somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীল অভ্র
কোনো কিছুর সাথেই খাপ খাওয়াতে না পারা একজন। খানিকটা বোহেমিয়ান তবে ঐতিহ্যর প্রতি ভীষণ অনুরাগী। নিজেকে প্রায়শই মনে হয় ভুল জায়গায় ভুল মানুষ। এলোমেলো আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক চিন্তা ভাবনা নিয়েই যাপিত জীবন।

আমাদের তরুণ সমাজঃ ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রসঙ্গে

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের কীর্তিগুলো দেখে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না। সত্যি এদেশের এত স্বল্প সম্পদ আর সুযোগের মাঝেও আমাদের তরুণেরা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের লাল সবুজকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

এটা যদি গর্বের দিক হয়, তবে, এদেশে তরুণদের একটা অংশ যৌবন আর শক্তির প্রদর্শনী করে নিজের নাম খারাপ করার পাশাপাশি দেশের নামেও কালিমা লেপন করছে। পত্রিকার পাতা ওল্টালেই খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, লুটতরাজ, টেন্ডারবাজি, হল দখল, জমি দখল ইত্যাদি নানান ধরণের কার্যকলাপের খবর দেখা যায়। এসবে লিপ্ত তরুণের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। মাদকে ডুবে নিজের জীবন ধ্বংস করে দেয়া, মাদক চোরাচালান, বিক্রি, সরবরাহ ইত্যাদিতে যুক্ত থাকা যুব সম্প্রদায়ের অনেকে নিজের সাথে সাথে পরিবার আর স্বজনদের জন্যেও ডেকে এনেছে চরম দূর্ভোগ।

এই দেশে এখন এক শ্রেণীর যুবকদের মাঝে সিগারেট খাওয়া, মাদক গ্রহন, সিসা পার্টি ইত্যাদি সহ আরো বিভিন্ন ধরণের অসামাজিক এবং অনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত হওয়াটা ‘স্মার্ট’ হবার পূর্ব শর্ত হিসেবে কাজ করছে। এর ফলে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানসিক অবসাদ, আত্মহত্যা, পারিবারিক কলহ, আচরণগত বিচ্যুতি ইত্যাদি। পরিবারের সাথে সৃষ্টি হচ্ছে দূরত্ব, মা-বাবার সাথে মনোমালিন্য, এবং, অবশেষে বিপথে গিয়ে সমাজে নিজের এবং পরিবারের সম্মানহানি ঘটানো।

একটা সময় এদেশে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে তরুণেরা পছন্দ করতো বনভোজন করা, শিক্ষা ভ্রমণ, বিভিন্ন ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দান, আবৃত্তি, গান, নৃত্য, লেখালেখি ইত্যাদি। এখন যে এগুলো উঠে গেছে তা নয়। কিন্তু, বিশ্বের সকল তথ্য এবং বিনোদন উপাদানের অবাধ প্রবেশাধিকারের সুযোগে আমাদের একদল তরুণ নিজের দেশের সংস্কৃতি রেখে ভিনদেশি সংস্কৃতির দিকে অতি মাত্রায় ঝুঁকে পড়ছে। আগের প্রায় সব আচার অনুষ্ঠান এখন আছে ঠিকই তবে, সেগুলোর রূপ বদলে গেছে। এখন আর বাউল-জারি-সারি গান গাওয়া হয় না, হয় ডিজে পার্টি। লোক নৃত্য বা দেশীয় নৃত্যের চেয়ে মডার্ন ড্যান্সে আগ্রহ বেশি। আর বিভিন্ন দলবদ্ধ যাত্রা বা বনভোজনে ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে বা একাকী উপভোগ করার প্রবণতা বেশি। আধুনিক কালের স্মার্টফোনে চোখ-মুখ ডুবিয়ে এত ব্যস্ত যে মাথা তুলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে উপভোগের উপলব্ধি নেই তেমন।

এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন কনসার্ট, পার্টি, গেট টুগেদার নাম দিয়ে উচ্চস্বরে গান-বাজনা করা, আর মাটি কাঁপিয়ে চিৎকার, লাফালাফি। যা দেখে স্বাভাবিক কোনো মানুষের পক্ষে ঐসব লম্পঝম্প করা যুবকদের মানসিকভাবে সুস্থ্য বলে বিবেচনা করা বেশ কঠিন।

