যে যেখানে আছি যেভাবে আছি.....শুভ বোধ ছড়িয়ে যাক সবখানে।)
ক'দিন থেকেই ইচ্ছে করছে ঈদ নিয়ে কিছু লিখি.....। কিন্তু মন গুছিয়ে বসা হচ্ছে কই। আর ঈদের কথাই বা কি লিখবো। ঈদ মানেই তো দেশের দিন গুলো। সবাই মিলে কি আনন্দ। এখানে এবার উইক ডে তে ঈদ। কারো কাজ। কারো স্কুল। উইকেন্ড আসলে তারপর সবাই মিলে ঈদ টুগেদার। সুতরাং ঈদের আনন্দটা তেমন বোঝা যাচ্ছে না।
প্রতিদিন সন্ধ্যার পর লিখতে বসবো ভাবি,হয় কই! ছোট ছেলে রাইয়ান গ্রেড ওয়ান এ যাচ্ছে সেপ্টেম্বর থেকে........হঠাৎ করে তার পড়ালেখার চাপ বেড়ে গেছে স্কুলে।
গত দু'বছর বেশ হেসে খেলে গেলো। সুতরাং তার ভালো লাগছে না...। নিয়মিত লেখা পড়া....। লিখতে পড়তে বসার চেয়ে তার খেলতেই ভালো লাগে।ট্রেন তার প্রিয় খেলা......ইদানিং wii game খেলে.......বলিং,টেনিস,বক্সিং সব কিছুতেই আমরা তার কাছে হেরে যাই.....
তার বড় ভাই রাশীক তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে বলিং খেলার সময় রাইয়ান রিমোট টা কোন ষ্টাইলে এ ধরে। এত ভালো স্কোর সে কিভাবে করে। অথচ লিখতে বসলে রাইয়ানের হয় হাত এ ব্যথা না হয় হাই তোলে......এই সব নিয়ে তেলেসমাতি তে আছি।
এই নিয়ে কেটে যাচ্ছে ,গেলো সেপ্টেম্বর মাস......
রাশীক বলে মাম্মা চিন্তা কোর না...রাইয়ান অনেক স্মার্ট। গ্রেড ওয়ান এ নাকি ও নিজেও এত স্মার্ট ছিলো না।এই তো কয় বছর আগের কথা।
রোজার মাসটা অন্য মাসের চেয়ে মনে হয় তাড়াতাড়ি পার হয়ে যায়। ইফতার নিয়মিত না বানালেও মাঝে মাঝে বানাতাম.....।ভাজাভাজি কেউ তেমন খেতে চায় না.........
ইফতারের আমার বাসায় একদিন বললাম কয়েক জনকে।
সারাদিন ধরে রান্না .......নতুন একটা জিনিস বানালাম এবার । জিলাপী।
একদম গাওছিয়া মার্কেটের দোকান গুলোর মত। নিজে বানায় নিজেই মুগ্ধ।
বিদেশে এসে আর যাই হোক রান্না শিখলাম অনেক।
দেশ থাকলে রসগোল্লা,দই,রসমালাই কিনেই খেতাম......এখানে এসে বানানো শিখলাম.......।দেশ থেকে যারাই আসে বানিয়ে খাওয়ালে অবাক হয়।
আসলে সব কিছু এত ভালো পাওয়া যায়......।মনে আছে প্রথমবার দেশে গিয়ে ভাবলাম সবাইকে রসগোল্লা বানিয়ে খাওয়াই।
মিল্কভিটা এনে জাল দিলাম ছানা বানাবো বলে.....ভিনেগার দেবার পর ছানা এত কমে গেলো মিষ্টি বানানোর আইডিয়া বন্ধ।
অথচ এখানে চার লিটার ৩.২৫% দুধ দিয়ে কমপক্ষে ৩০ টা মিষ্টি বানানো যায়....
গত শনিবার ইফতারের দাওয়াত ছিলো মিনুর বাসায়....।সারাদিন শরীর টা এত খারাপ ছিলো ভাবছিলাম যেতেই পারবো না......।কিন্তু না গেলে কিভাবে হয়....সবাই মিলে ইফতার করার আনন্দ আলাদা। তার উপর শনিবারের আড্ডা বলে কথা! বেশ রাত করে গল্প আড্ডা চলে।
ইফতার শেষে আরিফা বসলো সবাইকে মেহেদী দিতে.....মিনুর মেয়ে মারিশা,মিথুনের মেয়ে ইজুয়ানী দুহাতে মেহেদী পড়লো.....আমাদের আলোচনায় বিষয় তখন বাবা মার জন্য ছেলে মেয়েদের মধ্যে কারা বেশী অনুভব করে..........নানান উদাহরণে প্রমাণিত হলো.....মেয়েরা সারাজীবন মা বাবার জন্য অনুভব করে এবং বাস্তবে অনেক করে।কিন্তু ছেলেরা বিয়ের পর অজানা কারণে মা বাবার ব্যাপারে নির্লিপ্ত হয়ে যায়.......।এই অজানা কারণ আর কিছু না .....বউটি।
অনেক বউ বিয়ের পর স্বামীকে এমন ভাবে চালানোর চেস্টা করে যে ছেলেটা ভুলে যায় তার একটা পরিবার ছিলো।তার অনেক দ্বায়িত্ব ছিলো।আরিফা বললো না এখানে ছেলেটাকে স্রীক্ট থাকা উচিত।ম্যান শুড বি লাইক এ ম্যান।
এটা করতে গিয়ে অনেক ছেলেকে অসুখী জীবনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
তাই অনেক সময়ই ছেলেরা পাল্টে যায়...।নিজেকে বদলে ফেলে.....।
যাইহোক আমাদের হৈচৈ কথা শুনছে আর ওদের হাতের চলছে আঁকি বুঁকি...আমার আর আরিফার মেয়ে নেই......আমরা মন খারাপ করে ভাবছি সত্যিই তো ছেলেরা বদলে যাবে একদিন। তাহলে এই যে এত ভাবনা চিন্তা কষ্ট....
