somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কাঁদুনেপরী

২৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফারহাকে যেদিন আমি প্রপোজ করলাম সেদিন সে ঠাস করে আমায় চড় মেরেছিলো আর চোখে জল নিয়ে বলেছিলো “এই কথা বলতে এতো দিন লাগে ছাগল?”

চড় খাওয়ায় যতটা না অবাক হয়েছিলাম তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম তার চোখে জল দেখে। আমি প্রপোজ করেছি তো এতে কাঁদার কি আছে? মেবি সেও আমাকে ভালোবাসতো বাট বলতে পারতো না, আর আমিও বলতাম না বলে এক চাপা ক্ষোভ ছিলো ওর মনের ভেতর, তাই হয়তো এমনটা করেছিলো।

যাই হোক মানুষ কোন সুস্বাদু খাবার খাওয়ার দশ বছর পরেও যেমন বলে , “জানিস একবার এক খাবার খেয়েছিলাম যার স্বাদ এখনো আমার ঠোঁটে লেগে আছে”! তেমন ভাবে ফারহার সেই চড়ের স্বাদ এখনো আমার গালে লেগে আছে। মাঝে মাঝে গালের ভেতর অন্যরকম অনুভূতি ফিল করি, অবশ্যই সেটা সুন্দর ফিল। ফারহাকে এ কথা বললে অবশ্য মাথা নিচু করে বলে “সরি গো” আর আলতো করে আমার গাল টেনে দেয়। ভালোই লাগে।

তবে ফারহার একটা গুন (!) হলো সে খুব কাঁদতে পারে ঠিক বলবো না খুব চোখে জল আনতে পারে। এতোটাই তারাতারি যে কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি তার চোখে মুক্তোর মত জল ঝিকমিক করছে। এর জন্যে তার নাম দিয়েছি আমি আমার “কাঁদুনেপরী”

যাই হোক পার্কের বেঞ্চে বসে বসে পুরনো স্মৃতি গুলা মনে করছিলাম আর সেন্টার ফ্রুট চিবোচ্ছিলাম। এবং একদম ঘড়ির কাটায় কাটায় সাড়ে চারটায় ফারহা এসে উপস্থিত হলো। সে অন্য মেয়েদের মত লেট করে না কখনো। খুব সময় মেনে চলে।

আমার পাশে বেঞ্চে বসেই একভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার এমন তাকানোর স্টাইল আমার কাছে মোটেও সুখকর নয়। এবং যে ভয় করেছিলাম তাই হলো তার প্রথম কথা শুনে...

- ওই তুমি আবার সিগারেট খেয়েছো?

- ইয়ে মানে...কই না তো...

- কই না তো না? তুমি কি চিবোচ্ছো?

- সেন্টার ফ্রুট...ইউ জানো? আই লাভ সেন্টার ফ্রুট! ইয়াম ইয়াম ইয়াম...

- হুহ আমি ভালো করেই জানি ছেলেরা সেন্টার ফ্রুট কেন এবং কখন খায়...সিগারেট খাওয়ার পর মুখে যাতে গন্ধ না থাকে তাই তারা সেন্টার ফ্রুট চিবোয়...

- তুমি তো অনেক বেশি জানো দেখছি...এতো জানলেওয়ালা হলে কবে?

- বাদ দাও...তা হঠাৎ এমন জরুরী তলব?

- না মানে...তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছিলো খুব তাই...

- হুহ...

- ওই শোনো...

- কি???

- একটা কিসারেট প্লিজ...

- না না না...কোন কিস টিস দিতে পারবো না...

- দেখো কাল থেকে রোযা শুরু...আর তো সিগারেট বা তোমার কিসারেট খাওয়া হবে না...তাই আজকেই তো লাস্ট চানস...

- না তুমি বলো আগে সিগারেট খাওয়া ছাড়বে কবে?

- একদম বিয়ের পর...প্রমিজ

- তাহলে বিয়ের পরেই কিসারেট পাবা...তার আগে নয়...

