somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুভূতি গুলো সুখকর..

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


''আপু...চিনি কোথায় রেখেছো??পাচ্ছিনা!'' কোন জবাব আসলো না,নবনী এবার ডায়নিং রুম থেকে কিচেনে গেলো,সব গুলো তাক তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল,কিন্তু চিনির দেখা পাচ্ছে না!ওদিকে চূলোয় বসানো চা'এর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে! আবারো চেঁচিয়ে উঠলো,
-'ছোটা'পু...চিনির বয়ামটা কোথায় রেখেছো?পাচ্ছি না তো!' কিন্তু এবারো কোন সাড়া নেই!আশ্চর্য হলো একটু নবনী!!! রুমের ভেতর করছে টা কি মেয়েটা? চা'এর চূলো বন্ধ করে বোনের রুমে গেলো,গিয়ে দেখে আপু মুখে ফেসপ্যাক মেখে বই পড়ছে,কানে আবার হেডফোন লাগানো!একসাথে কতো কাজ করছে সে,বাহ! টান দিয়ে কান থেকে হেডফোনটা খুলে ফেলল,হৃদিতা স্বাভাবিক ভাবে নবনীতার দিকে তাকালো,
-চিনি কোন বয়ামে নেই,ওটা প্যাকেটে আছে,প্যাকেট কেটে বয়ামে ভরতে হবে,কাল শেষ হয়ে গেছে বয়ামেরটা বুঝলি?এখন যা,চা বানা,আর আমাকেও এক মগ দিস,এবং অবশ্যই চিনি এক চামুচের বেশি না!
এক নাগারে কথা গুলো বলে,আবারো কানে হেড ফোন ঢুকালো হৃদিতা। নবনীতা বলল,
-তুমি যে দিন দিন সাইকো হয়ে যাচ্ছো সেটা কি জানো?
হৃদিতা উপর-নিচে মাথা দুলালো,তার মানে সে জানে!
-তোমার পাবনাতে চলে যাওয়া উচিত,এই বাসায় থেকে তুমি আমাকেও পাগল বানিয়ে ফেলবা!
-এক্সকিউজ মি,সাইকো আর পাগল এক না!তুই ইদানিং বেশি বক বক শিখেছিস!কিন্তু বেশির ভাগই ভুল বকিস!এখন তুই সামনে থেকে যা,তোর সাথে বেশি কথা বললে,আমার এতো কষ্ট করে মুখে লাগানো ফেস প্যাক নষ্ট হয়ে যাবে!
নবনীর ইচ্ছে করছে,বোনের গলাটা চেপে ধরতে!রাগে গজ গজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। একটু পরে এক মগ চা এনে বোনের সামনে রেখে বলল,
-চা রেখে গেলাম,কারো ফেস প্যাকের ঢং শেষ হলে যেনো খেয়ে নেয়!পরে যদি বলে ঠান্ডা হয়ে গেছে,তখন আমি এই চা তার মাথায় ঢেলে দিবো!
হৃদিতা মুচকি হেসে চা এর মগটা হাতে নিয়ে বলল,
-শুকরিয়াহ,আল্লাহ তোর মনের আশা পূরণ করুন,আমীন।
এবার নবনীর মুখেও হাসি ফুঁটে উঠলো,কিছু না বলে চুপচাপ দু'বোন চা খেতে লাগল। হঠাত কি মনে করে যেনো,নবনী আলমারী থেকে দুটো এলবাম নামালো,বড় বোন দীপান্বিতা,আর মেঝ বোন অর্পিতার বিয়ের এলবাম। ছবি গুলো দেখতে দেখতে বলল,
-বড়া'পুর বিয়ের সময় আমি অনেক ছোট ছিলাম,তাই না আপু?
-হুম,তোর বয়স কতো হবে?ছয় কি সাত!আমি মাত্র তখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম,তোকে দেখে দুলাভাইয়ের বন্ধুরা আফসোসে শেষ,বলে'দোস্ত,তোর শালীরা এতো ছোট কেন?!!'হাহাহা।
নবনী হাসতে হাসতে বলল,
-ইশ,কেন যে আমি তখন এতো ছোট ছিলাম! আর মেঝ'পুর বিয়েটা তো কেমন হুট করেই হয়ে গেলো!তাও আবার আমার বৃত্তি পরীক্ষার সময়!কি কপাল আমার,দুই দু'টা বোনের নিয়ে হলো,অথচ একটাতেও কোন মজা করতে পারলাম না!
-নিজের বিয়ের সময় করিস,আর সামনে তো ভাইয়াদের বিয়ে আছেই!
নবনী কপাল কুঁচকে বলল,
-কেন?তোর বিয়ের সময় কি ঘুমাবো!আমি তো সব মজা তোর বিয়েতেই করবো।
হৃদিতা মুচকি হেসে বলল,
-পারবি না!দেখিস...
নবনীতা শুধু মুখ বাঁকালো,কিছু বলতে নিয়েও আর বললো না। মনটা কেমন জানি হয়ে গেলো। কিছুক্ষন চুপ থেকে মগটা নিয়ে আম্মুর রুমে চলে আসল,কেন জানি হৃদি'পুর সামনে থাকতে খুব অস্বস্তি লাগছিলো!

