somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিকন্যা

০৫ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা থাকি ঢাকায়। সুযোগ পেলেই ছুটে যাই গ্রামের বাড়ি। নরসিংদী জেলার ছোট্ট সুন্দর একটা গ্রাম আমাদের। এ গ্রামের মানুষগুলো আরও সুন্দর। কারও অভাব-অনটন নেই। সবাই সবার আতœীয়ের মত। যেখানে যাই সেখানেই আদর-আপ্যায়ন। গ্রামের বাড়ি গেলে আর ঢাকা ফিরে আসার কথা মনে থাকে না।
এ ছোট্ট সুন্দর গ্রামের একটা বড় কলংক আছে। গ্রামের মানুষের ভেতরে আছে কলংকের কষ্ট। বহু বছর ধরে এমনই এক কষ্টের মধ্যে পড়ে আছে গ্রামের প্রায় চার হাজার মানুষ। তারা এ কষ্ট ভুলতেও পারে নাÑমুছেও ফেলতে পারে না।
গ্রামের কলংক সেরুমোল্লা। ভয়ঙ্কর রাজাকার! তার অনেক অর্থ-সম্পদ আর মতা। সবাই তাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করে। কিন্তু তার কিছুই করতে পারে না।
‘১৯৭১। সারাদেশে চলছে ভয়ংকর যুদ্ধ। দেশের মাটি ও মানুষকে মুক্ত করার যুদ্ধ। তখন একদল মুক্তিযোদ্ধা এসে আমাদের গ্রামে আশ্রয় নেয়। তারা যে বাড়িটায় এসে উঠে সেটা ছিল মাটির ঘর। মাঠের মধ্যে আলাদা একটা নিরিবিলি বাড়ি। পরের দিন সকালে গ্রামের পাশের পথ দিয়ে পাকসেনাদের অন্য এলাকায় যাওয়ার কথা। পাকসেনাদের আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিয়ে শুয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধারা।
গভীর রাতে এই গ্রামের সেরুমোল্লা গোপনে পাকসেনাদের নিয়ে এসে হাজির হয় গ্রামে। সে মুক্তিবাহিনির অবস্থানটা দেখিয়ে দেয়। গুড়–ম গুড়–ম গুলির শব্দে থত্থর কেঁপে উঠে গ্রাম। পাকসেনারা ঘিরে ফেলে মুক্তিবাহিনির আশ্রয় নেওয়া বাড়িটা।
কিন্তু একটি মুক্তিযোদ্ধাও তারা মারতে পারেনি সেদিন। কারণ, রাতে পাকসেনাদের সাথে সেরুমোল্লাকে দেখতে পেয়ে এক মুদি দোকানদার দৌড়ে এসে আগেই খবরটা পৌঁছে দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। মুক্তিযোদ্ধারা সাথে সাথে এ বাড়ি থেকে অন্য জাগায় সরে গিয়েছিল।
গুলিতে বাড়িটা ঝাঁঝরা হয়ে যায়। পাকসেনারা বাড়িতে কাউকে না পেয়ে আগুন লাগিয়ে বাড়িটা পুড়ে ফেলে। পরে সেরুমোল্লার নেতৃত্বে পাকসেনারা বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে শুরু করে অমানষিক অত্যাচার নির্যাতন আর জ্বালাও-পোড়াও। সেরুমোল্লা পাকসেনাদের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কাকে ধরবে, কাকে মারবে, কার করবে সর্বনাশ। সেনারা সেরুমোল্লার নের্তৃত্বে সেই রাতে সারাগ্রামে অত্যাচার নির্যাতন ও লুটপাট করে। তারা হিংস্র হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে নারী ও শিশুদের ওপর। গোটা গ্রাম তছনছ করে তারা সেরুমোল্লার বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে চলে যায়।
তখন ভোর রাত। পাকসেনাদের যাওয়ার পথে ‘খালপাড়’ নামক স্থানে মুক্তিবাহিনি তাদের আক্রমণ করে। শুরু হয় মরণপণ লড়াই। প্রচন্ড গোলাগুলি। এ লড়াইয়ে নিহত হয় দুই পাকসৈন্য আর দুই জনকে ধরে ফেলে এলাকার লোকেরা। বাকিরা কোনোমতে দৌড়ে মেইনরোডে উঠে গাড়িতে করে পালিয়ে বাঁচে। গোলাগুলিতে গ্রামের এক নিরীহ তরুণ শহীদ হয়। সেদিন সেরুমোল্লাকে পাওয়া যায়নি।
