কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে মেয়েটি ভুলে রিকশায় বই ফেলে এসেছিল। সেই থেকে রিকশাঅলা বই নিয়ে প্রতিদিন সেই বিশাল বাড়ির আশপাশ দিয়ে ঘোরে। একদিন মেয়েটির চোখ পড়ল সেদিকে। জানতে চাইল, রিকশাঅলা বইগুলো দেখাল। মেয়েটি খুশি হয়ে রিকশাঅলাকে পঞ্চাশ টাকা বখশিশ দিতে চাইল। কিন্তু আমাদের হ্যাণ্ডসাম রিকশাঅলা, চমৎকার ফতোয়া আর লুঙ্গি পরে যে রিকশা চালাচ্ছে ঢাকা শহরে, সে কিন্তু টাকা নিতে অস্বীকার করল। মেয়েটি তখন পরের দিনের কথা বলল, সকাল দশটায় বাড়ির গেটে থাকতে বলল, এই রিকশায় কলেজে যাবে সে। যথাসময়ে আমাদের রিকশাঅলা হাজির হল, কিন্তু মেয়েটি আজ কলেজে যাবার বদলে রিকশাঅলাকে নিয়ে রমনা পার্কে যেতে চায়! রিকশাঅলা কিন্তু ইতস্তত করল, বলল, বড়লোকের মেয়ের সাথে পার্কে গেলে লোকে মন্দ বলবে। যাই হোক, লোকের মন্দ বলার আশংকা দিয়ে ঠেকানো গেল না এই অভিসার।
মমতাজের এই গান:
ওরে ও রিকশাঅলা!
এই অভিসার কার? ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে আমাদের রিকশাঅলাটি অধোবদন, কেবল দায়িত্ব পালন করতেই এসেছে ধনীর কলেজ-পড়ুয়া দুলালীর বাড়ির গেটে। ধনীর দুলালী বরং প্রো-অ্যাকটিভ অনেক। রিকশাঅলাকে দেখেই প্রেম জেগেছে তার। সে প্রেমের ক্ষেত্রে শ্রেণীবিভেদ মানে না। রিকশাঅলা কিন্তু মানে। সে লোকের মন্দ কথার প্রেক্ষিতে দমে যেতে চায়। আবার আমাদের রিকশাঅলা নিজেও কলেজ পর্যন্ত পড়েছে, এর অর্থ অর্থনৈতিক শ্রেণীবিভেদকে অস্বীকার করা গেলেও বিদ্যাবুদ্ধির ভেদকে অস্বীকার করা যাবে না। নিরক্ষর রিকশাঅলার সাথে কলেজগামী তরুণীর প্রেমকে স্বীকার করা যাবে না। পুরো ভিডিওতে রিকশাঅলাকে রোমান্টিক কোনো ভঙ্গিতে তার প্রেমে-পড়া তরুণীটির দিকে তাকাতে দেখা যায় না, তার চোখে যা দেখা যায় তা হল এক ধরনের বিবেকী অভিব্যক্তি। ধনীর দুলালীর খেয়ালখুশির স্রোতে খুব সতর্ক হয়ে নামছে সে। কিংবা নামছে না। কেবল নামতে দিচ্ছে। "আপনি" থেকে "তুমি"তে আসে নি সে একবারের জন্যও, অন্যদিকে তরুণী অবলীলায় তাকে "তুমি" সম্বোধন করে গেছে।
আমাদের রিকশাঅলা কিন্তু নগর গরিবের ভাবের আইকন হয়ে উঠতে চায়। ফ্যাশনেবল কুর্তা আর রঙ্গিন লুঙ্গি পরে রিকশা চালাচ্ছে এক ইন্টারমিডিয়েট-পড়া তরুণ। তার শ্রেণী-সতর্কতা এবং নৈতিক অধিগম্যতা তাকে নগরবাসী মধ্যবিত্তের সংস্কৃতিতে এক ধরনের বৈধতা দেয়। আদর্শ নগর গরিব! তার কি উল্লম্ফনের বাসনা নাই? সে কি এই বিদ্যমান শ্রেণীব্যবস্থায় কোনোরকম আপসেট ঘটাবার সম্ভাবনা রাখে?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১২:২৮