somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিজড়া কথন! ওরা কি মানুষ নয়??

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা ১:
অফিসে কাজ করছি। হঠাৎ বাসা থেকে ফোন এল। ফোন রিসিভ করেই শুনি মহা হট্টগোল! ঘাবড়ে গেলাম। কি অঘটন ঘটল আবার??!! আমার স্ত্রীর ভীত সন্ত্রস্ত গলা। বাসায় হিজড়া এসেছে। সামনের বারান্দায় ছোট বাচ্চার কাথা দেখে ওরা এসেছে, ১০০০ টাকা চায়। নীচে বুড়ো দারোয়ান থাকলেও ওরা থোরাই কেয়ার করে, বলিষ্ঠ হিজড়ারা দারোয়ানকে কুপোকাৎ করেই উপরে উঠে এসেছে। আর আমাদের বাসার পরিচারিকাও দরজা খুলে দিয়েছে কিছু না বুঝেই! যদি দরজা না খুলে দেন, তবে এরা দরজা ভেংগে ফেলার উপক্রম করবে। দরজা খুলে দিলে এরা ঘরে এসে বিচিত্র রকম কথা বার্তা এবং অংগভংগি করে যেটা অবশ্যই ঘরের মহিলাদের জন্য ভীতিকর। টাকা দিতে অস্বীকার করলে এরা মুখ খারাপ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। কাপড় খুলে উলংগ হয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।:| মোট কথা, পুরো কার্যকলাপই হল ঘরের লোকজনের জন্য অস্বস্তিকর !

আমার স্ত্রীর কাছে ওই মুহুর্তে এক হাজার টাকা ছিল না। বাড়ীওয়ালাকে ফোন দিলাম। তিনি আমার পক্ষ থেকে ওদের টাকা দিয়ে দিলেন এবং জানালেন, হিজরাদের এখানকার নিয়ম অনুসারে এই একবারই টাকা দিতে হবে, ওরা আর আসবে না।

ঘটনা ২:
আরেকদিন অফিসে ব্যস্ত সময় পার করছি, আবারো স্ত্রীর ফোন। ঘটনা হল সেই হিজরারা আবারো এসেছে। তাদেরকে যতই বলা হল, টাকা আগে দেয়া হয়েছে, তাদের কথা হল, টাকা পাশের বাসা থেকে দিয়েছে, আপনারা দেন নি ! আমি অফিস থেকে শুধু শুনছি, বাড়ীওয়ালাকে ফোন দিলাম। তিনি সেক্টর কল্যান সমিতিতে ফোন দিয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে পাঠালেন, তিনি আমার সাথে ফোনে বললেন, "“স্যার, ঝামেলা না বাড়িয়ে টাকা দিয়ে দিন”।" মানে, আবারো হিজড়াদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন ! বললাম, “ওরা যে আবারো টাকা চাইতে আসবে না তার কি নিশ্চয়তা?” স্ত্রীকে বললাম, ওদের কাছে কাগজে সই নিয়ে রাখ, যাতে প্রমাণ থাকে ! সই দেয়নি, কিন্তু ওদের দলনেতার ফোন নাম্বার দিয়ে গেল।

রাতে দলনেতাকে ফোন দিলাম। বললাম, "“ভাই, এটা কি ধরনের কথা? আপনারা জোর করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন? এমন সময় আপনারা আসেন, যখন ঘরে কোন পুরুষ সদস্য থাকে না? ঘরের মহিলাদের ভীত সন্ত্রস্ত করে টাকা নিয়ে যান ! এটাতো রীতিমত জুলুম !”"
দলনেতার উত্তর, “"ভাই, কত টাকাইতো কত ভাবে খরচ করেন, আমাদের না হয় কিছু দিলেন। আর তারপরেও যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে ছোট বোন হিসেবে মাফ করে দিয়েন।“" হায়রে আমার ছোট বোন !! ;)

কেন আমাদের সমাজে আজ এই অবস্থা?? হিজড়াদের কেন এভাবে মানুষের কাছে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা নিতে হবে? এদের কেউইতো শারীরিকভাবে দুর্বল নয়, তাহলে কোন কাজ কর্ম বাদ দিয়ে দুর্বৃত্তের মত অর্থ সংগ্রহ কেন? ওদের আজকের এই অবস্থার জন্য কে দ্বায়ী??

