somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাগড়াছড়িতে কয়েক দিন...

০৪ ঠা জুন, ২০১১ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ভায়রা মেজর সাহেব। খাগড়াছড়িতে মাটিরাংগা জোন হেড কোয়ার্টারের সেকন্ড ইন কমান্ড, কয়েক মাস থাকবেন তারপর চলে যাবেন পাকিস্তানে প্রায় এক বছরের জন্য প্রশিক্ষণে। ভাবলাম এই সুযোগটা নিয়ে নেই, খাগড়াছড়িতে ছোট্ট একটা ট্যুর দিয়ে আসি। :)

৩০ শে মার্চ রাতে এস আলম পরিবহণে রওনা হয়ে গেলাম, সকাল সকাল পৌছে গেলাম। কোয়ার্টারটি টিলার ওপরে বেশ সুন্দর করে সাজানো, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে লিজ নিয়ে তৈরী। এক পাশে উচু জায়গায় গোল ঘর, ওখান থেকে আশে পাশের সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়।



ওদের কোয়ার্টারে স্ট্রবেরি চাষ হয়। ভায়রা কিছুদিন আগে এক সৈনিকের হাতে এক প্যাকেট স্ট্রবেরি দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, আমার খেতে বেশ লেগেছিল। তাই মোবাইলে আগেই বলে রেখেছিলাম যেন নাস্তায় আমার জন্য কিছু স্ট্রবেরি রাখা হয়। ভিআইপি কামরায় জায়গা হল। বেশ ভাল। ফ্রেশ হয়ে আমি আর ভায়রা খিচুড়ী আর গরুর গোশত দিয়ে নাস্তা সারলাম। এরপর রুমে এসে আয়েশ করে তাজা স্ট্রবেরি ভোজন। একটা ফাইভ স্টার অনুভূতি নিয়ে দিলাম এক ঘুম। B-)


স্ট্রবেরি গাছ

বৃহস্পতিবার অফিস খোলা থাকাতে সেদিন আর কোথাও যাইনি। কোয়ার্টারের লাইফ খুবই শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সুবিন্যস্ত। খাওয়া-দাওয়ায় কোন সমস্যা নেই। যা খেতে চাইবেন তাই মিলবে, পাচকের রান্নার হাত খুবই ভাল। ডাইনিং রুমের সাথেই লাগোয়া টিভি রুম, ৪০ ইঞ্চি সনি ব্রাভিয়া, সাথে ক্যারাওকে সিস্টেম। অফিসাররা সন্ধ্যার পরে খাওয়ার আগে একটু গলা সেধে নেয়, পাহাড়ী জীবনে এক ঘেয়েমি কাটিয়ে একটু ভাল থাকার সব ব্যবস্থাই করা আছে। সন্ধ্যার পরে গোল ঘরে বসে উদাস নয়নে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকারও একটা অন্য রকম মজা আছে, সেটা ওখানে বসেই বুঝেছিলাম...:)

এদিকে আমার শ্যালক ল্যাফটেন্যান্ট সাহেবেরও ছুটি হয়েছিল, ওকে বললাম কুমিল্লা থেকে চলে আস, খাগড়াছড়ি ঘুরে দুজনে এক সাথেই ঢাকা ফিরব। শুক্রবারে ভোরে এসে পৌছাল ও, সাথে কুমিল্লার মাতৃভান্ডারের রসমালাই ! পরটা, ডিম ভাজি আর সাথে কুমিল্লার রস মালাই - একটা টপ ক্লাস নাস্তা সারলাম। দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম খাগড়াছড়ি দর্শনে।:D

প্রথমেই চলে গেলাম আলুটিলা। ওখান থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহর দেখা যায়। আর মূল দর্শনীয় জিনিস হল একটা সুড়ংগ। সুড়ংগে অন্ধকার, তাই মশাল হাতে নিয়ে যেতে হবে। বাইরেই মশাল বিক্রি চলছে। ছোট্ট একটা বাশের ডগায় কিছু কাপড় গুজে সেটা কেরোসিনে চুবিয়ে দিল। সাথে একটা দেয়াশলাই। জিনিস পত্র নিয়ে সুড়ংগে প্রবেশ করলাম, আমি, আমার ভায়রা, শালা আর কয়েক জন সৈনিক। মশাল জাললাম, কিন্তু সে এমন এক মশাল, নিজের পা ও ঠিক মত দেখা যায় না।/:) নীচে পানি, পাথুরে উচু নীচু মেঝে, না দেখে পা ফেললে কাদা পানিতে একাকার হবার জোর সম্ভাবনা। ভাগ্যিস সৈনিকদের কাছে টর্চ লাইট ছিল, সেটার আলোয় মাথা ও গা বাচিয়ে সুড়ংগ পার হলাম। বাইরে এসে দেখি এক মাঝ বয়সি ভদ্রলোক, সম্ভবত সরকারী চাকুরে, তার মাঝ বয়সী স্ত্রীকে নিয়ে সুড়ংগে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সংগে নিচ্ছেন সেই বিখ্যাত মশাল ! বললাম, ভাই এই জিনিসে কিছুই হবে না। মশাল বিক্রেতা জোর গলায় আবার সেই মশালের সাফাই গাইছেন। কি আর করা, আমরা ওই আংকেল আন্টির আসন্ন দূরবস্থার কথা চিন্তা করে হাসতে হাসতে পরবর্তী গন্তব্যে রিসাং ঝর্ণার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম।:P:P


আলুটিলার সুড়ংগমুখে অভিযাত্রীগন...

