ঝড় নাকি বজ্রপাত, নাকি ঝুম বৃষ্টি হলে যেমন অনুভূতি হয়,তেমন কিছু!
সুর ছুঁয়ে যাচ্ছিল আমাকে। সুরের সাথে স্পর্শের এই খেলায় কি এক মুগ্ধ আবেশে ডুবে ছিলাম।
মাঝে মাঝে সঞ্চালিকা মৈত্রেয়ীর কথা। এত ভালোলাগা। এত ভালোলাগাকে কি বলে আমার জানা নেই। আসলেই, শুধু চুপ করে বসে থাকা।
কিছু সুরেলা সময় থাকে এমনি, আনন্দ-দুঃখ মাখানো। ভাবনাতেই এভাবে বেশ পাহাড়ে চলে যাওয়া যায়, ঘরে বসেই বৃষ্টিতে ভেজা যায় অথবা নাম না জানা কোন নদীর পারে কাঠের সাঁকোতে বসে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকা যায়।
এমন সময়ের কাছে চিরটাকাল নতজানু আমি! সৃষ্টিকর্তাকে বারবার স্মরণ করি কৃতজ্ঞ চিত্তে। ভাগ্যিস অনুভূতিশীল মানুষ হয়ে জন্মেছি।
ভালো কথা,গান,সুর,কবিতা শুনলে তাই কেমন যেনো হয়ে যাই। আমি যেনো আর আমি থাকি না।হয়ে যাই ইচ্ছামতী।
আমার একা থাকা সময়ে ,একা ভাসা সময়ে এত সুন্দর সুরের মূর্ছণায় ডুবে যেতে যেতে কেবলি মনে হয় জীবনটা কি সুন্দর। কি সুন্দর এই বেঁচে থাকা!
শুধু আমি একা না, আমার ঘরের সবুজ পাতার,লাল পাতার গাছগুলো ও মুগ্ধ হয় এই সুরের ধারায় আমি নিশ্চিত বলতে পারি! পাতার শিরায় জমা হতে থাকে শিশিরের মতন টুপ জল। আনন্দ না কি দুখের অশ্রুধারা? কে জানে! আমারও চোখ ভেসে যায়।
“বড় আশা করে এসেছিগো,কাছে ডেকে নাও” এই সুরের সাথে আমি পিছনে হাঁটতে হাঁটতে লালমনিরহাট এ চলে যাই। রেললাইনের ধারে আমাদের সাহেবপাড়ার সেই দোতলা বাসা। বাসার সামনে বিশাল বাগান আর বাগানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথ। ভাইজান এই পথে হাঁটতে হাঁটতে এই গানটা গাইতো। আমি পিছন পিছন হাঁটতাম। অনেকদিন পর যেনো ছোট্ট আমি সুরের সাথে ,গানের সাথে সেই পথে হাঁটলাম। আমার ভাই এর পিছু পিছু।
স্বর্গীয় অনুভূতি কাকে বলে জানিনা। আমাদের কারোই তা জানা নেই। তবু অদ্ভুত তরঙ্গের এই খেলা, অপার্থিব এই অনুভূতিকে কি স্বর্গীয় অনুভূতি বলে? নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হয়। ছোট্ট তারার হয়ে হারিয়ে যেতে থাকি এক আকাশ থেকে অন্য আকাশে।
মানুষের মন! কিযে অচীন স্রোতের টান এই মনের নদীতে।
কখনো উজানে,কখনো ভাটায়, বাতাসের সাথে মিলে মিশে ফিসফাস। এলোমেলো পথচলা। আলুথালু চুলে হেঁটে যাওয়া প্রেমিকার মতন। চোখ দুটো বন্ধ করে কি আবেশে ভেসে বেড়াই।মনে পড়ে রবী শংকর, আনন্দশংকরকে। তাঁরাই তো এভাবে বুঁদ হতে শিখিছেন।
জলতরঙ্গের খেলায় কখনো পাহাড়ে উঠি। কখনো কাশবনে হাঁটতে হাঁটতে হয়ে যাই মেঘবতী এক। সাদা শাড়ি ,সাদা ব্লাউজ,গলায় আকাশ নীল এর মালা।
সুরের ঝর্ণাধারায় মিশে একটা পেখমখোলা ময়ূর হয়ে যাই। আনন্দ সুর ঝংকারে ভাসতে ভাসতে হয়ে যাই আনন্দমতী। তখন পড়নে থাকে লাল রং শাড়ি।
আন্দামান দ্বীপে ঘুরতে চলে যাই। সমুদ্রের কিনারায় হাঁটতে হাঁটতে নিজেও গাইতে শুরু করি গান।
রবী ঠাকুরের গান।
তিনিই তো ভাসতে শিখিছেন ভেলার মতন,কখনোবা স্রোতে ভাসা পদ্মপাতার মতন।
উড়তে শিখিছেন পাখির মতন
আর শিখিয়েছেন মানুষ জন্মের অদ্ভুত বোধ গুলোকে কাগজের পাতা ভরে লিখতে।
“আঁধার থাকুক দিকে দিকে আকাশ অন্ধ করা তোমার পরশ থাকুক আমার হৃদয় ভরা”
.............................এই গানের ছোঁয়া পেলে আমি কেমন অন্যরকম আমি হয়ে যাই।ভালোবাসতে শিখি নতুনের পর নতুন করে।
“মাঝে মাঝে তব দেখা পাই ,চিরদিন কেনো পাইনা”
অদ্ভুত এই গানটা শুনলে আমার কেবলি ইচ্ছা করে বৃষ্টি হয়ে ঝরতে। ভালোবাসার নিটোল বোধে একাকার হয়ে যেতে থাকি আমি। সুরে,তালে,লয়ে ,গানে আমি মিশে যেতে থাকি,নিজেকে মনে হয়ে একটা বর্ণালী পাতা।
খুব ইচ্ছা করে পাতার পর পাতা জুড়ে নিজের ভিতরের আশ্চর্য্য অনুভুতি গুলোকে সাজিয়ে লিখি। লিখি প্রিয় মানুষের কথা, যে আমার লেখার ইচ্ছাতে সাজিয়ে রাখে বাহারী সব খাতা, নীল রং কালির কলম!
লিখতে ইচ্ছা করে তাদের কথা ,যাদের কাউকে কাউকে আমি কখনো দেখিনি, অথচ যারা আমাকে কবিতা লিখার জন্য নিরন্তর প্রেরণা যোগায়। সুরের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমার খুব ইচ্ছা করে অনেকদিন বাঁচি। একশো নাকি দুইশো বছর !
বেঁচে থাকার জন্য আজ একশো বছরও কম মনে হয় আমার!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