নিলয় প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে আলমারী ওলট-পালট করতে থাকা বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চেঁচালো,
-ভাইয়া,কি শুরু করলে তুমি?তোমার কাপড় আমার উপর কেন এসে পড়ছে?
-কথা কম বল,আজকে আমার ইম্পোর্টেন্ট প্রেজেন্টেশন,অথচ একটা শার্টও আয়রন করা দেখছি না!!
-তো সে জন্য আলমারীর বাকী কাপড় গুলো কি দোষ করছে?আগে থেকে কিছু খেয়াল করে না,এখন এসে টানাটানি!
নাবিল প্রচন্ড রাগান্বিত গলায় হাঁক দিলো,'এই নবনী,জলদি এ ঘরে আয়তো'
নবনীতা রান্না ঘরে বুয়ার সাথে সকালের নাশতা তৈরী করছিলো। রুটি বানানোর বেলুন হাতে নিয়েই দৌড়ে আসল ভাইয়ের রুমে,
-কি হয়েছে ভাইয়া?
-আমার একটা শার্টও আয়রন করা নাই কেন?
নবনীতা অবাক হলো,এই প্রশ্ন ভাইয়া ওকে করছে কেন?!!
-সেটার আমি কি জানি?আমি কি তোমাদের কারো কাপড় গোছাই?আর তোমার শার্ট কি আমি বাইরে থেকে আয়রন করিয়ে আনবো?তোমারই তো করার কথা!
-তোরা দুই বোন বাসায় সারাদিন করিস কি বলতো?খালি গল্প আর টিভি দেখা!ভাইদের কি দরকার না দরকার তার কোন খবরই নাই!যা আম্মু কে ডাক দে!
নবনীতা মুখ কালো করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো!সাত সকালে শুধু শুধুই ঝাড়ি শুনতে হলো!টেবিলে নাশতা দিয়ে ভাইয়াদেরকে ডাকতে যেয়ে দেখলো,হৃদিতা ততোক্ষনে ভাইয়ার একটা শার্ট ইস্ত্রি করে রুমে রেখে গেছে। নবনীতা হাঁফ ছাড়লো!বিড়বিড় করতে করতে নিজের রুমে আসলো
'আল্লাহ আপুর উপর রহম করুক!না হলে আজকে আমার কপালে ছিলো আরো কতোগুলো ঝাড়ি! যেই একেক জন অলস ভাই আমার,ওদের যদি হৃদি'পুর মতো একটা বোন না থাকতো তাহলে খবরই ছিলো!ভাইয়াদের মোবাইলে চার্জ দেয়া থেকে শুরু করে জুতো পর্যন্ত সব দিকে খেয়াল রাখে আপু,একদিন যদি ও বাসায় না থাকে ভাইয়াদের তান্ডবে কি যে অবস্থা হয় বাসার!অবশ্য আমি না থাকলেও ওদের সমস্যা!হৃদি'পুর রান্না নাকি মজা লাগে না!তখন আবার আরেক তান্ডব শুরু করে,ওদের সাথে আব্বুও যোগ দেয়!আহ... কি যে আছে এদের কপালে!!!

