somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলবোরজ পর্বতমালার ওপরে...

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তেহরানে পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছি গত ২২ নভেম্বর ২০১৩। স্বভাবতই এসেই সবার মধ্যে একটা ঘোরাঘুরির ইচ্ছে। পরের শুক্রবার ছুটির দিনে অর্থাৎ ২৯ নভেম্বর বন্ধু হামিদের প্রস্তাব মত আমরা ঠিক করলাম থোচালে গিয়ে আলবোরজ পর্বতের উপর উঠব।

আমাদের বাসা থেকে থোচাল যেতে আধা ঘন্টার মত লাগে। জায়গাটা তেহরান শহরের উত্তরে শেষ প্রান্তে পাহাড়ের ওপর। পুরো তেহরান আপনি ওখান থেকে দেখতে পাবেন।


থোচাল থেকে দেখা তেহরান শহর...

গ্রীষ্মে ঘুরতে যাওয়ার জন্য খুব ভাল একটা জায়গা, কারণ তেহরানে যখন বেশ গরম, ঐ পাহাড়ের ওপর তখন খুব আরামদায়ক শীতল আবহাওয়া। গ্রীষ্মে তাই সারারাত ওখানে মানুষ থাকে। বাঞ্জি জাম্পিং এর ব্যবস্থা আছে, খোলা জায়গায় লোকজন/বাচ্চারা ব্যাডমিন্টন, ফ্রিজবি খেলে। আর কেবল কারে করে উঠে যাওয়া যায় আলবোরজ পর্বতের ওপরে।

তেহরানে তখন মোটামুটি শীত, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে। কিন্তু বরফ পড়ার মত কোন অবস্থা নেই। সবাইকে গুছিয়ে নিয়ে যেতে প্রায় এগারটা বেজে গেল। আমরা সবাই গিয়ে সরাসরি কেবল কারে ওঠার লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। কেবল কারের ৭ টা স্টেশন আছে, আমরা সবাই যাব ৫ নম্বর স্টেশন পর্যন্ত। আর শুধু হামিদ, সোহান আর লিমন যাবে ৭ নম্বর স্টেশন পর্যন্ত, মানে সবচেয়ে ওপরের স্টেশনে।

সত্যি কথা বলতে আমার কোন ধারণাই ছিল না যে আমি কি দেখতে যাচ্ছি সামনে বা কি ধরণের আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। কেবল কারে উঠে পরলাম স্ত্রী এবং দু’পুত্রসহ। কেবল কার একটু এগুতেই মনে হল ভিন্ন কোন জগতে চলে এলাম। চারিদিকে বরফে ঢাকা পর্বত, হালকা তুষার ঝড় !





একটু আগেই তো তেহরানে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়াতে ছিলাম, আর কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই মনে হল ভিন্ন কোন জায়গায় চলে এসেছি! আমার স্ত্রী এবং বাচ্চাদের জন্য এ ধরণের অভিজ্ঞতা প্রথম, তাই ওরা অনেক বেশী রোমাঞ্চিত! অবশ্য আমার জন্যও এ ধরণের অভিজ্ঞতা নতুন, আমি আগে তুষারপাত দেখেছি মানালিতে কিন্তু তুষারাবৃত পর্বতের ওপর কেবল কারে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা এই প্রথম!

যাহোক, ৫ম স্টেশনে আমরা সবাই নামলাম। নেমেই পুরো সাইজ। কি ঠান্ডারে বাবা ! হিম শীতল বাতাসের তোড় আর সাথে তুষারপাত! তাপমাত্রা অন্ততঃ -১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসতো হবেই ! জমে যাবার অবস্থা!




আমার বড় ছেলে একটু ভীতু প্রকৃতির, তাই সে এই পরিবেশে মহা বিরক্ত, কেন তাকে এখানে নিয়ে এসেছি, এ নিয়ে তার বিস্তর অভিযোগ। :P ছবি তুলতে গেলেও সে শীতে কুকড়ে থাকছে।



ছোটটাও শীতে কাবু কিন্তু অতটা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। আমাদের তখনো হাত মোজা কেনা হয়নি, কারণ মাত্রই আগে সপ্তাহে এসেছি। খালি হাতে বরফ নিয়ে একটু ছোড়াছুড়ি করলেও পরমুহুর্তে মনে হচ্ছে হাত দুটো আর শরীরে নেই! সাথে থাকা বন্ধু বান্ধব আর ভাবীরাও চেষ্টা করছেন বরফ নিয়ে একটু আনন্দ ফূর্তি করতে।


ছোট পুত্র কারো বানানো বরফের পুতুলের সাথে...

এই স্টেশনেই একটা কমপ্লেক্স আছে যেটার ভেতর রেস্টুরেন্ট, কফি শপ এর ব্যবস্থা। তাড়াতাড়ি সেখানে ঢুকে পড়লাম, আহ কি শান্তি! ভেতরে হিটার আছে।



বাইরে বেরুলেও ২/৩ মিনিটের বেশী থাকা যায় না। দুপুরের খাওয়া সারলাম সবাই, চির চেনা আইটেম, জুজে, কুবিদে আর ভাত।



খাওয়া শেষে ৭ম স্টেশনের টিকেট কাটা তিনজন হামিদ, সোহান এবং লিমন চলে গেল ৭ম স্টেশনে। আমরা ৫ম স্টেশনেই মাঝে মাঝে বাইরে বের হই, আবার ঢুকে পড়ি কম্পাউন্ডে।



৫ম স্টেশন থেকে দূরে রৌদ্রোজ্জ্বল তেহরান শহর...



প্রায় বিকেল হয়ে আসছে, সেই তিনজনের খবর নেই। ভাবীরা সবাই চাচ্ছে ওরা এলে পাহাড় থেকে নীচে নেমে যেতে। অবশেষে সেই তিনজনের দেখা মিলল সূর্যাস্তের একটু আগে। বলল, অবস্থা খুব খারাপ ! ওপরে এত ঠান্ডা আর তুষারঝড় যে ফেরার জন্য কেবল কারে বিশাল লাইন পড়ে গিয়েছিল। সোহান আগের সপ্তাহে চায়না থেকে ইরান এসেছে, ওর শীতবস্ত্রও পর্যাপ্ত ছিল না। ও এখনো বিয়ে করেনি। ওর অবস্থা নাকি খারাপ হয়ে গিয়েছিল ঠান্ডায়, বলছিল, “ভাই এখনো বিয়ে করি নাই, আল্লাহ এ যাত্রায় বাচিয়ে দাও !!” :P

যাহোক, অল্প সময়ের জন্য হলেও একেবারে ভিন্ন এক জগতে চলে গিয়েছিলাম! ঠান্ডা কাকে বলে টের পেয়েছি। তারপরেও স্মৃতির মনিকোঠায় ঐ সময়গুলো অনেক খানি জায়গা নিয়ে থাকবে সমসময়... :)

আমার যত ভ্রমন ব্লগ...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৯
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×