আমি বললাম ছেলে বা মেয়ে বলছো কেনো মায়া দিয়ে বড় করলে সবার জন্যই সমান লাগবার কথা........বললাম মারিশা ,ইজুয়ানীকে বলো আমাদেরকে বুড়ো বয়সে যেনো দেখতে টেখতে আসে.......এত আদর করে মেহেদী পড়ায় দিচ্ছো।
ওদের কে কথাটা বলতেই মাথা নেড়ে বলে ঠিক আছে দেখতে আসবো।
বানীরা আসলো আর এক বাসায় দাওয়াত খেয়ে একটু দেরী করে......।
জানালো আমাদের এখানকার একমাত্র বাংলাদেশী কাপড়ের দোকান থেকে ও শাড়ী কিনেছে.....। নতুন শাড়ী এসেছে।
একটু আগেই মিনু গুনগুন করতেছিলো ,চলেন মহাজনে যাই।মহাজন একটা ইন্ডিয়ান মহিলার হোম বুটিক। প্রায় ৪০ মিনিটের ড্রাইভ। ওর উৎসাহতে কেউ সাড়া দেইনি।
ফিউশন বুটিক নাকি আজ রাত ১১ টা পর্যন্ত খোলা। আর যায় কোথা.......।
সব হই হই।
রাত প্রায় দশটা।
রাশীক রাইয়ানকে বাসায় নামিয়ে দিলাম।
আমার বাসার কাছেই দোকানটা.........
তারপর সব মিলে শাড়ীর দোকানে.....।
শাড়ী এসেছে অনেক.....। কোন নাম জানি না। মন মত রং হলে যাই দেখি তাই ভালো লাগে। মিনু আমি আর আরিফা ২ সপ্তাহ আগে ঘুরে গেছিলাম।
তেমন কিছু পছন্দ হয় নি.....।
আজ যেনো কিনতেই হবে সবার।হাতে মেহেদীর রং,নতু শাড়ী চাই ই চাই।
রাশীকের বাবা আমাকে কটাদিন জ্বালাচ্ছে মাস ভরে রোজা করলা আর ঈদ এ শাড়ি কিনবা না......কথা দিয়েছি আজ ভালো লাগলে কিনবো।
নাহলে কাল মন্ট্রিয়লে যেতে হবে শাড়ী কিনতে....ওর ইচ্ছা।
শাড়ী আর কি কিনবো।
এ আসে ও আসে ,কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে গল্প।
নিজেদের হাহা হি হি।
এত ভালো লাগছিলো......
আমার খুব ভালো লাগলো রাজশাহী সিল্ক একটা.....
কিন্তু ঈদের শাড়ী অনেক ভালো হওয়া চাই...।কি আর করা..........
আমাদের কথার ফাঁকে রাশীকের বাবা এসে হাজির......
বাইরে মুন্না ভাই,মিঠুভাই,রহমান আর মনিরকে দেখে ও বুঝেছে আমরা এই দোকানের ভিতরে।
ওর পছন্দে কিনলাম আমার ঈদের শাড়ীটা.......রাত এগারটায় যখন বের হলাম দোকান থেকে সবার মধ্যে কেমন ঈদ ঈদ আনন্দ.......অনেকদিন এমন করে ঈদ এর কেনা কাটা হয়নি......আমাদের হই চই কথায় মনে হচ্ছিল আমরা দেশে গাওছিয়ায় শপিং করে বের হলাম।
আমাদের আনন্দ হৈ চৈ শাড়ীর জন্য না যতটুকু.....তার চেয়ে বেশী এমন মুখরিত সময়ের জন্য.........বহুদিন পর যা আমাদের ভরিয়ে দিলো।
(ঈদ যে কবে হবে।
ক্যালেন্ডার বলছে আজ নতুন চাঁদ ।সেই হিসাবে কাল ঈদ হবার কথা।
কোনদিন কি আসবে যখন সবাই একসাথে একটা দিনে ঈদ করা হবে?
শুনছি কাল ঈদ করবে অনেকে।আমরা যে কি করি!)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