বাসা ভর্তি এতো মানুষ যে হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে! এতো হৈ চৈ এর মধ্যে কে যে কাকে ডাকছে,শোনাই যাচ্ছে না। নবনীতা সকাল সকাল গোসল করে,চুল মুছতে মুছতে আম্মুর রুমের বারান্দায় আসল। ভেতর থেকে ছোট খালা ডাক দিলো,
-কইরে নবনী,তাড়াতাড়ি কর,যাবিনা?দেরি করে গেলে তো দুপুরে মধ্যে সেন্টারে পৌছাতে দেরি হয়ে যাবে!
-আসছি খালা।
বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। প্রাণপনে চেষ্টা করছে,ভেতরের কান্নাটা আটকে রাখতে,কিন্তু পারছেনা! এই চেহারা নিয়ে ছোটা'পুর সামনে কোনভাবেই যাওয়া যাবে না,কিন্তু নবনী আপ্রাণ চেষ্টা করেও নিজেকে শক্ত রাখতে পারছে না! এমন সময় মেঝ ভাইয়া বারান্দায় আসল,ওকে দেখে পেছন থেকে বলল,
-এই তুই ভেতরে যা তো,আমি এখানে কাজ করবো।
নবনী একই ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
-ভাইয়া,কাজটা পরে করো,আমি এখন যেতে পারবো না।
নিলয় কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। নবনীর কন্ঠ শুনে বুঝতে পেরেছে মেয়েটা কাঁদছে! একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসল নিলয়ের বুক থেকে। ধীরে ধীরে বোনের পাশে যেয়ে মাথায় হাত রাখল,নবনী আর পারলো না,হুঁ হুঁ করে কেঁদে ফেলল! নিলয়ের চোখ থেকেও জল গড়াতে লাগল।
-কাঁদিস না!তুই কাঁদলে হৃদি কষ্ট পাবে। আজকে হৃদির জীবনের অনেক খুশীর একটা দিন,আজ আমরা কাঁদলে ওর মনটা খারাপ হয়ে যাবে!
নবনী কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-আপু চলে গেলে কে প্রতিদিন আমার সাথে গল্প করবে বলতো?আমি কার সাথে মন খুলে কথা বলবো?ভাইয়া,আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে!
-জানিনারে!ও চলে গেলে,আমার ল্যাপটপে মনে করে কে চার্জ দিবে জানিনা!আমার বই খাতা,ডকুমেন্টস গুলো কে মনে করে গুছিয়ে রাখবে জানিনা! তোরা মেয়েরা বোন হয়ে কেন যে এতো কষ্ট দিস...
বলতে বলতে নিলয়ের কন্ঠটা বুজে এলো,নবনীতা কিছু না বলে চোখ মুছলো। ছোট খালা আবারো ডাকছেন! ভালো করে চোখ মুছে নিজের রুমে আসল নবনী। দেখলো হৃদিতা ওর দিকে তাকিয়ে আছে,ইচ্ছে করেই সেদিকে না তাকিয়ে দ্রুত প্রয়োজনিয় জিনিসপত্র আপুর ল্যাগেজে সাজাতে লাগল।
-আপু,তোর আর কি কি লাগবে বল?সবই তো ঢুকিয়েছি,আর কিছু কি বাকী আছে?দেখে নে ভালো করে!
হৃদি কিছু বলল না। নবনী চাইলেও বোনের দিকে তাকাতে পারছে না! খুব কষ্ট হচ্ছে ওর... ফুপি আসল রুমে,
-কিরে রেডি তোরা?ল্যাগেজ সব গোছানো হয়ে গেছে?
-হুম,ছোট'দাকে বল,এগুলো নিয়ে গাড়িতে রাখতে।
বলেই নবনী দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে গেল। কিচেনে যেয়ে দেখল,আম্মু চূলোর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন,বুঝাই যাচ্ছে তিনি কাঁদছেন! পেছন থেকে যেয়ে মা'কে জড়িয়ে ধরল নবনী্তা,
-আম্মু,আপুর বিয়ে না দিলে হয় না?
