somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীল অভ্র
কোনো কিছুর সাথেই খাপ খাওয়াতে না পারা একজন। খানিকটা বোহেমিয়ান তবে ঐতিহ্যর প্রতি ভীষণ অনুরাগী। নিজেকে প্রায়শই মনে হয় ভুল জায়গায় ভুল মানুষ। এলোমেলো আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক চিন্তা ভাবনা নিয়েই যাপিত জীবন।

আমাদের সমাজে নারী

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(বিষয়টি খুব স্পর্শকাতর, পাঠকের বিচক্ষণতা কাম্য)
আমাদের সমাজে সাধারণভাবে নারীদের মতকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়ার চল নেই। একেবারে যে দেয়া হয় না, তা না। তবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়েই ঘরের নারী সদস্যকে জিগ্যেস করার খুব প্রয়োজন মনে করা হয় না। এমনকি সেটা একজন নারীর ব্যক্তিগত কোনো বিষয় হলেও।
আমাদের দেশে এখনো বিয়ের ব্যাপারে পুরুষের সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা পাত্রী পছন্দ করা হোক বা পাত্রীর জন্যে পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রেই হোক। সর্বশেষ মত বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পুরুষ মহল থেকেই আসে। সেখানে নারীদের মতকে আমলে নেয়ার ইতিহাস বিরল।
এতকিছুর পর যখন একজন নারী বধূ হয়ে সম্পূর্ণ অচেনা অজানা একটি পরিবেশে নিজেকে আবিষ্কার করেন, খাপ খাইয়ে নেয়ার নিরন্তর চেষ্টায় হাবুডুবু খেতে থাকেন, সবার সাথে মানিয়ে নেয়ার অক্লান্ত চেষ্টা করেন, তার মাঝেও তাকে নিয়মিতই টিপ্পনি, বকা, খোঁটা, ঝাড়ি ইত্যাদি সহ্য করে যেতে হয়।
আর এক্ষেত্রে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা থাকেন আতসী কাঁচের তলায় খুঁত খুঁজে বার করার বিরামহীন চেষ্টায়। আর বাড়ির মহিলারা মুখ দিয়ে নানান ধরণের তীর্যক মন্তব্য করতে থাকেন। এভাবেই সাধারণত আমাদের দেশের নতুন বউকে প্রায় সকল সমাজে এবং শ্রেণী, পেশা নির্বিশেষে অভ্যর্থনা জানানো হয়। ব্যতিক্রম যে নেই, তা মোটেও নয়, এখন অনেকেই এসব ব্যাপারে সচেতন হয়েছেন, হবার চেষ্টা করছেন। যা প্রশংসার দাবিদার।
এসকল বিষয়ের মধ্যে আমার ব্যক্তিগত নজরে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ধরা পড়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের দেশে প্রবাসী কোনো লোকের স্ত্রী, বা সদ্য বিবাহিত বিধবা- এদের প্রতি প্রায় সকল পরিবারেই বেশ রূঢ় আচরণ করা হয়। প্রবাসীর স্ত্রীর ক্ষেত্রে যেটা হয়, স্বামী দূরে থাকার কারণে পরিবারের সকলে বধূটিকে নিজের ইচ্ছেমত খাটিয়ে মারেন, একটু ঊনিশ-বিশ হলেই চলে মানসিক, শারীরিক নির্যাতন। নির্যাতিত স্ত্রীটি স্বামীকে সেসব বলার সুযোগ পায় না বললেই চলে। আবার অনেক পরিবার অনৈতিক বা অমানুষিক শ্রমেও সেই অসহায় স্ত্রীকে বাধ্য করেন। ফলে বিবাহিত জীবন তার কাছে হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়। একসময় কেউ কেউ বাধ্য হয়ে পাল্টা আঘাত হানেন, কেউ হয়ত পথ হারিয়ে নিজেই বেছে নেনে অনৈতিক পথ। কেউ কৌশলে স্বামীর সংসার থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়ে নিজের মত করে জীবন যাপন করেন। দোষ সব তখন সেই নারীর ওপরেই এসে পড়ে, কেউ দেখতে চায় না পেছনের কারণগুলো কী।
এর চাইতে মারাত্মক অবস্থায় পতিত হন বিয়ের পর সদ্য বিধবা হওয়া নারী। একে তো স্বামী হারানোর শোক। তার ওপর সামাজিক বিভিন্ন অপবাদ, গঞ্জনা। শশুরবাড়ী থেকে বিরূপ আচরণ পাওয়া নারী যখন শেষ অবলম্বন হিসেবে নিজের বাপের বাড়ির দিকে চোখ ফেরান, সেখানেও অনেকেই দেখেন ভাই-ভাবিদের রাঙা চোখ। ফলে তার মনে দুনিয়া ত্যাগের জন্যে প্রস্তুতি নেয়া বা আত্মহত্যা করাই হয়ে ওঠে এই বিষাদময় জীবন থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ। অনেকে তা-ই করেন। অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী হয়ত এক-দুই জন সন্তান রেখে মৃত্যু বরণ করেছেন, সন্তানদের নিয়ে তখন বিধবা নারীর দূর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। অনেক পরিবার সন্তানদের দেখভাল করলেও স্বামী হারানো বধূর প্রতি সুনজর দেন না।