- কষ্ট পাইলাম...আমার এতো কষ্ট ক্যারে...

- গেলাম আমি থাকো...

- দাঁড়াও গল্প করি কিছুক্ষণ।

- তোমার তো গল্প মানেই ওসব...

- আচ্ছা যাও ওগুলা বলবো না। তা তুমি রোযা থাকবা না কাল থেকে?

- ইয়ে মানে...আমার তো অভ্যেস নাই...ছোটবেলা থেকে আম্মু রোযা থাকতে দিতো না...

- কিহ? কি কইলা এটা? এত বড় মেয়ে রোযা থাকে না...ওরে আমি এত টাশকি খাই ক্যারে...

এবং ফারহার শুরু হয়ে গেলো মাথা নিচু করে ফোৎ ফোৎ করে কান্না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো, “আম্মু না থাকতে দিলে আমার কি দোষ?”

ফারহার কান্না আমি আবার সহ্য করতে পারিনা, যদি ও কাঁদলেই ওকে বেশি সুন্দর লাগে। ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘এইতো আবার আমার কাঁদুনেপরীটার কান্না শুরু হলো? আরে আমি তো ফান করে বলেছি...”

সে মুখ তুলে বললো, “যাও তোমাকে প্রমিজ আমাদের বিয়ের পর থেকে আমি রোযা থাকা শুরু করবো!”

ওর কথা শুনে ভেতরে ভেতরে আমি মখা হয়ে গেলাম। বিয়ের পর আমি ছাড়বো সিগারেট আর ও থাকবে রোযা! তাহলেই হইছে...কারন আমি সিগারেট ছাড়া থাকতে পারিনা আর ও ক্ষুধা সহ্য করতে পারেনা। তাহলে কেমনে কি?

**

আমাদের বিয়ের পর প্রথম রোযা।

আমিই প্রথম ঘুম থেকে উঠলাম। দুইটা বাজে। কাল এতো প্ল্যান পরিকল্পনা ফারহা করলো রোযা নিয়ে আর এখন গভীর ঘুমে ব্যাস্ত সে।

ওর কাঁধে হালকা ঠেলা দিয়ে বললাম “ফারহা...উঠো...রান্না-বান্না তো কিছু করো...না খেয়ে রোযা থাকবা নাকি কাল?”

সে ঘুমের ভেতরেই হাত বাড়িয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো। তারমানে তার কানে আমার কথার মানে ঢুকেনি এখনো, সে ঘুমে মশগুল। যাই হোক বেশ কয়েকবার বলার পর তার কানে যখন আমার কথা গুলা ভালোভাবে ঢুকলো তখন লাফ দিয়ে উঠলো বিছানা থেকে। কোমরে শাড়ি গুজে এগুলো বাথরুমের দিকে তারপর রান্না ঘরের দিকে।

আমি এ সুযোগে আরও এক ঘন্টা ঘুমানোর সুযোগ পেলাম। আজ শুক্রবার। ফারহার প্রথম রোযা দেখার সুযোগ হবে আমার। কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুম দিলাম।

কিন্তু চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই মনে হলো ফারহা মেবি আমাকে ডাকছে। এবং চোখ খুলে দেখলাম সেটাই। সে বলছে, “কি আমার আদরের ভাগ কি কোলবালিশ কে দেয়া হচ্ছে হু?”

- মানে কি? আমি তো সবে ঘুমাতে যাচ্ছি।

- না জনাব ছাগল। আপনি প্রায় এক ঘন্টা ধরে ঘুমুচ্ছেন। এখন উঠুন সেহরি খেতে হবে। রান্না কমপ্লিট।

- খাইছে বলো কি। আচ্ছা উঠছি।

আমি উঠে বাথরুমে গেলাম আর সে টেবিলে খাবার সাজাতে লাগলো।

খাবার টেবিলে বসে খাবারের আইটেম দেখে হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না। ভাত, আলু ভাজি, মাছ ভাজি আর ডিম ভাজি। সব শুকনা।

আমি বললাম,

- আচ্ছা তুমি যে এসব রান্না করলা তুমি নিজেই এসব খেতে পারবা কি?

