somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রীমংগল চা বাগানে...

১৮ ই জুন, ২০১১ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্রেডিটটা হাবিব ভাইকেই দিতে হবে, কারণ উনিই বিগ বসকে রাজি করিয়েছেন। অফিসের পিকনিকে এই আশে পাশে কোথাও যাওয়া আর ভাল লাগছিল না, তাই পিকনিক এবং ওয়ার্কশপের বাজেট এক করে যখন শ্রীমংগল টি রিসোর্ট এ যাওয়ার ফয়সালা হল তখন সবাই যারপরনাই খুশী! :D আমার জন্য ব্যাপারটা আরো স্পেশাল, কারণ আমি কখনো ওই দিকটায় যাই নি। এর আগে দু’বার সিলেটের উপর দিয়ে যাওয়া হয়েছে; একবার জাফলং আর একবার মেঘালয়, কিন্তু সিলেট/মৌলভীবাজার কখনো ঘোরা হয় নি। :|

২৬ মে ২০১১ সকালে রওনা হয়ে গেলাম। দুপুর একটা দেড়টার মধ্যেই গন্তব্যে পৌছে গেলাম। আশা করেছিলাম বৃষ্টি পাব, কিন্তু শুনলাম, এর আগে টানা চার দিন বৃষ্টি হলেও এখন খটখটা রৌদ্র, সাথে বিশ্রী আর্দ্রতা ! দুয়ে মিলে কোন ভাবেই বেড়ানোর জন্য উপযুক্ত কোন সময় নয়। কিন্তু কি আর করা, এসে যখন পড়েছিই তখন ষোল আনাই উপভোগ করতে চাই। :)

দুপুরের খাবার খেয়েই আমাদের কিছু সহকর্মী পুলে নেমে পড়লেন ওয়াটার পোলো খেলতে। কিন্তু গরম আর রাতে একটু কম ঘুম হওয়াতে মাথাটা ঝিম মেরে ছিল, তাই নামতে ইচ্ছে করল না, বরং বল বয় হিসেবে কাজ করতে লাগলাম।:)



বিকেলে আমাদের কর্মসূচি চা বাগান দর্শন। আমাদেরই এক সহকর্মীর ভগ্নিপতি ইস্পাহানির জারিন চা বাগানের ম্যানেজার। সেই বাগানেই গিয়ে আমরা ফ্যাক্টরিতে কিভাবে একেবারে সবুজ চা পাতা থেকে বস্তাজাত চা তৈরী হয় দেখলাম। প্রথমে চা পাতাগুলোকে একটু গরম হাওয়ায় শুকিয়ে নিয়ে সেটাকে মেশিনে পিষে ফেলা হয়।





এরপর এই পিষে ফেলা পাতাগুলোকে আরো পিষে একেবারে তুলা ধুনা করে ফেলা হয় এবং গাজন (Fermentation) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা যে চা খাই সেই চায়ে পরিণত করা হয়।



এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল, এই প্রক্রিয়াতে তাপমাত্রা একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখতে হয়। যে চা পাতি তৈরী হল, সেটা আরো কিছু প্রক্রিয়া শেষে একটা মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রেডের চা’তে বিভক্ত করে বস্তাজাত করে সরাসরি চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকেই ওই চা এর বাকী গন্তব্য ঠিক করা হয়।


বিভিন্ন গ্রেডের চা

যাহোক, ফ্যাক্টরী থেকে বেরিয়ে আমরা সেই চা বাগান দর্শনে বের হলাম। চারিদিকে সবুজ, মনে একটা স্নিগ্ধ অনুভূতি নিয়ে আসে।



বাগানের মধ্যে আবার একটা খাল নৈসর্গিক দৃশ্য আরো উপভোগ্য করে তুলেছে।



উপরের দিকে উঠে গেলাম সূর্যাস্ত দেখব বলে। ফটো সেশন হল।



সূর্য ডুবে যাওয়ার পর আমরা চলে গেলাম চা বাগানের ম্যানেজারের বাংলোর দিকে। সন্ধ্যায় বার-বি-কিউ প্রোগ্রাম ওই বাংলোর উঠানে। খুবই সুন্দর ম্যানেজারের বাংলোর কম্পাউন্ড ! গাছ গাছালিতে ঘেরা বিশাল বাংলো, রুমগুলো যেন এক একটা ফুটবল খেলার মাঠ ! উঠানে নরম ঘাসের উপর বসে পড়লাম, সবাই মিলে “অন্তকসরী” প্রোগ্রাম করলাম, মানে ওই যে এক গ্রুপ গান যেখানে শেষ করবে আরেকগ্রুপ সেই অক্ষর দিয়ে গান ধরবে, সেই খেলা। বেশ মজা হল। মুরগীর বার-বি-কিউ আর সাথে পরাটা, কোমল পানীয়। খুব মজা করে খেলাম। উঠানে দোলনা আছে, সেখানে বসে দু’পা দুলিয়ে খাওয়ার পর্ব সারলাম। মনে হল, আহ সারাটা জীবন যদি এমন একটা পরিবেশে কাটিয়ে দিতে পারতাম !! :)

