ঘরে ঘরে লাঠিসোঁটায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানে
কতটুকু সম্ভব সফল রক্তক্ষয়ী বিপ্লব?
নাকি দূরদর্শী নেতৃত্বে তেজস্বী প্রাণের
উদ্বেলিত তাজা রক্তের ফুল্লুধারায়
অমিত সাহসের উদীপ্ত চেতনায় রচিত
অজস্র সশস্ত্র বিপ্লবের পুণ্যস্নাত রক্তোৎসব।
মধ্যবিত্তের স্বার্থ রক্ষার্থে ‘মুক্তির সনদ’
বাস্তবায়নের নামফলকেই অন্দোলন বেগমান ভ্রান্তি আশায়,
‘স্বায়ত্তশাসন অর্জন’ শিরোনামে সংগ্রামের কর্মসূচি
পরবর্তীতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতাই আসার পাঁয়তারা জাগায়।
কুকুরের মতো বাঁচার স্বভাব না বদলিয়ে
গলায় শিকল পড়েই টিকে থাকার সংকল্পে,
ঘুঘু পাখির ডানা নির্দ্বিধায় কেটেছে নির্বুদ্ধিতাই বশবর্তী হয়ে।
অন্য উপায় না পেয়ে স্বাধীনতাবোধ জেগেছে আসন্ন বিপ্লবের প্রাক্কালে
কিন্তু হায়! অদিকদর্শীতায় দুঃসাহসিকতার স্ফুরণে
বিশ্বাকাশে তারকাকচিত বীর হবার বাঞ্চায়
দু’হাত আবদ্ধতার শিকার লৌহের শিকলে।
ক্ষীণ স্বার্থ সাধনে বন্ধুর বিপদে
মিত্রদেশগুলোর উপচে পড়েছে ভালোবাসা-সহানুভূতি,
মিটেছে কোটিউর্ধ্ব ক্ষুধার্ত শরনার্থীর
অন্ন, বস্ত্র, অস্থায়ী বসবাসের সংস্থান,
ঐ সামান্য স্বার্থের চেয়েও বৃহৎ প্রাপ্তি অর্জনে
প্রশিক্ষন চলেছে অগ্রগামী মুক্তিকামীদের
সখ্যতা স্থাপন করে মৃত্যুর প্রতি।
চারপাশে ছড়ানো ছিটানো বারুদের গন্ধ,
ডোবায়-মাটিতে লাশ আর লাশ!
সম্মুখ যুদ্ধ, মেশিনগানের অনবরত শব্দ;
বোমা-গ্রেনেডের বিকট আওয়াজে
বীভৎসতার জমাট বাঁধা কালো মেঘে ঢেকেছিল দিগন্তজোড়া অনন্ত আকাশ।
অস্তগামী সূর্জের মতো সমুদ্রের জলের রঙ রক্তিম হতে লাগলো,
জলের সাথে একাকার হয়ে নতুন আভায় উঠল প্রভাতের নতুন সূর্জ
মুক্তিকামী মানুষের রক্তে মুক্ত জাতি,
একটি স্বাধীন মানচিত্র অর্জনের রক্তাক্ত ইতিহাস সূচিত হলো।
তারপর! চরম বিপর্জস্ততার সামনে নানা বাধা-বিপত্তি
গ্রাস করতে লাগলো প্রবল গতিতে,
ভিত না গড়েই দালাল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য
জল-তেল একসাথে মিশিয়ে আগুন ধরালো
মুক্তিকামী চেতনার মানসপটে।
ভোরের অনাকাঙ্ক্ষিত ঝোড়ো হাওয়া চারপাশ দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে
সব করে দিল চিরতরে নিঃস্ব।
নেমে এলো অ্যামাজানের অস্বাভাবিক অন্ধকার,
তবুও, অদৃশ্য আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি নিশ্চুপে
প্রবেশ করতে থাকল কোষে-কোষে,
ক্যান্সারে নিঃশেষ করার ফন্দি এঁটে
ভেঙে ফেলতে লাগলো চেতনার সুদীর্ঘ, সুউচ্চ পাহাড়।
সঠিক ইতিহাস ঢুকে পড়ে প্রস্তর যুগের গুহায়,
ভুল পথে এগিয়ে তরুণ প্রজন্ম শিকার বাঞ্চনার,
তথাকথিত বুদ্ধিজীবি-ইতিহাসবেত্তা তেল মালিশ করতে
সদা ব্যস্ত আশ্রয়দাতা মনিবের পা’য়।
আর এখন অধিকাংশ মুক্তিযুদ্ধের প্রগতিশীল চেতনাধারীরা নির্বিকার!
উঁইপোকা বসত গড়েছে চৈতন্যের জগতে,
পরাশক্তির আধিপত্যে বদলে গেছে বহমান চেতনা-পথ-পরিক্রমা,
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রকোপে বিবেক বিসর্জিত সুক্ষ তীক্ষ্ণ আঘাতে।
জরাজীর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনষ্টরত মগজের নিউরন নির্দ্বিধায়,
প্রগতি অভিমুখী দর্শন-চেতনার কেন্দ্র থেকে
বৃত্তের বাইরে চলে গেছে অগণিত বছর,
প্রাপ্তি শুধুই অজ্ঞ নষ্ট সমাজকে দেখানোর জন্যে সনদপত্র!
দেশপ্রেমহীনতায় জ্ঞানের ভান্ডার ভরপুর শূন্যতায়।
শোষণের যাতনায় অভাব অনটনে দিনাতিপাত,
কোথাও নেই মাথা গোঁজার মতো ঠাই!
মৌলিক অধিকারের বঞ্চনায় বেড়ে ওঠা সাদামাঠা জীবন,
অশ্রু-ই শেষ সম্বল! এভাবেই বেঁচে থাকা; নিশ্চুপে দুঃখ সহ্য করায়!
ভূলুণ্ঠিত মুক্তিপাগল গণমানুষের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা, চেতনা
প্রতিক্রিয়াশীলদের নীল নকশায় বিপর্জস্ত বিধ্বস্ত পশ্চাদাভিমুখী বাংলাদেশ,
দুর্নীতি শোষণের স্টিমরোলারের প্রতিনিয়ত আঘাতে
অর্জন শুধুই লাঞ্চনা-বঞ্চনা-গঞ্জনা।
লক্ষ লক্ষ প্রাণের অজেয় আত্মত্যাগ
মাটির বক্ষে সজোরে ভূপাতিত,
ব্যর্থতার দায়ে পর্জবসিত অমর প্রাণের অজর বিজয়োল্লাস,
এখন চোখের সামনে ’১৯৭১ -এর মহান মুক্তিযুদ্ধ
শুধুই “নিছক বিপ্লব” হিশেবেই রূপায়িত।।