ঈদের পর ঢাকার যানজটের ভয়াবহ রকম বেড়েছে। এর কারণ কি হতে পারে আমার জানা নাই। তবে কয়েকটি যায়গায় যানজটের কারণ গুলো আমার কাছে মনে হয়েছে প্রাইভেট কার। অনেকেই প্রাইভেট কার বন্ধ করে দেবার প্রস্তাব করছেন। তবে আমার মতে কিছু যায়গায় কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহন করলে যানজট আপাতত কমতে পারে বলে আমার ধারনা।
আমি আজিমপুর থেকে বসুন্ধরায় যাতায়াত করে থাকি। ইদানিং আটটা থেকেই বিশ্বরোড কুড়িল সড়ক এবং রামপুরা থেকে বিশ্বরোড এখানে প্রচুর জ্যাম হয়। এছাড়াও সাতরাস্তা থেকে মহাখালি, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ থেকে বিজয় সড়নী এবং বিশ্বরোড থেকে মহাখালি ফ্লাই ওভার হয়ে প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়কে ছাড়িয়ে শাহবাগ পর্যন্ত প্রচন্ড জ্যাম হয়।
সাতরাস্তা থেকে মহাখালির জ্যাম এর প্রধান কারণ মহাখালি বাস স্ট্যান্ড এর কাছের গ্যস স্টেশন গুলি। সেখানে গাড়ির লাইনের কারণে এমন অবস্থাও দাঁড়ায় যে মাত্র একটি গাড়ি সড়ক দিয়ে যেতে পারে। আমার মতে তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত সি এন জি স্টেশন বন্ধ রাখা এর কারণ। আমি খোজ নিয়ে দেখলাম, যে সকল সি এন জি স্টেশনের জেনারেটর ব্যবস্থা আছে, তারাও এই সময়ে গ্যাস দিতে পারে না। এক্ষেত্রে নিয়মটি শিথিল করা উচিত। এবং জেনারেটর চালিত সকল সি এন জি স্টেশন সেই সময়ে দশ টাকা বা অতিরিক্ত কিছু টাকা আদায় করতে পারে তাদের সার্ভিসের জন্যে।
বিশ্বরোড হতে কুড়িল সরকে যানজটের প্রধান কারণ বসুন্ধরা। আসলে বসুন্ধরায় অনেকগুলো বড় প্রতিষ্ঠান থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নর্থ সাউথ, গ্রামীনের প্রধান কার্যালয়, ভিকারুন্নেসা, হার্ডকো সহ অনেকগুলো বড় বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভেতরে থাকা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীরা বেশীরভাগই গাড়ি নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব বাস সার্ভিস চালু করতে বাধ্য করা উচিত এবং ছাত্র ছাত্রীদের সেসব ব্যবহার করতে বাধ্য করা উচি। এছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্যেও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এ দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রম বাস্তবায়নের চেষ্টার পাশাপাশি কুড়িল হতে বসুন্ধরায় ঢুকার রাস্তা বন্ধ করে যমুনা ফিউচার পার্ক এর কাছে একটা ইউটার্ন করে দেয়া যেতে পারে। ফলে বিশ্বরোড হতে বসুন্ধরা হয়ে বাড্ডা যাবার রাস্তাটি নন স্টপ হয়ে পড়বে। এবং গুলশান এক এ ঢুকার রাস্তাটিও বন্ধ করে কিছুদুর যেয়ে একটা ইউটার্ন করে দিলে এ রাস্তাটিও নন স্টপ হয়ে পড়বে। এভাবে রামপুরা হতে বিশ্বরোড এবং বিশ্বরোড হতে রামপুরা যাবার রাস্তায় গাড়ির অবিরাম প্রবাহের ফলে যানজট কমতে পারে বলে আমার ধারনা।
বিশ্বরোড থেকে কাকলি>মহাখালি ফ্লাই ওভার>প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শাহবাগ পর্যন্ত (সড়ক ক) জ্যাম কমাতে সরকারের ক্যন্টনমেন্ট এর রাস্তা ব্যবহারের কথা জরুরি ভাবে ভাবা উচিত। আমার মনে হয় না সেনানিবাসের রাস্তা ব্যবহারে নিরাপত্তার তেমন হুমকি ঘটতে পারে। এছাড়া সাতরাস্তা হতে বিজয় সড়নীর রাস্তাটি সকাল আটটা থেকে ১১টা এবং ৫ টা থেকে রাত আট টা পর্যন্ত ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। কারণ এ সড়কটি যানজট নিরসনে তেমন সহায়ক হতে পারেনি এবং এটি খুব ব্যস্ত সড়ক ও নয়। এতে করে (সড়ক ক) টিতে অবিরাম গাড়ি চলবে। সেনানিবাসের রাস্তা ব্যবহার করা হলে মিরপুরের গাড়ি সমুহ (সড়ক ক) ব্যবহার করবে না বলেই আমার ধারনা। এছাড়া একুশে টেলিভিশন ভবনের সামনের গোল চত্বরটিতে (ফোয়ারাটার নাম ভুলে গেছি) পান্থ পথ হতে কারওয়ান বাজার এবং কারওয়ান বাজার হতে পান্থপথে আসা একই সময়ের জন্যে বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। এ পথের গাড়িগুলোকে ইউটার্নের ব্যবস্থা করে দেয়া যেতে পারে।
সরকার জোড় বেজোড় গাড়ি চলতে দেবার কথা এখন জরুরী ভাবে ভেবে দেখতে পারে। জোড় তারিখ গুলোতে জোড় নম্বরের গাড়ি এবং বেজোড় দিন গুলোতে বেজোড় নম্বরের গাড়ি চালনোর নিয়ম করলে গাড়ির চাপ অনেক কমে যাবে। আইন ভংগ কারীকে জরিমানা করলেই বেশীরভাগ মানুষ এ আইন মানতে বাধ্য।
কার পুলিং এর একটা পদ্ধতি বের করা উচিত। অনেক গাড়িই দেখা যায় একজন আরোহী থাকে। এক্ষেত্রে কমিউনিটি যোগাযোগ বাড়ানো যেতে পারে। ফলে একই পথের অনেকে গাড়িটি ব্যবহার করতে পারবে।
এভাবে কয়েকটি জায়গার সিগনাল কমালে এবং ছোট খাট কিছু উদ্যোগ নিলে যানজট কমতে পারে বলে আমার ধারনা। আমি আমার পথের কথা বললাম। আপনারাও আপনাদের যাত্রা পথের কথা বলতে পারেন। কোন ধারনা থাকলে সেটাও শেয়ার করতে পারেন।