রক্তদান নিয়ে সামান্য সময়ে ছোট্ট একটু চেষ্টা করলামঃ
সবাই মতামত দিলে এটা নিয়ে একটা স্বল্পদৈর্ঘ চলচিত্র বানাব
।
।
প্রিন্স বাসা থেকে বেরিয়েছে সকাল সকাল।
আসার সময় তার মা বারবার বলে দিয়েছে যেন দুইটার আগেই বাসায় চলে আসে, প্রিন্স কে নিয়ে তার মা একটু মামার বাসায় যাবে।
ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথেই একটি রক্তদান ক্যাম্প এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, ফ্রি তে নিজের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করিয়ে নিলো।
- ভাইয়া, আপনার রক্তের গ্রুপটা কিন্তু খুব দুর্লভ, একটু সাবধানে থাকবেন কিন্তু।
-অবশ্যই, জানের মায়া তো আছেই।
- আমাদের কখনো রক্তের দরকার হলে আপনি কি দিবেন ভাইয়া ?
-কি যে বলেন না আপনি ? রক্ত তো তিনমাস পরপর ই দেয়া যায়, আর এতে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবো, দিবো না কেন ?
-আচ্ছা ভাইয়া, আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো, ভালো থাকবেন, আল্লাহ্ হাফেয।
ক্যাম্পটা পার করেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল প্রিন্স,
-শালারা রক্ত নেওয়ার জন্য মশার মতো উইঠা পইড়া লাগে, যেন রক্ত তাগো লাইগা বানাই
grumpy ইমোটিকন
নিজের মনেই খেদোক্তি করলো সে।
ক্যাম্পাসে এসেই প্রিয়ার সাথে দেখা।
প্রিয়া ওর মনের মানুষ, মেয়েটা বন্ধুত্বের চোখে দেখলেও প্রিন্স কিছুটা বেশিই।
-ওই হাবলা, চল আজকে কোথাও ঘুরে আসি, কেমন যেন দম বন্ধ লাগতেছে আজকে।
প্রিয়ার কথায় যেন প্রিন্স আকাশের চাঁদ হাতে পেলো, বন্ধুত্বের পর এই প্রথম প্রিয়া একা ঘুরতে যাওয়ার কথা বলল।
রমনা পার্কে দুজন বসে বাদাম চিবুচ্ছে।
সাহস করে প্রিন্স কিছু বলেনা বন্ধুত্বটা ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়েই, কিন্তু কথা যেন থামতেছেই না দুজনের কারো।
হঠাৎ বিদঘুটে শব্দ করে ফোন বাজায় বিঘ্ন ঘটলো এই খুনসুটির।
-ভাইয়া, কিছুখন আগে আপনি রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলেন, আপনার রক্তের খুব দরকার আধা ঘণ্টার মধ্যে, আপনি দয়া করে এখুনি চলে আসুন।
-কিডা কইচ্চেন বাইজান ? বুল লাম্বারে ফুন কইরছুন নি ?
এই কথা বলে ফোন কেটে দিলো প্রিন্স।
এ নিয়ে সে কি হাসাহাসি দুজনের।
শালাদের একটা খোঁচা দেয়া হইছে রক্ত নিয়া ব্যাবসা করবে, আবার তাদের ফোন আশা মাত্রই যেন সুপারম্যান হয়ে যেতে হবে। ****পুত সব, নিজের মনে গালি না দিয়ে আর পারল না প্রিন্স।
এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়েছে, হঠাৎই মনে পড়লো মায়ের কথা, তাকে নিয়ে মামার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল আজকে।
আজকে নিশ্চিত মায়ের সামনে গেলে আর রক্ষা নাই, কি কি বলে সামাল দেয়া যায় সেটা ভাবতে ভাবতে মায়ের নাম্বারে ফোন দিলো প্রিন্স।
কিন্তু নাম্বার বন্ধ।
হয়তো মেজাজ খারাপ করে ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
অবশ্য নিজের ফোনই বন্ধ রেখেছিলো সে তখনই, যেন অবাঞ্ছিত ফোনকল ওর আর প্রিয়ার মাঝখানে ভিলেন হয়ে না আসে।
মনের ভিতর বিভিন্ন অজুহাত সাজিয়ে বাসায় ঢুকতে যাবে, ঠিক সেই মুহূর্তে বাবার ফোন।
-প্রিন্স, বাবারে, তোর মা আর নাই রে বাবা।
বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মানুষটি, মাথায় দশমনি পাথরসম প্রিন্স কোন মতে হাসপাতালে উপস্থিত হলো।
ওর মায়ের পাশেই বসে আছে ক্যাম্পের সেই ভলান্টিয়ার।
কোন দিকে না তাকিয়ে মায়ের দিকে এগিয়ে গেলো প্রিন্স।
-সিএনজি দুর্ঘটনা হয়েছিলো। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন, সেই সাথে রক্তের খুব দরকার ছিলো, কিন্তু সেটা আমরা পাইনি। খুবই দুর্লভ গ্রুপ ছিলো, দুঃখিত।
ডাক্তারের কথাগুলো যেন খুব দূর থেকে ভেসে আসছে প্রিন্সের কানে।
আর দাড়িয়ে থাকতে পারলো না প্রিন্স, ধুপ করে মায়ের পাশেই লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।
।
।
।
-মাআআআআআআআআআআ
ভয়ানক এক চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো মা।
-মা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা।
মা মুচকি হেসে প্রিন্সের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
দুনিয়ার সেরা একটা দৃশ্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