somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট আপুর বিয়ে

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল! বাড়ি ভর্তি মানুষ, বাড়ি ভর্তি আনন্দ।
আমার মাথায় বাড়ি! ঠিক যেদিন আমার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, তার তিন দিন আগে ছোট আপুর বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেল।
খুব কান্না পাচ্ছে আমার। ছোট আপুর বিয়ের আনন্দ-ফুর্তি করব, না দরজা বন্ধ করে পড়াশোনা করব, নাকি কান্না শুরু করে দিব, কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। সামনে আমার পরীক্ষা! এখন কী করি!
না, কোনোটাই করতে ভালো লাগছে না আমার। মহাচিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। একদিকে ছোট আপুর বিয়ের আনন্দ আরেক দিকে আমার পরীক্ষার টেনশান।

বাড়িতে ছোট-বড় সবাই হাসি হাসি মুখে কথা বলছে-কাজ করছে, শিশুরা আনন্দে ছুটোছুটি করছে, আর আমি? টেবিলে একগাদা বই নিয়ে বসে আছি। কিছুই ঢুকছে না মাথায়। বসে ভাবছি আর মাথার চুল টানছি। কী করব আমি?

চট করে আমার মাথায় একটা চমৎকার বুদ্ধি এসে গেল! আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম।
আমি তো হবু দুলাভাইয়ের বরাবর একটা এ্যাপ্লিকেশন লিখতে পারি!
কোনো কথা নেই, একটা লম্বা তা নিয়ে ঝটপট বসে পড়লাম এ্যাপ্লিকেশন লিখতে। একচোটে লিখে ফেললাম এ্যাপ্লিকেশনটা। লিখেই আমার এক ছোট ভাইকে দিয়ে হাতেহাতে পাঠিয়ে দিলাম। সে গিয়ে হবু দুলাভাইয়ের হাতে এ্যাপ্লিকেশনটা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
হবু দুলাভাই মুচকি হাসি দিয়ে এ্যাপ্লিকেশনটা খুলে পড়তে লাগলেন...

‘মাননীয় হবু দুলাভাই
বিষয়ঃ বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন।

জনাব,
আপনি জেনে অনেক খুশি হবেন যে, আমি একটা নামকরা স্কুলে পড়ি। আমি এখন পরীক্ষার পড়া নিয়ে খুবই ব্যস্ত আছি। এখন ডান-বাও তাকাবার সময় আমার নেই। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আমার পরীক্ষার মাত্র ৩ দিন আগে আপনার সাথে আমার ছোট আপুর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। বাড়িতে অনুষ্ঠানের বিরাট আয়োজন চলছে। আর এ জন্য বাড়িতে প্রতিবেশী ও আত্নীয়-স্বজনদের আসা-যাওয়ার ধুম পড়ে গেছে। এর সাথে যোগ হয়েছে শিশুদের বোমা-বাজির অত্যাচার। সারাক্ষণ হই চই করছে, ঠুস-ঠাস করে বোমা ফাটাচ্ছে তারা। এদের বাধা দিবে কে? যারা বাধা দিবেন, বিয়ের আনন্দে তাঁদের মুখের হাসিটা কান পর্যন্ত লম্বা হয়ে আছে। সব মিলে আমার লেখাপড়ার বারোটা বাজছে। অথচ এখন আমার দু‘চোখ বন্ধ করে লেখাপড়া করার কথা। আমি এখন না পারছি ওদের সাথে গিয়ে আনন্দ করতে, না পারছি পড়ায় মন দিতে। একবার ভাবুন তো কেমন একটা সমস্যার মধ্যে ডুবে আছি আমি!

অথচ ছোট আপুর বিয়েতে আমারই সবচেয়ে বেশি আনন্দ-ফুর্তি করার কথা।
জানেন, আমি আগে থেকেই মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম, আপুর বিয়েতে আমি হবো ভয়ংকর গেটম্যান। আমি বরযাত্রীদের আটকে দেবো গেটে। আর গেটপাশ? মাত্র ১০ হাজার টাকা। এ টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত একপায়ে দাঁড় করিয়ে রাখব, আমি কারও অনুরোধ শুনব না-গেটপাসও দেব না। এর জন্য যত চোপা আর ঝগড়া করতে হয় সবই করব আমি। আর এ জন্য আমার দারুন প্রিপারেশনও ছিল। এসব আমি বড়দের কাছ থেকে শিখে নিয়েছিলাম। গেটপাসের টাকার জন্য কিভাবে তর্ক করতে হয়, কিভাবে বরযাত্রীদের প্রশ্নের জবাব দিতে হয় এবং তাঁদের আটকিয়ে রেখে হাসিমুখে গেটপাসের টাকাটা আদায় করে নিতে হয়-এসবই মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম আমি।

আরো কি করতাম জানেন? খাবার পর শুরু হতো দুলাভাইয়ের হাত ধোয়ানির পালা। হেভী উপহার না পাওয়া পর্যন্ত এক ফোঁটা পানি ঢালতাম না হাতে। এমনকি সাবান, পানি আর তোয়ালের ছোঁয়াও লাগাতাম না। শুধু কি তাই? আমি দুলাভাইয়ের এমনই সেবা-যত্ন করতাম যে তিনি আনন্দে বন্ধুদের কাছে বড় মুখে বলতেন, আহারে! শালি একটা আমার। তার সেবার কোনো তুলনাই হয় না!

প্রথম সেবাটা দিতাম টয়লেটওয়াটার দিয়ে। কখন দুলাভাইয়ের টয়লেট পায় আমি সেই অপক্ষায় বদনা হাতে ওঁৎ পেতে বসে থাকতাম। টয়লেট পাওয়ামাত্র আমি বদনা ভরে পানি দিতাম আর সে পানিতে গুলিয়ে দিতাম লালমরিচের গুঁড়ো। আহা! পানিটা খলখল করে খরচ করার পর শুরু হয়ে যেতো এ্যাকশান। আহাহা! তখন মন ভরে দেখতাম দুলাভাইয়ের টয়লেটডেন্স। কি যে মজা হতো না তখন! অথচ পরীক্ষার আগে বিয়েটা হলে আমার সব পরিকল্পনা, সব আনন্দ মাটি হয়ে যাবে। দরজা-জানালা বন্ধ করে কান্নাকাটি করা ছাড়া আমার আর কিছুই করার থাকবে না। আপনি কি বুঝতে পারছেন, কত বড় কষ্ট আমার!
এখন আপনিই আমাকে এ কষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারেন।
অতএব,
আমার সমস্যা আর কষ্টের কথা বিবেচনা করে ছোট আপুর বিয়ের তারিখটা পিছিয়ে দিন, প্লিজ।

আপনার হবু...

সুমাইয়া!’


আনন্দের খবর হলো, হবু দুলাভাই আমার আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন!


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩৩
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×