আম্মু কান্না ভেজা গলায় বলল,
-নারে পাগলী,পারলে কি আর কেউ মেয়েকে পরের বাড়ি পাঠায়?তোরাই তো আমার ঘরের প্রাণ।
-আম্মু,আমি কিন্তু কোথাও যাবো না,আগেই বলছি...আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না,প্লিজ!
মা-মেয়ের কান্না দেখে কিচেনের দরজায় দাঁড়িয়ে চোখ মুছলেন বাবা। বড় মামা পাশে এসে তার কাঁধে হাত রাখলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজে চলে গেলেন দু'জনে।
ফুপি ড্রয়িং রুমে এসে হাঁক ডাকলেন,
-কই ভাবি,কোথায়?হৃদি বের হচ্ছে তো,এদিকে আসেন। নবনী কোথায় তুই?যাবি না পার্লারে? কিরে,তোরা ভাই-বোনেরা সব কোথায় আছিস?
বড় ভাইয়া আগেই কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেছেন। বাসায় ছিলো মেঝ আর ছোট ভাই,আর ওরা চার বোন। আস্তে আস্তে সবাই ড্রয়িং রুমে আসল,কেউ কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না যেনো! মা চোখ নিচু রেখেই বললেন,
-তাড়াতাড়ি চলে আসিস,বর যাত্রী আসার আগেই। আর সাবধানে যেও সবাই,মোবাইল সাথেই রেখো,যেনো কল দিলে পাওয়া যায়। ঠিক আছে,আমি যাই,ওদিকে অনেক কাজ পরে আছে...
বলতে বলতে মা ঘুরে দাঁড়ালেন, আর তখনই হৃদিতা ছুটে এসে মা'কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল!
ভাইবোনের সব এক সাথে কাঁদতে লাগল... চোখ শুকনো নেই ফুপি-খালাদেরও! কিছুক্ষন পর ফুপি এসে ভাবিকে সান্তনা দিয়ে বলল,
-ভাবি,আপনি কাঁদলে হবে?আজ মেয়েটার খুশির দিনে মা কাঁদলে কি হয়?শক্ত হোন ভাবি,মেয়ে তো পরের ঘরে যাবেই,এটাই নিয়ম। চাইলেও কি মেয়েকে কোন বাবা-মা পারে আগলে রাখতে?...
বলতে বলতে কন্ঠটা বুঝে এলো ফুপির! আম্মু নিজেকে সামলে নিতে নিতে হৃদিতার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
-বিয়ে হলেই মেয়ে পর হয় না মা,কাঁদতে নেই...হাসি মুখে নতুন জীবন শুরু করতে হয়। আমাদের দোয়া তোর সাথেই থাকবে ইনশাআল্লাহ।
হৃদিতা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-আম্মু,আমি কোথাও যাবো না... আমার দরকার নেই নতুন জীবনের!আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না!
মা পরম যত্নে মেয়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,
-তুই তো দূরে কোথাও যাচ্ছিস না,আমরা সবাই সব সময়ই তোর সাথেই আছি। আর কাঁদবি না,মন থেকে সব কষ্ট ঝেড়ে ফেল...যেখানে যাচ্ছিস,ওরাও সবাই তোর আপনজন,ওরাও তোর জন্য অপেক্ষা করছে,সুতরাং এতো মন খারাপ করার কিছু নেই বরং খুশী মনে নতুন জীবন শুরু কর,ঠিক আছে?
হৃদিতা তবুও মা কে জড়িয়ে ধরে থাকলো,ওর মনে হচ্ছে মা কে ছেড়ে দিলে আর কখনো এভাবে ধরতে পারবে না! কেমন জানি,অবুঝ বাচ্চা মনে হচ্ছে নিজেকে,কিচ্ছুই মানতে ইচ্ছে করছে না,কোন কিছু বুঝতে ইচ্ছে করছে না। নিলয় চোখ মুছে ছোট ভাই নাফি কে ল্যাগেজ নিয়ে বের হতে বলল,তারপর দুই বোন কে হাত ধরে টেনে নিয়ে চলতে শুরু করলো।