- কেনো?

- সবই তো শুকনা।

- মানে? তুমি জানো আমি রান্নায় আনাড়ি। এভাবে ক্রিটিসাইজ করতে পারলা?

এই তো সারছে...আবার কান্না শুরু হয় কিনা কে জানে। তাই জলদি বললাম...

- আর না না...তা না...ভোর বেলা আসলে শুকনা খাবার খাওয়া যায়না, মানে গেলা কষ্টকর। আমার অভিগজ্ঞতা থেকে বলছি।

- হাহ আসছে আমার এক্সপেরিয়েন্সড ছাগল। কে বলেছে খাওয়া যায় না? আমি তোমাকে খেয়ে দেখাবো।

- আচ্ছা দেখবো হাহাহা।

যাই হোক খাওয়া শুরু করলাম। একটু করে খাচ্ছি আর ফারহার খাওয়া দেখছি। সে প্রথম দিকে বেশ ভালোভাবেই খাওয়া শুরু করলো, আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে বেশ আয়েশ করে খেতে লাগলো। মনে হচ্ছে কতো না টেস্টি হয়েছে রান্না...ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে ও বলছে, “এই খাবার যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলো তো?”

এবং একটু পরেই আসল ভাবমূর্তি বের হলো ওর। খুব কষ্ট করে ভাত গলা দিয়ে নামানো শুরু করলো সে যা তার খাবার গেলা দেখেই বুঝা যাচ্ছে...এবং একটু পর পর পানি খাচ্ছে সে। মাথা নিচু করে আছে। মেবি আমাকে ওর মুখ দেখাতে চাচ্ছে না। একটু পর একবার মুখ তুলে আমার দিকে তাকালে চোখ টিপে দিলাম। সে লজ্জা পেয়ে বললো, “আসলেই তো ভোরবেলা খাবার খাওয়া মুশকিল!”

আমি বললাম, “খাবার খাওয়া মুশকিল না বলো শুকনা খাবার খাওয়া মুশকিল। তোমার উচিত ছিলো ডাউল বা ঝোল তরকারি রান্না করা!”

- ইয়াক...তুমি খবরদার আমাকে ডাউলের কথা বলবা না। এই জঘন্য জিনিস মানুষ কেমনে খায় কে জানে।

- হেহে...আমি জানি তো তুমি ভালো ডাউল রান্না করতে পারো না...তাই...

- এই কি বললা? কি বললা তুমি? এতোই যখন আমার রান্নার সমালোচক হয়েছো তখন নিজে রান্না করে দেখাও...
খাইছে...এখন কথা বলা মানেই ফারহা কে রাগিয়ে দেয়া। আমি সেটা চাচ্ছিনা। তাই সরি বলে খাওয়ায় মন দিলাম। তবে ফারহা যে স্পিডে খাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ইফতারী টাও সে এই খাবার দিয়ে এখানেই সারবে। ওকে বললাম তারাতারি খেতে...একটু পরেই সাইরেন দিবে।

এবং ফারহার কিছু খাবার বাকি থাকতেই পাশের মসজিদ থেকে সাইরেনের শব্দ শোনা গেলো। ফারহা সাথে সাথে খাওয়া বন্ধ করে আমার মুখের দিকে তাকালো। আর একটু পরেই ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিলো। বললো, “এখন কি হবে? আমি পানি খেতে পারলাম না...”

কান্নার পরিমান আরও বেড়ে যেতে পারে সেই ভয়ে ওকে বললাম, “আরে এটা কোন ব্যাপার না...এখনো সব মসজিদে সাইরেন দেয় নি...আমার দাদারা কি করতো জানো? ভোরবেলা নিজের গায়ের লোম দেখা না যাওয়া পর্যন্ত খেতো। সমস্যা নাই। তুমি পানি খাও!”