সত্যি কথা বলতে রিসাং ঝর্ণা আমার বেশ লেগেছে, ভরা বর্ষায় এটা আরো আকর্ষনীয় হবে বলার অপেক্ষা রাখেনা। রিসাং ঝর্ণা যাবার পথে প্রায় এক কি.মি. আগেই আমাদের গাড়ী বহরকে থেমে যেতে হয়েছিল, কারণ এক উপজাতির ঘর ভেংগে রাস্তার উপর পড়ে আছে। গাড়ী নিয়ে আর যাওয়া যাবে না। বেলা তখন ১১ টার উপরে, গরম আর আর্দ্রতা ভালই কষ্ট দিচ্ছে, এর মধ্যেই হাটা শুরু করলাম। আমার ভায়রা বললেন, আপনারা যান, আমার খায়েশ নাই এখন যাওয়ার।:P প্রথমেই খাড়াভাবে রাস্তাটা নেমে যায়। মনে মনে ভাবলাম উঠতে খবর হবে ! /:) ঝর্ণায় গিয়ে পানির সরু ধারা দেখে একটু হতাশ হলাম।/:) কিন্তু ঝর্ণার একটা বিশেষত্ব হল, যেখানে পানি পড়ে সেখান থেকে একটা পাথুরে ঢাল নীচে নেমে গেছে, পিচ্ছিল হওয়াতে সেটা একটা প্রাকৃতিক "“রাইড"” হয়ে গেছে, উপজাতি ছেলে মেয়েরা উপর থেকে দল বেধে নীচে পানিতে পড়ছে। দেখে খুব ভাল লাগল।:) কিন্তু, আমি আর আমার শালা দুজন সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়াতে ঝর্ণার পানিতে ভেজার ইচ্ছেটা আড়ষ্ঠতাকে কাটিয়ে উঠতে পারল না ! :|তারপরে সাথে কিছু সৈনিক থাকাতে আমার শালা বাবু’র পক্ষে পানিতে নামাটা আরো অসম্ভব হয়ে উঠল ! /:)




রিসাং ঝর্ণা...

যাইহোক, ফেরার পথে টের পেলাম কত ধানে কত চাল। খাড়া পাহাড় বেয়ে ওই তপ্ত রোদে উঠতে জান বেরিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু মুখে প্রকাশ পেতে দিচ্ছিলাম না। শেষ ঢালটা উঠেই বসে পড়লাম, কিছুক্ষণ বিশ্রাম না নিলে যে মারা পড়ি !! দেখলাম, বগুড়া থেকে এক পরিবার এসেছে ঝর্ণা দেখতে, সাথে এক বৃদ্ধা, বেশ কয়েকটি শিশু ! ওদের বললাম, "“ওঠার সময় খবর হবে !!"” একজন বলে উঠল, "এত দূর থেকে এসেছি, দেখেতো যেতেই হবে !!" হক কথা !! ফেরার সময় গাড়ীতে আমি আর আমার শালা ওদের ফেরার সময়কার অবস্থা চিন্তা করে আরেক প্রস্থ হাস্যরসে মেতে উঠলাম... B-)B-)

দুপুরে খেয়ে দেয়ে আমরা তিন জন আমার ভায়রার নিজস্ব গাড়ীতে করে রওনা হলাম, পানছড়ি নামক এক স্থানে নাকি এক বৌদ্ধ মন্দির আছে, যেখানে অনেক উচু একটা বৌদ্ধ মূর্তি আছে, সেটা দেখব বলে। আমার ভায়রা ওই দিকটায় যায় নি। উনি খুব আশা করে বের হলেন যে সেইরকম পাহাড়ী পথ বেয়ে আমরা যাব, প্রায় ২৫ কি.মি. পথ ! কিন্তু, ওমা, একি ! এ যে পুরো সমতল রাস্তা ! আশে পাশে পাহাড়ের কোন নাম গন্ধ নেই ! চরম হতাশ হয়েই এগুতে থাকলাম, রাস্তার অবস্থাও খারাপ ! ছ্যাচা খেতে খেতে আর একটু পর পর ব্রেক কষতে কষতে আমার ভায়রার মেজাজ তখন চরম খারাপ !X( এক পর্যায়ে অধৈর্য্য হয়ে গন্তব্যের খুব কাছ থেকেই গাড়ী ঘোরালাম। মনে মনে বললাম, এত দূর যখন এসেই পড়েছি আর একটু গেলে কি হয় !! কিন্তু সেটা আর মুখে আনার সাহস হল না .../:)

পরের দিন ঢাকায় ফিরব... রাতে খাবারের আগে ক্যারাওকে তে গান ধরলাম, আমি একাই... দিলরুবার “"ভ্রমর কইও গিয়া”", তপুর "“নুপুর ২"” এরকম আরো কিছু জনপ্রিয় গান !! সেই রকম অনুভূতি !:) পরে টের পেলাম, লাগামহীন চিৎকারের কারণে গলাটা কেমন যেন ভাঙ্গা ভাঙ্গা লাগছে...:P পরে ভায়রার সাথেও দ্বৈত কন্ঠে দুয়েকটা গান হল।:) খাওয়ার পর দূরের এক ক্যাম্প থেকে আসা এক তরুণ অফিসারের সাথে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা হল, শুনলাম তাদের অনেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা... বছর খানেক আগে একজন প্রাক্তন আর্মি অফিসারের লেখা দুটো গল্পের বই পড়েছিলাম, “"পাহাড়ী ফুল”" আর "“ও পাহাড়ী মেয়ে গো”"... তরুণ অফিসারের সাথে গল্প করতে করতে বার বার যেন সেই বইগুলোর কাহিনীকেই ওর জীবনে মেলাতে চাইছিলাম...
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:২৭
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×