স্টেজে বসে হৃদিতা বারবার এদিক ওদিক তাকাতে লাগল,এতো মানুষ কে দেখছে কিন্তু নিজের ভাই-বোনদের দেখা পাচ্ছে না! বর যাত্রী আসেনি এখনো,সে চাচ্ছে কিছুটা সময় ভাই-বোনদের সাথে হাসিমুখে কাটাতে। এক কাজিনকে পাঠালো সব গুলোকে ধরে আনার জন্য। কিছুক্ষন পর নবনীতা ভাইয়াদেরকে নিয়ে আসল, হৃদিতা নাবিলকে জিজ্ঞেস করলো,
-ভাইয়া,আমাকে আজকে কেমন লাগছে?
নাবিল হাসার চেষ্টা করল কিছু বলল না। তা দেখে মেঝ'পু বলল,
-কিরে কেমন লাগছে বলিস না কেন?সব সময় তো ক্ষেপাতি,সাজলে ওকে পেত্নির মতো নাকি লাগে!
নাবিল ক্যামেরাটা হাত থেকে রেখে বোনের পাশে যেয়ে বসল,আস্তে করে বলল,
-আজকে তোকে অনেক সুন্দর লাগছে,একদম পরীর মতো।
হৃদিতা হাসল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে। একটু দূরে দাঁড়ানো ছোট ভাই নাফি কে জিজ্ঞেস করলো,
-কিরে নাফি তুই তো বললি না,আজ আমাকে কেমন লাগছে?
নাফি লাজুক ভাবে হেসে বলল,
-অনেক সুন্দর লাগছে,একদম পরীর মতো।
হৃদিতার মুখের হাসিটা আরো প্রাণবন্ত হলো। সব ভাই-বোন এক সাথে ছবি তোলার ফাঁকে গল্প করতে লাগল। নবনীতা খেয়াল করলো,হৃদি'পুর মুখে বাসা থেকে আসার সময় যে মন-মরা ভাবটা ছিলো তা আর নেই,খুব হাসছে সবার সাথে। নবনীতার মনটাও খুশীতে ভরে উঠলো আপুর হাসি দেখে। ও বার বার আপুর মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো,তা খেয়াল করে বড় ভাইয়া এসে ওর পাশে দাঁড়ালো,আস্তে করে বলল,
-কিরে?কি ভাবিস?তোর সিরিয়াল কবে আসবে সে কথা?
নবনীতা খানিকটা কপাল কুঁচকে ভাইয়ের দিকে না তাকিয়ে বলল,
-তোমার মাথা!আপুকে অনেক সুন্দর লাগছে আজকে তাই না ভাইয়া?
-হুম,আসলেই। বিশ্বাসই হচ্ছে না,সেদিনের ছোট্ট বোনটা আজকে বউ সেজেছে!তুইও ক'দিন পর সাজবি তাই নারে?
-ধুর ভাইয়া!আমার অনেক দেরি আছে,আগে ভাবি আসুক!
নাবিল মৃদু হাসল। নবনীতা খানিক সময় পর আবারো বলল,
-আর কয়েক ঘন্টা পর আপুটা চলে যাবে,আজকের পর আপুটা কিন্তু আমাদের আর থাকবে না,ওর উপর আমাদের থেকেও বেশি অন্যদের দাবী হয়ে যাবে তাই না ভাইয়া?
-বিয়ে হলেই বোনের জন্য সবার ভালোবাসা কমে যায় না,আমাদের ভালোবাসা একই থাকবে,তবে সেটাকে ওর শ্বশুড় বাড়ির সাথে শেয়ার করতে হবে এই যা। এতোদিন আমাদের সব কিছুতে ও সাহায্য করেছে,মানসিক বল কাজ-কর্মে বল,এখন আমাদেরকেও ওকে সব সময় সাহায্য করতে হবে,উৎসাহ দিতে হবে,সাহস দিতে হবে,অনেক বেশি দোয়া করতে হবে ওর জন্য যেনো ও সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে পারে। তাই না?
-হুম,তাহলে আজকে আর ওর সামনে মন খারাপ করে দাঁড়াবো না,কি বলো? ও কি সুন্দর করে হাসছে,সবার সাথে আনন্দ করছে,ওকে এভাবে দেখতেই ভালো লাগছে। আল্লাহ যেনো ওকে সব সময় এভাবেই হাসি-খুশী রাখেন,তাই না ভাইয়া?
বলতে বলতে এক সাথে হেসে উঠলো দুই ভাই-বোন। এমন সময় আব্বুর গলা শুনতে পেলো,
'এই তোমরা কোথায় সব?বর যাত্রী চলে আসছে,নাফি কোথায় তোরা?বাইরে আয় জলদি...'
ভাইয়ারা সবাই দ্রুত চলে গেলো। হলের ভেতর সবাই আরেক দফা প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলো। নবনীতা বোনের পাশে এসে বসল,হৃদিতার চেহারায় নার্ভাসনেস ফুঁটে উঠছে,নবনীতা দেখল,আপুর হাতটাও অল্প অল্প কাঁপছে,ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
-নবনী,আমি কি ঘামছি?আমাকে কি নার্ভাস দেখাচ্ছে?
নবনীতা মুচকী হেসে বোনের হাতটা চেপে ধরল,কিছু বলল না মুখে। কারণ,তার নিজেরও ভেতরে ভেতরেকিছুটা উত্তেজনা কাজ করছে!! অদ্ভুদ সব অনুভূতি কাজ করছে,যদিও অনুভূতি গুলো সুখকর তবুও মনের ভেতর কোথায় যেনো ছন্দপতন হচ্ছে!