- সত্যি তো? কোন সমস্যা হবে না তো? এটা আমার প্রথম রোযা...আমি চাই এটা যাতে ভালোমতো করতে পারি।

- আরে বাবা হ্যা...তুমি পানি খাও। জলদি।
- খাচ্ছি ছাগল...হিহিহি...

একটু আগেই কাঁদছিলো এখন আবার হাসে...আমার পাগল হতে আর কত দেরী পাঞ্জেরি?

**

সকাল দশটা পর্যন্ত ভালোভাবেই চললো। তারপরেই ফারহার ভেতর পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। বুঝলাম বেচারীর রোযা লাগা শুরু হয়েছে। এমনিতেই সে ক্ষুধা সহ্য করতে পারেনা তার উপর এটা ওর প্রথম রোযা। কি যে হয়...শেষ পর্যন্ত টিকতে পারবে কিনা কে জানে।

সকাল এগারোটা ...ফারহা ম্যাডাম আপাতত সারা ঘরে হাটা চলাফেরা বন্ধ করে থম মেরে বসে আছেন। আমি পত্রিকা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে তার কাণ্ডকারখানা দেখছি। এবং একটুপর আস্তে আস্তে হেঁটে সে বিছানায় আমার পাশে শুয়ে পরলো। কোন কথা বললো না। আহা...সকাল এগারোটাতেই এই অবস্থা...বাকি সময় তো পরে আছে।

সকাল বারোটা। ফারহা এখন ঘুমে আচ্ছন্ন। কেউ কোন শব্দ করবেন না প্লিজ।

দুপুর একটা, ফারহাকে ঠেলা দিয়ে বললাম... “আমি মসজিদে গেলাম জুম্মাহর নামাজ পড়তে...”

সে মিটমিট করে চোখ খুলে বললো, “আমাকে নামাজ পড়া শিখাবা?”

- কেনো শিখাবো না? অবশ্যই শিখাবো। তুমি কি ঠিক আছো?

- আমার ভেতরে বেঠিকের কি দেখলা ছাগল?

খাইছে...বিপদের গন্ধ পাচ্ছি। ক্ষুধায় ফারহার মেজাজ চড়ে গেছে...তারাতারি পালাই...

নামায শেষে ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই ফারহা দৌড়িয়ে আসলো, একটু আগেই না ওর নড়ন চড়ন ছিলো না এখন দৌড়ানির শক্তি কই পেলো কে জানে...

আমার সামনে দাঁড়িয়েই হঠাৎ করে আবার হুহু করে কেঁদে দিলো। আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। কাছে গিয়ে বললাম, “কি হলো? আমার কাঁদুনেপরী টা কাঁদে কেন?”

সে এবার ফোৎ ফোৎ করে বললো, “আমার প্রথম রোযা টা হলো না...”

- হলো না মানে? কি হয়েছে?

- আমি বলবো না...তুমি বকবা তাহলে

- আরে বকবো না...বলোই তো কি হয়েছে...

ও তখন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে নাক টেনে বললো, “ইইইই...মানে...আমি না ভুলে পানি খেয়ে ফেলেছি...আমার খেয়ালই ছিলো না আমি রোযা আছি...”

ফারহার কথা শুনে তখন হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার চুপ করে থাকা দেখে ওর কান্নার বেগ আশংকাজনক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে দেখে বললাম, “আরে ভূলে কিছু খেলে রোযা ভাংগে না তো...”

- কিহ? তুমি নিশ্চই আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য মিথ্যে বলছো...

- আরে সত্যি বললাম...ভূলে কিছু খেলে রোযা ভাংগে না...এটা আমি কই জানি পড়েছিলাম...

- তুমি শিওর?

- হ্যা রে বাবা...শিওর...

তখন ফারহা মুখ তুলে বললো, “ইশ...ভূলে যখন পানি খেয়েই ফেলেছি তখন আরও বেশি করে খাওয়া উচিত ছিলো...হিহিহিহি...”

এই নে...বৃষ্টির পর এখন আবার দেখি রোদ উঠেছে...ওরে তোরা আমারে কেউ মাইরালাইস না ক্যারে?