আজকাল তরুণ সমাজের একটা অংশ বিভিন্ন ছুতোয় গেট টুগেদার, ইনহাউস পার্টি ইত্যাদি আয়োজনের সুযোগ খুঁজে। কারণ, তাতে মাদক সহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ চর্চার করার ভালো সুযোগ পাওয়া যায়। আর এসবে আজকাল যে শুধু পুরুষ লিঙ্গের উপস্থিতি থাকে তা নয়, বরং, উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে স্ত্রী লিঙ্গের উপস্থিতির সংখ্যা। আর এর সাথে বাড়ছে নীরব কান্নায় হারিয়ে যাওয়া অনেক অনুভূতির। অনেক মেয়েই এরকম গেট টুগেদার বা ইনহাউস পার্টিতে এসে নিজের সম্ভ্রম হারাচ্ছে, কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে মাদকের ভয়াল জগতে। কেউ সম্ভ্রম হারিয়েই মুক্তি পায়নি, বরং, সেই সব একান্ত মুহুর্তের ভিডিও ক্লিপ দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হচ্ছে। সমাজে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। প্রয়োজন শেষে সেইসব ‘ভিক্টিমদের’ ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে আস্তাকুঁড়ের মাঝে। কেউ কেউ হয়ত নিজের পরিবারের কাছে ফিরতে পারছে, কিন্তু, বড়ো অংশটাই আর জীবনের রেলগাড়িতে চড়বার সুযোগ পাচ্ছে না।

কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে ফিরছিলাম ট্রেইনে করে। বছরের শেষ দিন ছিলো ওটা। আমার সাথে আমার খালাতো ভাই এবং তার পরিবার ছিলো। ওই কামরায় ছিলো আরো অনেক শিশু এবং বৃদ্ধ মানুষ। আমাদের পেছনের সিটেই ছিলো ৮-১০ জনের একদল তরুণ। দেখে সবার বয়েস আনুমানিক ১৮-২০ এর মত মনে হয়েছে। দলে ছেলে-মেয়ে মিলেমিশে ছিলো। তারা সিলেটে ঘুরতে আসছে। পুরোটা যাত্রাপথে ওদের কান্ডজ্ঞানহীন হৈ হল্লা, চিল্লাচিল্লি। নিজের সিট ছেড়ে উঠে লাফালাফি ইত্যাদি প্রায় সবারই বিরক্তির উদ্রেক করেছে। কিন্তু প্রায় ১০ ঘন্টার ভ্রমণে কেউই ওদের একটা মৃদু ধমক বা কিছুই বলেননি। একবার ট্রেইনের দায়িত্বশীল একজন অনুরোধ করে গিয়েছিলেন এমন কিছু না করতে যাতে কারো সমস্যা হয়। কিন্তু, ঐ তরুণ দলটা এসবের তোয়াক্কা করেনি, পুরোটা পথ একইরকম করে হৈ হুল্লোড় করে এসেছে।

গত অক্টোবরে আমার স্ত্রী কে নিয়ে চট্টগ্রাম যাবার পথেও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। সেবার তরুণদের সবাই ছিলো পুং লিঙ্গের। সকলেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। অথচ, যাত্রা পথে নূন্যতম সাধারণ জ্ঞান খাটানোর প্রয়োজন মনে করেনি তাদের কেউই। রাত ৯.৩০ মিনিটে যাত্রা করা ট্রেইনে পুরো রাত জুড়ে হৈ হল্লা করেই ওদের সময় কেটেছে। যা অন্যসব যাত্রীদের বিরক্ত করেছে।

আমাদের তরুণ প্রজন্ম নিয়ে আমরা গর্ব করি। আমি নিজেও একজন তরুণ। কিন্তু, আমাদের অনন্য সব অর্জনের পাশাপাশি কিছু কান্ডজ্ঞানহীন যুবক শ্রেণীর কর্মকান্ড আমাদের বিব্রত করে। দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার তো এইসব তরুণরাই। এদের মাঝে যদি স্থান-কাল-পাত্র বিচার করার ক্ষমতা না থাকে। অন্যের প্রতি সহমর্মিতা, সহিষ্ণুতা, শ্রদ্ধা প্রদর্শনের চর্চা না থাকে। তাহলে তো আশার তরী তীরে পৌঁছুবার আগেই কূল হারাবে।

আমাদের তরুণ সমাজের এসব প্রতিকূল পরিস্থিতি পার হয়ে এগিয়ে যাবার ক্ষমতায় আমার অগাধ বিশ্বাস। সব আগাছা মুক্ত হয়ে আমাদের তরুণেরা দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে।সেই শুভ কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×