কেউ কেউ নিজের বোন বা কন্যাকে নিজের কাছেই নিয়ে আসেন। বাপ-ভাই সকলে মিলে তার ভরণ-পোষণ করেন। সন্তান থাকলে তার দায়িত্বও নেন। কিন্তু, তারাও একটা বিষয় গুরুত্ব দিয়ে খেয়াল করেন না। যে নারী হাতে রাঙা মেহেদি দিয়ে আজীবনের জন্যে স্বামীর ঘরে পা দিয়েছিলো, চোখে ছিলো অজস্র রঙ্গিন স্বপ্ন, স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় তার মনের যে অবস্থা হয়, তার জন্যে উপশম কী হতে পারে। যে নারী বিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে বৈধব্য প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি বাকি জীবন কীভাবে নিঃসঙ্গ কাটিয়ে দেবেন। তার কি ইচ্ছে করে না কারো সাথে নিজের একান্ত সময়গুলো কাটাতে, নিজের আবেগ, অনুভূতিগুলো ভাগ করে নিতে। তারও তো মনের চাহিদা আছে, যৌবনের তৃপ্তি লাভের আকাঙ্ক্ষা আছে। প্রায় সময়ই এই বিষয়গুলো আমাদের পরিবার বা সমাজ এড়িয়ে যায়। কখনো সামাজিক কাঠামোর অসম আচরণের কারণে, কখনো নিজেদের সঙ্কোচের কারণে। অথচ অল্প বয়েসে বিধবা হওয়া নারীটির কামনা, বাসনা, সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা, ভাবাবেগ, মৌল-মানবিক চাহিদা কোনো কিছুরই মৃত্যু ঘটেনি। আমাদের সমাজ স্বামী হারানো নারীকে সমাজের পরিত্যক্ত, উচ্ছিষ্টের মত মনে করে। অথচ, স্বামী হারানোয় না তার কোনো হাত আছে, বা, কোনো অভিপ্রায়। স্বামী বিয়োগের সাথে সাথে বিধবা স্ত্রীটিকেও আমরা জীবন্ত লাশে পরিণর করে ফেলি।
অথচ, এমন হবার কথা ছিলো না। একজন বিপত্নীক ষাট-সত্তর বয়েসে বা এর চেয়ে বেশি বয়েসে বিয়ে করতে চাইলে সমাজ চোখ বাঁকা করে না, বাধা দেয় না। আর পুরুষ যদি চল্লিস-পয়তাল্লিশ হয় তাহলে কথা-ই নাই। বিয়ে দিতে পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনদেরও উৎসাহের কমতি থাকে না, সেই বিয়েতে হৈ হুল্লোড় কম হয় না। অথচ বাইশ-তেইশের বিধবা নারীর বিয়ের কথা শুনলেই অনেকে মুখ বাঁকা করেন, টিপ্পনি কাটেন। অনেক পরিবার নিজের কন্যা সন্তানের ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক, মানসিক জীবন যাপনের অভিপ্রায়ে পুনরায় বিয়ের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু, পুরুষটির মত অত হাঙ্গামা করে নয়, বরং চেষ্টা করেন কিছুটা আড়ালে, ঘরোয়াভাবে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করতে। কারণ সমাজের চোখে হেয় হতে হবে। বিপত্নীক পাত্রও কুমারি মেয়ে খোঁজেন, অল্প বয়েস, ছিমছাম গড়ন ইত্যাদির দিকে খুব নজর থাকে। কিন্তু, বিধবা নারীর জন্যে কোনো রকম একটা পাত্র পেলেই হলো, প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় পাত্রের বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে, বিপত্নীক, আগের স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়েছে ইত্যাদি। এরকম পাত্রই বিধবাদের জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত বলে ভাবা হয়।
আমাদের সামাজিক কাঠামোটাই এমন যে এখানে সব একটি সমাজের নিজস্ব নিক্তির মানের নিরিখে মাপা হয়। সেখানে উদারতা, অবাধ স্বাধীনতা, বর্ণ, লিঙ্গ, সামাজিক অবস্থান, অর্থ, ক্ষমতা ইত্যাদি প্রধান বৈষম্য সৃষ্টিকারী উপাদান। চাইলেই একজন ব্যক্তি তার নিজস্ব মতের অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। সেটা যদি যুক্তিগ্রাহ্য, আইনানুগ হয় তার পরেও।
এসব কারণেই বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন রকম সামাজিক বিশৃংখলা, বিচ্যুত আচরণ, অপরাধ প্রবণতা, সহিংসতা, অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি দেখা দেয়। নেমে আসে চরম দূর্ভোগ।
ব্যক্তি স্বাধীনতার পথ অবারিত করে দিলেই এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থা মানুষকে পেছনের দিকেই নিয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×