[বোন বিদায় দেয়া অনেক কষ্টকর! :( হোক না অনেক গুলো বোন,তবুও... ]



২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

= দাওয়াত বা কোন অনুষ্ঠানে খাবার গ্রহণের সময় যে কটি বিষয় আপনার বিবেচনায় রাখা দরকার =

লিখেছেন এমএলজি, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৪:২৩



১. দ্রুত খাবার গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা কিছুটা ধীর বা প্রলম্বিত করার চেষ্টা করুন যাতে অন্য সবার বেশ আগেই আপনার খাওয়া শেষ হয়ে না যায়।

২. কোন আইটেম খুব সুস্বাদু বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা.........

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বিষাদময় গ্লানির সঙ্গেই বোধকরি বেশি সম্পর্ক। কদাচিৎ কোনো বড় দলকে পরাজিত করার পর আমরা পুরো বাংলাদেশ এখনো আবেগে আপ্লুত... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। অন্য দেশে চলে যাচ্ছে গার্মেন্টসের অর্ডার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:২০




এবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ডারের একটি অংশ প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানসহ অন্য দেশের বাজারে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে দেশের সবচেয়ে বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ভারতের উদ্বেগ!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


ভালোভাবেই শেষ হলো সনাতনীদের বৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজা কিন্তু দুর্গাপূজা ভালো ভাবে শেষ হওয়ায় অনেকেই বড্ড হতাশ হয়েছে; পূজা নিয়ে তারা ট্রামকার্ড খেলতে চেয়েছিল কিন্তু ট্রামকার্ড খেলার পরও সফল হতে পারেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

উফ্! কি দারুণ!! WOW!!!

লিখেছেন মন থেকে বলি, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:০৬

চোখটা সবে যেই বুঁজেছি, ডাকল হুলো 'মিঁয়াও'।
মাথায় এলো আজিব টপিক - আরি সাবাশ! WOW!!

ল্যাংটাকালে 'আমার বই'-য়ে,
আঁকল ছবি কোন আঁকিয়ে?
তালগাছেতে উলটো ঝোলে কানাবগির ছাও।
সেটাই ছিল প্রথম অবাক, প্রথম বলা - WOW!!

আরও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×