‘আমার এত আদরের বাচ্চাটি আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় গেলে? বাবা, তোমার কি একবারও মনে হয় নাই যে তোমার একটা দুঃখী মা আছে …।’
ঠিক এভাবেই শুরু এক মায়ের আত্মকথনের। যদিও লেখাটা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে এক মমতাময়ী মা এর চিঠি কিন্তু মৃত ছেলেকে লেখা এই চিঠিকে আমি আত্মকথনই বলবো। সবার প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ এর মা আয়েশা ফয়েজ এর লেখা শেষ চিঠি। মূহুর্তে মনকে আর্দ্র করে ফেলবে এই লেখা। অনেক জায়গায় চোখ ছলছল করে উঠবে আপনার, নিশ্চুপ হয়ে একজন মা এর কষ্ট, হাহাকার,অস্থিরতা, যন্ত্রনা, একাকীত্বকে উপলব্ধি করতে চাইবেন আপনি। ভাববেন এত ভালোবাসা, এত মায়া বুকে চাপা দিয়ে একজন মানুষ কিভাবে বেঁচে ছিল।
ছাই রঙ্গের ঝাপসা পাতার উপর হলুদ খামের ছবি আঁকা প্রচ্ছদের বইটার ভেতর জুড়ে শুধু স্মৃতি কাতরতা। সবচেয়ে ক্ষ্যাপাটে, বুদ্ধিমান, গুনবান, সৌভাগ্যবান সন্তান যখন বৃদ্ধ মাকে রেখে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তখন সে মা এর কাছে তার জীবনকে মনে হয় শাস্তি, পৃথিবীকে মনে হয় নিষ্ঠুর আর মা হিসেবে নিজেকে মনে হয় ব্যর্থ। তাইতো তিনি বারবার বলেছেন, ‘আমি মনে হয় সত্যিকারের মা হয়ে উঠতে পারিনি, তাই আমার দোয়া কাজে লাগেনি, ‘আমার জীবনটা এত জটিল কেন? এই জীবন নিয়ে আমাকে আর কতকাল বেঁচে থাকতে হবে?
বইটা শেষ হয়েছে ঠিক এভাবে –
‘এখন আমি লিখতে বসেছি। লিখে যাচ্ছি, শুধু তোমাকে লিখে যাচ্ছি। আহারে! যদি এটা সত্যি হতো আসলেই তোমাকে আমি লিখতে পারতাম, তাহলে এই পৃথিবীতে আমার তো এর চাইতে বড় কিছু চাওয়ার ছিল না। আহা! কেন এটা সত্যি হয় না?
বেঁচে থাকা বড় কষ্ট বাবা। বড় কষ্ট।‘
পড়া শেষ করে মনে হবে এভাবে বেঁচে থাকা বড় কষ্টের। একজন মা তার সমস্তটুকু দিয়ে তাঁর সন্তানকে বড় করে, এই দুঃসহনীয় কষ্ট তাঁর প্রাপ্য হতে পারেনা। কোন মা যেন এ কষ্টের মধ্যে দিয়ে না যায়। এবারের বইমেলায় কেনা বইগুলোর মধ্যে ‘তাম্রলিপি’ থেকে বের হওয়া এই বইটা সবার আগে হাতে নিয়েছিলাম পড়তে।একটা হাহাকার নিয়ে বইটা শেষ করতে গিয়ে নিচের লাইনগুলো মনে পড়ে গেল –
“আমার প্রাণের ‘পরে চলে গেল কে
বসন্তের বাতাসটুকুর মতো…
সে চলে গেল, বলে গেল না
সে কোথায় গেল ফিরে এল না
সে যেতে যেতে চেয়ে গেল, কী যেন গেয়ে গেল
তাই আপন-মনে বসে আছি কুসুমবনেতে”
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৪