বনশ্রী আবাসিক এলাকায় এটাই আমার প্রথম এবং শেষ বৈশাখ। নিকটবন্ধুদের দুজন বনশ্রী থাকেন, তাদের কাছাকাছি থাকার নেশায় বনশ্রীতে বাসা বাঁধি গত বছরের আগস্ট থেকে। এর আগে যখন ঢাকায় ছিলাম, অর্থাৎ ২০০৫ পর্যন্ত, তখন নিকুঞ্জে থাকতাম, আলোবাতাস এত দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠে নি। সেখান থেকে কয়বছরের প্রবাস কাটিয়ে সোজা বনশ্রীর গুদামঘরের মত বাসাগুলো দেখে আমার তো ছোটখাট কালচারাল শকই হয়ে গেল। প্রচুর ধুলা, কনস্ট্রাকশনের লাগাতার ঘটাং ঘটাং, দিনের বেলা বাতি জ্বালিয়ে রাখা, আর বাসায় খাট পাতার আগেই আইপিএস পাতা লাগে! একটা খাল আছে সামনে, বুড়িগঙ্গার মিনিয়েচার, আশপাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাকে রুমাল না-চেপে উপায় নাই। বিল্ডিংগুলোর মধ্যে ৩০% তো দূরের কথা, এক ইঞ্চি ফাঁকও নেই। বাসাবাড়ির গ্যারেজ আর নিচতলা জুড়ে নানান কিসিমের ইশকুল, আমার ছেলেটাকে ধরে-কয়েও কোনোটায় স্থায়ী করানো গেল না।
পুরো একটা বছর একরকম নিঃসঙ্গভাবেই বনশ্রীতে কাটিয়ে দিলাম। যে বন্ধুদের প্ররোচনায় বনশ্রীতে আসা, তারা সব অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেলেন! কালেভদ্রে যতটুকু দেখা-মোলাকাত হয়েছে, হয় ব্লগে, না হয় বনশ্রীর বাইরে। মাঝেমধ্যে রিকশায় অমি রহমান পিয়ালকে দেখি। ভাবি, ডেকে দেখি, থামিয়ে চা পানের আবদার করি কোনো রেস্তোরাঁয়। কিন্তু ততক্ষণে সামহোয়্যারইন এর চারপর্ব পর্যন্ত লেখা হয়ে গেছে, নদীকুলের শ্মশান দেখা যাইতেছে, পিয়াল যদি ভাবেন, থামিয়া লাভ কি, পৃথিবীতে কে কাহার?
এরপর যখন ঢাকায় আসা হবে, তখন হয়তো আর বনশ্রী থাকা হবে না। বনশ্রী নিয়ে তেমন কোনো স্মৃতি জমে উঠল কিনা বুঝতে পারছি না এখনো। বনশ্রী বললে ঠা ঠা রৌদ্রে ধুলা উড়ানো রাস্তার কথাই হয়ত মনে হবে। নিকুঞ্জ বলতে যেমন এখন বুঝি ভাঙ্গা, বৃষ্টির পানি সরে-না-যাওয়া এবড়োথ্যাবড়ো রাস্তা!
নতুন বছর আমার জন্য কি নিয়ে আসছে এর বিন্দুবিসর্গও আঁচ করতে পারি না আজকাল। জীবনের গতিধারা অনিশ্চিত হয়ে উঠছে, এটুকু বুঝি খালি। যেসব বন্ধুরা তাদের মাঝবয়সের মোরগের মত ব্যস্ত জীবনে বাকবাকুম করছে, তাদের পাশে আমার এই ছোট্ট ভঙুর শিক্ষানবিশ জীবন কতক্ষণই ধরে রাখা যায়! "সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে, আমি একা, হতেছি আলাদা!"
বিদায় বনশ্রী! স্বাগত বৈশাখ, তবুও!!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:৩৫