কি পুরুষের কোনো পাপ হবে না?
এই উত্তরগুলো আমি ইসলামের বিজ্ঞ সমাজের কাছ থেকে জানতে চাই।
আমি আজ অব্দি কোনো ইমাম বা আলীমের কাছ থেকে পুরুষের পর্দা নিয়ে বয়ান করতে শুনিনি, শুনিনি পুরুষের নারীর প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেকের সাথে আলাপ আলোচনা করেছি এইসব বিষয়ে।
আমাদের সমাজে অনেক ইমাম, বা ইসলামের শিক্ষা অর্জন করা আলীম আছেন যারা ইসলাম সম্পর্কে অস্পষ্ট এবং অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে রেখেছেন। অনেকে আছেন ধর্ম ব্যবসায়ী রাজনৈতিক দলের লেজুড় বৃত্তি করতে গিয়ে নিজের খেয়াল খুশি মত মতামত প্রকাশ করেন, যা ইসলাম পুরোপুরি সমর্থন করে না।
আমাদের সাধারণ মানুষের মাঝেও জানার এবং বোঝার আগ্রহ কম, ফলে, আমরাও সেই সব অস্পষ্ট, অসম্পূর্ণ, মনগড়া, এবং অসংগতিপুর্ণ তথ্য নিয়ে দিন যাপন করছি।
অপরদিকে, অন্যরা আমাদের ধর্ম এবং সমাজ ব্যবস্থা কে নিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রূপ করছে, আমাদের ধর্ম, সমাজ ইত্যাদি মান্ধাতা আমলের, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না ইত্যাদি বলে মত প্রকাশ করছে।
প্রশ্ন না করে, জানার রাস্তা খুঁজে বার না করলে অন্ধকার জগত থেকে আমাদের আলোর জগতে প্রবেশের পথ ধীরে ধীরে আরো সংকীর্ণ হয়ে পড়বে।
রিপোর্ট দেখতে নিচের লিঙ্ক ক্লিক করুন প্লিজ।
A Crime Unpunished: Bangladeshi Gang Rape
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×