আমার দৃষ্টিতে এই আমরাই ওদের এই অবস্থার জন্য দ্বায়ী ! আমরা যারা নিজেদের সভ্য, ভদ্র, মানবিক, সুশীল মনে করি, তারাই ওদের আজকের এই পরিণতির জন্য দ্বায়ী ! X((

সর্ব প্রথম দ্বায়ী হিজড়া সন্তানটির বাবা-মা। সে যে একজন হিজড়া, সেটা কি তার দোষ? সৃষ্টিকর্তা তাকে হিজড়া হিসেবে পাঠিয়েছেন, সেও একজন রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। তবে তার প্রতি এই বৈষম্য কেন? বাবা মা’র উচিৎ ছিল তাকে পড়াশোনা শিখিয়ে, ধর্মীয়, নৈতিক শিক্ষা দিয়ে একজন ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। সেও সমাজে একজন স্বাভাবিক মানুষের মত বেড়ে উঠবে, কাজ করে খাবে, হয়ত ভবিষ্যতে তার নিজের কোন পবিরাব থাকবে না। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবেই সে সমাজে বেচে থাকবে। কিন্তু বাবা মায়ের অবহেলার কারণেই সে চলে যায় হিজড়াদের দলে, পরিণতি উপরের ঘটনায় যা শুনলেন !

এরপর আমরা আপামর জনগণ দ্বায়ী। হিজড়াদের আমরা আমাদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে নিতে না পারার মাধ্যমে আমরা আসলে আমাদের জাতিগত দৈন্যই ফুটিয়ে তুলেছি! আজকে আমার সন্তানওতো হিজড়া হিসেবে জন্ম নিতে পারে। আমি কি তখন তাকে ফেলে দেব? একজন মা জানে, সে কতটা কষ্ট স্বীকার করে সন্তান ধারন করে। কেন আমরা হিজড়াদের আমাদের প্রাত্যহিক কাজ কর্মে সংগী করে নিতে পারছি না? কেন আমরা হিজড়াদের দেখলেই বাকা চোখে তাকাচ্ছি? মানুষ হিসেবে আমার মনে হয় প্রত্যেকেরই নিজেকে এই প্রশ্ন করা প্রয়োজন!

থাইল্যান্ডে, ফিলিপিনসে আমি দেখেছি, হিজড়ারা সব জায়গায় কাজ করছে। ফিলিপিনসে রাতে আমি একটি জায়গা চিনতে পারছিলাম না, এক হিজড়া নিজে আগ বাড়িয়ে আমাকে সাহায্য করেছে, কই আমারতো তাকে কোন অছ্যুৎ মনে হয়নি ! আজকে আমাদের সমাজে যারা বিত্তবান আছেন, তাদের সবাইকে আমি অনুরোধ করব, বিশেষ করে যারা শ্রমঘন শিল্প মালিক, উদাহরণস্বরুপ গার্মেন্টস শিল্পের কথা বলা যেতে পারে, তারা আপনাদের কারখানায় হিজড়াদের নিয়োগ দিন। তাদের সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করুন, ফিরিয়ে দিন তাদের আত্মবিশ্বাস। আমাদের প্রিয় ব্লগার দাইফ ভাইয়ের কয়েকটি গার্মেন্টস আছে বলে জানি, দাইফ ভাই, আপনার প্রতি আমার এই প্রস্তাব বিবেচনার অনুরোধ রইল... :)

সবশেষ আমাদের সরকারের কথা না বললেই নয়। ইদানিং অবশ্য সরকারকে হিজড়াদের অধিকার নিয়ে কিছু সভা সমাবেশ করতে দেখেছি, মোবাইলে হিজড়াদের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার এসএমএস এসেছে একবার। কিন্তু আমার মনে হয়, এই কার্যক্রম আরো জোরদার হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে কোটা ভিত্তিতে তাদের সরকারী কাজে (অবশ্যই যোগ্যতা অনুযায়ী) নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। এতে বাবা মা তাদের হিজড়া সন্তানদের পড়াশোনা করাবেন এবং ইনশাল্লাহ একদিন হিজড়াদের আর আমরা আলাদা চোখে দেখব না, ওরাও আমাদের কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করবে, অংশীদার হবে দেশ ও জাতির উন্নয়নে।

"“হিজড়া”" শব্দটি আর কখনো কোন আতংকের নাম হবে না !
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৫
৫৮টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×