মালয়শিয়ার স্মৃতি... [পর্ব-২] এখানে
রবিবার, আরেকটা ছুটির দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়েশ করে বুফে নাস্তা সারলাম। আসলে এই ধরনের নাস্তা অন্তত ১ ঘন্টা সময় নিয়ে না করলে যারা এত আয়োজন করেছে তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয় না।

যাইহোক, আজকের প্ল্যান কুয়ালালামপুর বার্ড পার্ক, বাটার ফ্লাই পার্ক, ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কয়ার এবং KL এ বিচ্ছিন্ন ঘোরাঘুরি করা। প্রথমেই চলে গেলাম KL বার্ড পার্কে। খুবই ভাল লাগল। KL এর প্রাণ কেন্দ্রে দুর্দান্ত একটা বার্ড পার্ক করেছে। বড় পাখি গুলো সব খোলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুরো পার্কটাই একটা বড় জাল দিয়ে ঢাকা, তাই পাখিগুলো ছাড়া থেকেও আসলে বন্দি। বিশাল এক ময়ূর ঘোরাঘুরি করছে আর আমাদের দেখছে, ওর কত কাছে আমরা যাই হয়ত সেই হিসেব নিকেশ করছে।

বেশী কাছে যাওয়াতে একটু দূরে সরে গেল। তবে যেই মাশাল্লাহ সাইজ ওর, মনে হল ঠোকর দিলে আমার খবর আছে।


এই বেচারার ছবি তুলতে গেলেই খালি কাছে চলে আসে, আমি আবার দূরে সরে যাই, কারণ আদর কইরা যদি আবার চোখে একটা ঠোকর দিয়ে দেয় তাইলে তো বাপের কালের চোখটা গেল...।





এরা হইল প্রফেশনাল মডেল, পয়সা দেন, ছবি তুইলা বিদায় হন...


বার্ড পার্কের প্রবেশ ফি ছিল ৪০ রিঙ্গিত (২০০৬ এর আপডেট, একটু বেশিই, কি বলেন??


প্রজাপতি আমার হাতে...

এরপর হাটতে হাটতে চলে গেলাম মালয়শিয়ার জাতীয় মসজিদে। নামাজ পড়লাম।

মালয়শিয়ার জাতীয় মসজিদ

মহিলারা নামায পড়ছেন
দুপুরে খেয়ে দেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কয়ারে চলে এলাম। জায়গাটা বেশ সুন্দর। বিশাল একটা মাঠ আছে। জাদুঘর টাইপেরও কিছু আছে সেখানে।

কয়েক দিন পরই মালয়শিয়ায় F1 racing হওয়ার কথা ছিল। তাই সেখানে আবার রেসিং কার এর প্রদর্শনী চলছে। ছবি তুললাম সেইসব গাড়ীর সাথে।

এর পর হাটা শুরু করলাম ওদের সংসদ ভবনের দিকে। পথে একটা মনুমেন্ট পড়ল, বন্ধ ছিল তাই ভেতরে ঢুকতে পারিনি, বাইরে থেকেই ছবি নিলাম।

আর একটু এগিয়েই ওদের সংসদ ভবন। দেখে হতাশ হলাম। বড়ই সাদামাটা একটা বহুতল ভবন। বুঝলাম না, ওদের দেশে এত সুন্দর নকশার ভবন, কিন্তু জাতীয় সংসদের এই অবস্থা কেন??

সত্যি কথা কি, বাংলাদেশের সংসদ ভবন দেখার পর হয় আর কোন দেশের সংসদ ভবনই ভাল লাগবে না... আমাদের এই একটি জিনিসই খুবই সুন্দর, যদিও ওর ভেতরে যাদের যাতায়াত তারা কতটুকু সুন্দর সেটা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে...

এর মধ্যে একদিন রাতে টুইন টাওয়ারেও গিয়েছিলাম। কিছু ছবি শেয়ার করলাম।


Suria KLCC এর পেছনের পার্কে ফোয়ারা...
ট্রেনিং শেষ হল। এরিকসন মালয়শিয়ার এত ঝাক্কাস একটা অফিস ছেড়ে আসতে কষ্টই হচ্ছিল। কিছু ছবি শেয়ার করলাম।



আমি রাতে বাইরে থেকে ফেরার পর প্রায়ই সানওয়ে শপিং মলে দাঁড়িয়ে আইস স্কেটিং দেখতাম। হোটেলে শেষ দিনে আবার গিয়ে দাড়ালাম।


অনেকের পারফরমেন্স দেখেই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ছবিতে যেই কিউট কিশোরীটিকে দেখতে পাচ্ছেন, সে ছিল সেদিন আমার দেখা বেস্ট পারফরমার। অসাধারণ দেহ শৈলী প্রদর্শন করছিল সে। আমি বিভোর হয়ে ওর স্কেটিং উপভোগ করছিলাম। ছবি তোলাটা বেশ কষ্ট সাধ্য ছিল, কারণ সে চলমান ছিল। জুম করে অনেক কসরত করে ওকে এক পর্যায়ে ক্যামেরা বন্দী করলাম।

রাতের বাসের টিকেট কাটা ছিল। পুডুরায়া বাস স্টেশন থেকে রওনা হবে। গন্তব্য পেনাং, সেখানে একদিন থেকে স্বপ্নের দ্বীপ লাংকাউই। বাসগুলো বেশ বিলাসবহুল, স্ক্যানিয়া বাস, প্রতি সারিতে ৩ টা করে আসন, তাই বেশ সুপরিসর। এ প্রসংগে বলে নেই, আমারদের সাথে এরিকসন বাংলাদেশ থেকে দুই ভাইয়াও ট্রেনিং এ ছিলেন। এবার আমরা পাচ জন মিলেই রওনা হয়েছি। রাত সাড়ে বারটার দিকে বাস ছাড়ল। বাসে বসেই টের পাচ্ছিলাম, সেই রকম টানে বাস চলছে, রাস্তা খুবই ভাল। ফলাফলে চার ঘন্টার মাথায় পেনাং পৌছে গেলাম। তখনো চারিদিকে আধার, সুতরাং বাস স্ট্যান্ডে বসার আসনেই ব্যাগের উপর মাথা রেখে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। আলো ফুটলে বের হয়ে বাসে করে শহরে চলে এলাম। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এক হোটেলে নাস্তা করলাম পরটা আর ডিম ভাজি দিয়ে। ভিন দেশে এরকম মেনু পেয়ে আমরা যারপরনাই খুশি।


রাতের পেনাং
রাত পোহালেই আমরা লাংকাউইর উদ্দেশ্যে রওনা করব। আচ্ছা আমার মনে হয় সেই গল্প শেষ পর্বেই বলি, আপনারা কি বলেন???

মালয়শিয়ার স্মৃতি (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৯