আপনি যদি কাউকে এখন জিজ্ঞাসা করেন, “কেমন আছেন?” তার উত্তরে তিনি সচরাচর কি বলেন – ‘এইতো ভাই, চলছে কোন রকম’, ‘আছি মোটামুটি’, ‘ভালো নেই ভাই, সংসারে অশান্তি’, ‘ভালো কোত্থেকে ভাই, ভালোর দিন শেষ’ কিংবা বলবেন ‘আছি---’ (সাথে একটা দীর্ঘশ্বাস)। এই কথা গুলি শুনতে আমরা অভ্যস্ত। এই কথাগুলো আমরা পরিচিতজনদেরই বলি। কেউ কেউ আবার কারো খারাপ থাকার খবর শুনতেই ভালবাসে। এ ধরণের লোকদের সামনে যদি কোয়ান্টাম মেথডের ভাষায় ‘বেশ ভাল আছি’ বলেন তাহলে উনার কিছুটা হিংসে হতে পারে। ভেতরে ভেতরে জ্বলতে পারে আর টেকনিক্যালি সর্বাত্মক চেষ্টায় চাইবেন আপনাকে একটু খারাপ রাখতে। এ আহাম্মকের দল গুলো সব সময় ছিদ্রান্বেষণে তৎপর থাকে। আমরা নিজের দুর্ভাগ্য নিজেই গড়ি। আমি যদি পরীক্ষায় খারাপ করি তাহলে চাইব পৃথিবীর সবাই যেন পরীক্ষায় খারাপ করে। কারো ভালো শুনলে হিংসেই জ্বলে উঠি। একটা বালতিতে কিছু কাঁকড়া রাখলে একটি কাঁকড়া সর্বাত্মক চেষ্টায় উঠতে চাইলে অন্য কাঁকড়া গুলো টেনে-হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে দেয়। ফলে কোনটিই আর উপরে উঠতে পারে না।
মানুষ নিজেকে সব চেয়ে সেরা মনে করে। নিজের সম্পর্কে সব সময় সচেতন থাকে। নিজের পছন্দ, রুচি, চালচলন, পোশাকআশাক সব কিছুতে একটু সচেতন। কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে মানুষের দৃষ্টিটা থাকে বাইরের দিকে। আমরা সবসময় অন্যকে অনুসরণ করি, অন্যের মতন হতে চাই, অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করি। কখনো আজকের ‘আমি’কে কালকের ‘আমি’র সাথে তুলনা করি না। এজন্যই পরচর্চা আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারো ক্ষতি কামনা করে আপনি কি আসলে সুখে থাকতে পারেন? এক কথায় ‘না’। একজন লোক একটি আশ্চর্য প্রদীপ পেয়েছিল। প্রদীপ ঘষলেই দৈত্য এসে বলল “হে মালিক, আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন কিন্তু আপনার প্রতিবেশী তারচেয়ে দ্বিগুণ পাবেন”। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, পাকা দালান যাই চাচ্ছেন উনার প্রতিবেশীর দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। আপনিই বলুন, আপনার কি আর ভাল লাগবে? আপনার কল্যাণে বিনা চেষ্টায় আপনার প্রতিবেশী আপনার চেয়ে দ্বিগুণ সম্পত্তির অধিকারী হচ্ছেন। এরপর উনি চাইলেন উনার একচোখ যেন অন্ধ হয়ে যায়। অমনি উনার প্রতিবেশীর দুটা চোখ অন্ধ হয়ে গেলো। লোকটার খুশিতে আর পায় কে।
এভাবে আমরা প্রতিনিয়ত অন্যের ক্ষতি চিন্তা করে বা ক্ষতি করে তুলনামূলক ভাবে ওঁর চেয়ে ভাল থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু বুঝতে পারিনা – আমাদের আসলে নিজের স্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি বরঞ্চ আরো নিচে নেমে পড়েছি।
তাহলে আমাদের কি করা উচিৎ?
প্রথমতঃ সব সময় নিজের সাথে নিজের তুলনা করা উচিৎ। দ্বিতীয়তঃ প্রতিনিয়ত অন্যের কল্যাণ চাওয়া উচিৎ। তৃতীয়তঃ নিজের কোন কল্যাণে অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ।
অন্যের চেয়ে যেকোন উপায়ে নিজের ভাল থাকায় সার্থকতার কিছু নেই। বরং নিজে চেষ্টা করে যদি পূর্বের অবস্থান থেকে নিজেকে একটা ধাপও আগানো যায়, সেটাই হবে উন্নতি আর সেটাই হবে সার্থকতা। - এই হোক আমাদের নববর্ষের অঙ্গীকার।
গত বছরের চেয়ে নতুন বছর সকলের অবস্থান হোক সর্বাঙ্গীণ সুন্দর ও উদ্ভাসিত।