**

বিকেলে ঘুম থেকে উঠলাম ফারহার ডাকে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো বয়স যেনো এই একদিনেই বেড়ে গেছে অনেক।

- উঠো নামায পড়বা না বিকেলের?

- ও হ্যা তাই তো? (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম) এই যাহ আজান তো অনেক আগেই হয়ে গেছে...আমাকে আগে ডেকে দিলা না কেন? জামাত মিস করলাম।

- তুমি ঘুমুচ্ছিলা তাই আর ডাকিনি। চলো এক কাজ করি। তুমি বাসাতেই আজ নামায পড়ো আর আমাকে শিখাও।

- হুম তা অবশ্য করা যায়।

ফারহা কে নিয়ে গেলাম। ওর হাঁটা দেখে মনে হচ্ছে এখুনি হয়তো ঢলে পরে যাবে। খুবই দুর্বল লাগছে ওকে। তবে ও বললো সে ঠিক আছে। শুধু মাথাটা নাকি একটু ঘুরছে।

দুইটা জায়নামাজ পাশাপাশি বিছিয়ে ওকে দাঁড় করালাম। সংক্ষেপে কি কি করতে হবে বললাম। আর বললাম যে আমি যা যা করবো সেও যেনো আমার দেখাদেখি তাই তাই করে। সে বললো,

- কিন্তু আমি যে কোন সূরা পারিনা...

- সমস্যা নেই...পরে তোমাকে আরবী পড়া শিখাবো আমি...আপাতত আজ মনে মনে শুধু “আল্লাহ আল্লাহ” করবে।

- তাহলে হবে?

- আল্লাহ কবুল করে নিবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা ছোটবেলা যখন সূরা পারতাম না তখন এভাবেই নামায পড়তাম।

যাই হোক পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গেলাম। ওকে খুবই দূর্বল লাগছিলো যদিও।

কিন্তু নামায শেষে সালাম ফিরিয়ে দেখলাম ফারহা জায়নামাজে কাত হয়ে পরে আছে। হায় আল্লাহ...কখন কি হয়ে গেলো কিছুই খেয়াল করিনি। জোরে জোরে কয়েকবার ডাকলাম, গায়ে ঠেলা দিলাম...কিন্তু ওর কোন সাড়া শব্দ নেই। দৌড়িয়ে পানি এনে ওর মুখে ছিটিয়ে দিলাম...কিন্তু কোন লাভ হলো না। ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। বুকের ভেতর ধুকধুক শুরু হয়ে গেছে আমার।

ওকে কোলে নিয়ে দ্রুত পাশেরই একটা ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম। স্যালাইন দেয়া হলো। ডাক্তার বললেন শারীরিক দূর্বলতার জন্যে হয়তো মাথা ঘুরে পরে গেছে। জ্ঞান ফিরতে সময় লাগতে পারে!!”

ফারহার বেডের পাশে বসে থাকলাম। একটু পর পর ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। আশা এই হয়তো ও চোখ খুলবে।

এবং প্রায় আধা ঘন্টা পর ও চোখ খুললো। কুতকুতে চোখে একবার আমার দিকে তাকালো আর একবার হাতের ভেতর সিরিঞ্জ দিয়ে স্যালাইন দেয়াটা দেখলো।

তারপর কিছুক্ষণ একভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মত অ্যাঁ অ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো। বললো, “আমার প্রথম রোযাটা আর হলো না তাই না? ভেঙ্গে গেলো তাই না!!”

ফারহা কে কি বলবো বুঝছিলাম না। চুপ করে দাঁড়িয়ে ওর কান্নাটা উপভোগ করছিলাম।
ওর কান্নামাখা মুখ অনেক সুন্দর লাগছিলো। এবং সেদিনই প্রথম ফারহার কান্না দেখে জীবনের সব চাইতে বেশি খুশি হয়েছিলাম। কারন আমার কাঁদুনেপরী টাকে যে আমি কত ভালোবাসি তা সেদিনই প্রথম টের পেয়েছিলাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×