পরদিন সকাল সাতটায় বেরিয়ে পড়লাম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের উদ্দেশ্য। তার আগে একটু টি রিসোর্টে হাটা হাটি করলাম। আশে পাশে পুরোই বন-বনানী। আর গাছে গাছে অনেক বানরের দেখা মিলল, গাছ থেকে কাঠাল পেড়ে খাচ্ছে ! মা বানরের সাথে ছোট ছোট বাচ্চা বানর, খুব ভাল লাগল দেখতে।:)



শুনলাম, দু’এক জন সহকর্মীর সাথে বানরদের পাংগা হয়েছে, ভাবলাম যাই বাদরদের একটু দৌড়ানি দিয়ে আসি।:P কিন্তু, আমরা সংখ্যায় বেশ কয়েক জন থাকায় ওরা সবাই ঘন জংগলে পালাল। যাইহোক, ফিরে আসি লাউয়াছড়ায়। উদ্যানে প্রবেশ করলেই দু’পাশে অনেক লম্বা লম্বা গাছের সারি, দেখলাম জীবনের প্রয়োজনে এক কাঠাল গাছ সরু হয়ে সোজা উপরের দিকে উঠে গেছে। গাছে একটা কাঠালও ধরেছে!!:)



উদ্যানে একটা আধা ঘন্টার ট্রেকিং এর একটা ম্যাপ দেয়া আছে। ওটাই আমাদের করার প্রোগ্রাম। সবুজ বনের মধ্যে দিয়ে দলবেধে আমরা চলেছি, খুব সুন্দর একটা অনুভূতি। প্রচুর কাঠাল গাছ আর লেবু গাছ। কাঠালগুলো কেউ খায় না, সম্ভবত বনের অধিবাসিদের জন্যই লাগানো আছে। তেমন কোন পশু পাখির দেখা মিলল না। তবে রঙ পরিবর্তনশীল একটা গিরগিটির দেখা মিলল, একটা কাঠালের উপর বসে ছিল, তাই ওর গায়ের রঙ ও ছিল কাঠালের মতই।:) আমরা আমাদের নির্ধারিত ট্র্যাক হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাই অনেক পথ ঘুরে ট্রেকিং শেষ করলাম। পথে রাবার বাগানের দেখা মিলল। সবচেয়ে মজা পেয়েছি এই বনের বিশেষ প্রজাতি উল্লুকের ডাক শুনে, যদিও তাদের দেখা মেলেনি ! মনে হচ্ছিল, ওরা আমাদেরকেই উপহাস করছে !! B-) উপজাতিদের পল্লীর মধ্যে দিয়ে গেলাম। সময়টা আসলেই খুব ভাল কাটল, যদিও ঘামে ভিজে একাকার ! :)


সহকর্মীদের টারজান হবার প্রচেষ্টা !! :PB-)


বনের মধ্যে দিয়েই চলে গেছে রেল লাইন...

রিসোর্টে ফিরে নাস্তা করে চেক আউট করে আমরা চলে গেলাম মাধবপুর লেইকে। খুব সুন্দর একটা লেইক। ছবিতেই দেখুন।





শ্রীমংগল শহরে এক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাওয়া সারলাম। চলে গেলাম শ্রীমংগল খ্যাত সাত রঙ চা খেতে। এর পরেই আমাদের ৪১ জনের দলের ৩২ জন ঢাকা ফিরে যাবে আর আমরা ৯ জন টি রিসোর্টেই থেকে যাব। বিকেল চারটা বেজে গেছে, চা ওয়ালা বলল, এত জনের জন্য সাত রঙ্গা চা বানাতে তাদের অনেক সময় লাগবে। শেষ পর্যন্ত সাদা চা খেয়েই সবাই ঢাকা রওনা হল। আমরা নয় জন থেকে গেলাম পরের দিন মাধবকুন্ড ঝর্ণা দেখে ফিরব বলে। সন্ধ্যায় নেমে গেলাম পুলে, গরমের মধ্যে কি এক প্রশান্তি ! :)

বেলা এগারটায় মাধবকুন্ড পৌছালাম। খুব সুন্দর, ছুটির দিন হওয়াতে অনেকেই এসেছে।:) এক বড় ভাই বলল, এই ঝর্ণাটায় নাকি সারা বছরই অনেক পানি থাকে। তর সইল না, সোজা পানিতে ঝাপ দিলাম! :D



কি যে প্রশান্তি, তপ্ত আবহাওয়ার ঝর্ণার ঠান্ডা পানি, অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা চারজন পানিতে নেমেছিলাম, বল নিয়ে ওয়াটার পোলো খেলায় মেতে উঠলাম। ঘন্টা দুয়েক পানিতে ছিলাম। উঠতেই মন চাইছিল না, কিন্তু উঠতে তো হবেই, ঢাকায় ফিরতে হবে না? পরের দিনই অফিস.../:)


পানিতে আমাদের ঝাপাঝাপি... B-)

দুপুরে পর্যটনের হোটেলে খাওয়া সারলাম। রান্না ভাল কিন্তু খাবার খুব সীমিত। আমাদের পেটে তখন অনেক ক্ষুধা, কিন্তু আলু ভর্তা, মুরগী, ডাল সবই যা দিয়েছে এর বেশী আর তাদের নাকি রান্না করাই নেই ! /:)

ফিরে এলাম আবার সেই যান্ত্রিক জীবনে, সুখ স্মৃতিগুলো রয়ে গেল মনের মাঝে... অমলিন...:)

In Srimongol: On a weekend at the land of tea
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৫৬
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×