এই সেরুমোল্লা পাকবাহিনির সাথে থেকে বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিবাহিনির অবস্থান বলে দেয় এবং বহু হত্যা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনে পাকসেনাদের সহযোগিতা করে।’
রাজাকার সেরুমোল্লার অত্যাচার-নির্যাতনের কাহিনি বলতে বলতে দাদু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। তাঁর চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। তারপর একটা লম্বাশ্বাস ফেলে আফছুছ করে বললেন, সেই কবে দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় শক্রু এই জানোয়ার সেরুমোল্লার বিচার হলো না। সে আমাদের সামনে ডাঁটে চলছে-ফিরছে। তার বিচার যদি না দেখে যেতে পারি তাহলে মরেও শান্তি পাব না। আমরা এত বড় একটা কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি।’
এ ভয়াবহ ঘটনা ও দাদুর কষ্টের কথা শুনতে শুনতে আমার গায়ের লোমগুলো কাঁটার মত দাঁড়িয়ে গেল। আমি ফুঁসে উঠলাম। আমার রক্ত টগবগ করছে। আমার অজান্তে আমার ভেতরে এক ভয়ংকর মুক্তিযোদ্ধার জন্ম হয়ে গেল! দেখতে দেখতে বেলুনের মত ফুলেফেঁপে উঠছি আমি। চোখের পলকে আমি ইয়া বড় এক ভয়ংকর দানবের মত হয়ে গেছি। আমি কয়েকটা লাফে গ্রামের ঠিক মাঝখানে গিয়ে একটি খোলা মাঠে দাঁড়ালাম। বহুদূর থেকে দেখা যাচ্ছে আমাকে। গ্রামভেঙে লোক ছুটে এসেছে। আমি রাগে-ােভে কটমট করছি। আমার চোখ থেকে আগুন বেরিয়ে আসছে! প্রচন্ড শক্তি আমার!
সারাগ্রামের মানুষ এসে আমার সামনে হাঁটুগেড়ে বসে আছে।
একজন দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, আমরা জীবনে এমন ভয়ংকর প্রাণী দেখিনি। কে তুমি? দৈত্য-দানব না অন্যকিছু? কি তোমার নাম-পরিচয়?
আমি দানবের দানব, আমি ভয়ংকর মুক্তিযোদ্ধা! আমার নাম মুক্তিকন্যা ২০১০।
মুক্তিকন্যা! তুমি কি আমাদের কলংকের কষ্ট হতে মুক্তি দিতে পারবে?
আমি ধমক দিয়ে বললাম, কীসের কলংক? কীসের কষ্ট? তোরা কীসের মুক্তি চাস? বল।
সাথে সাথে সবাই চেঁচিয়ে বলল, আমরা কলংক থেকে মুক্তি চাই। ভয়ংকর রাজাকার সেরুমোল্লা -এ গ্রামের কলংক। তুমি আমাদের এ কলংকের কষ্ট হতে মুক্তি দাও।
আমি হুংকার ছাড়লাম। কেঁপে উঠল গ্রাম। হুংকারের সাথে আমার নাক-মুখ-চোখ থেকে আগুন ঠিকরে পড়ছে। আমি প্রচন্ড আক্রোশে খপ্ করে চেপে ধরলাম সেরুমোল্লার টুটি। তাকে হ্যাঁচকা টানে উপরে তুলে ধরলাম। সে ব্যঙের মত হাত-পা ছুড়ে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছে কিন্তু তাকে বাঁচানোর জন্য কেউ এগিয়ে এল না। সবাই ঘৃণার থুতু ছুড়ে মারছে রাজাকার সেরুমোল্লার গায়ে। অতঃপর তাকে ছুড়ে ফেলে দিলাম জনসমুদ্রে। হাজার হাজার মানুষের পদতলে মুহূর্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল গ্রামের কলংক!


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×