অতঃপর ক্রিকেট ম্যাচের উন্মাদনা কিংবা ঈদ শেষে কর্মব্যস্ত জীবনে ফেরা কিংবা কোন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ইত্যাদি কোন ইস্যুর নিচে চাপা পড়ে যাবে রাজন। চাপা পড়ে যাবে রাজনের বেচে থাকার আহাজারি আর গগনবিদারী কান্না। চাপা পড়ে যাবে ওর একটু পানি পান করার প্রাণপণ আকুতি।
আমার মত অনলাইন কিছু বিপ্লবীর মৌসুমি দেশপ্রেমও ধীরে ধীরে ম্লান থেকে ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো নতুন কোন রগরগে আর ফলজ ইস্যু নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে। সাংবাদিকরে কলম কোন সেলিব্রেটির ওয়ারড্রব ম্যালফাংশন কিংবা কোন ব্যাবসায়ীর পরকীয়ার কাহিনী লিখতে শুরু করবে। বুদ্ধিজীবিরা টক শো-তে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি নিয়ে অশ্লীল কিন্তু মনোরম বাকযুদ্ধে লিপ্ত হবে। রাজনীতিক তার ভাষণে বস্তাপচা প্রতিশ্রুতি আর ঈদের শুভেচ্ছা জানাবে। সরকারী আমলা কিংবা পুলিশ তার নির্লজ্জ হাত বাড়িয়ে দিবে ঘুষের খোঁজে। পতিতা বাড়িয়ে ধরবে উন্মুক্ত শরীর। শুধু রাজন হারিয়ে যাবে। রাজনের খুনীরাও হয়ত পয়সা আর প্রভাবের বিনিময়ে বিচার বিভাগকে ক্রয় করতে সক্ষম হবে এবং অবশেষে পার পেয়ে যাবে।
রাজন হারিয়ে যাবে, যেমন করে হারিয়ে গেছে বিশ্বজিৎ-অভিজিৎ- জিয়াদ-সাগর রুনি-মাওলানা ফারুকী কিংবা ত্বকী।
রাজনের খুনীরা পার পেয়ে যাবে, যেমন করে পার পেয়ে গেছে রানা প্লাজার সোহেল রানা, তাজরীনের দেলোয়ার, শামীম ওসমান কিংবা নূর হোসেন।
অতঃপর বাংলাদেশ নামক এই মৃত্যু উপত্যাকা যুগের পর যুগ ধরে জল্লাদের উল্লাসমঞ্চই রয়ে যাবে। আর এই বিকল রাষ্ট্রযন্ত্র “গনতন্ত্র” নামক বোরকা পরে আমৃত্যু শরীরে “গনোরিয়া” পুষে রাখবে। কিন্তু চিকিৎসা করবে না।
তবু রোজ সকালে স্কুল অ্যাসেম্বলিতে ঘুমঘুম চোখে বাচ্চারা কোরাসে সুর মেলাবে “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।”
ওদিকে অনলাইনের কোন নির্লজ্জ সুমন নিনাদের লেখা কপি করে (দাঁড়ি-কমা না বদলিয়েই) নিজের নামে চালিয়ে দেবে,
"আমি অন্ধ তাই বন্ধ আমার বিবেকের দরজা
আমি-ই বাংলাদেশ, আমার ডাকনাম লজ্জা।"
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৫