somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোতলামী দূর করতে আত্মবিশ্বাসী হোন

২৩ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঢাকা, (নিউজমেইলবিডি): কথা বলতে গেলে প্রথম শব্দেই আটকে যান৷ অনেক টেনেটুনে বাক্যটা শেষ করতে পারেন৷ টেলিফোন করতে ভয় পান৷ রাস্তা খুঁজে না পেলে, কাউকে জিজ্ঞেস করতেও সংকোচ বোধ করেন তাঁরা৷ আর এই তোতলাদের ৮০ শতাংশই পুরুষ৷


জার্মানিতে আট লক্ষ মানুষ তোতলা৷ সাধারণত সমস্যাটা তিন থেকে ছয় বছরের মধ্যে শুরু হয়৷ ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বাচ্চার ক্ষেত্রে তোতলামি ভালো হয়ে যায় বড় হতে হতে৷ অন্যরা এই সমস্যা নিয়েই জীবন কাটান৷ পুরোপুরি ভালো হয় না তাঁদের এই প্রতিবন্ধকতা৷


কথা বের হয় না কিছুতেই
তোতলারা যা বলতে চান, তা তাঁরা ঠিকই জানেন৷ কিন্তু বলতে গেলে শব্দটা কিছুতেই বের হতে চায় না৷ একটা শব্দ বা কথা বারবার বেরোতে থাকে৷ তাই তাঁরা মানুষজনের মধ্যে যেতে চান না৷ গুটিয়ে থাকেন৷ অনেক ভূক্তভোগী আবার কিছু কিছু শব্দ বা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলেন৷ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চান না৷
কেন মানুষ তোতলায়, শরীরের কোন মেকানিজম এজন্য দায়ী, তা নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে৷ কারণ বের করার জন্য ১৫ বছর ধরে একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ আর তা হলো ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা এমআরআই৷ এই পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকর্মের ছবি উঠে আসে৷


এতে দেখা যায়, তোতলাদের মস্তিষ্কের ডান অংশের সামনের দিকে অসংগতি থাকে৷ যে দিকটির দায়িত্বে রয়েছে কথা৷
নিওরোলজিস্ট ডা. মার্টিন সমারও একজন ভুক্তভোগী৷ তিনি জানান, ‘‘এটি সম্ভবত নিয়ন্ত্রণের সমস্যা৷ কথা বলতে গেলে যে সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রয়োজন, যেমন জিব, তালু, গলার পেশি ইত্যাদি ঠিকমতো বশে থাকে না তোতলাদের৷''


মানসিক চাপে বাড়ে
গবেষকরা মনে করেন, তোতলানোর পেছনে নিওরোলজিক্যাল ও মানসিক কারণ এই দুটোই থাকতে পারে৷ দেখা গেছে, মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে তোতলামির মাত্রা বেড়ে যায়৷ জিনেরও একটি বেশ বড় ভূমিকা রয়েছে তোতলামিতে৷ চার ভাগের তিন ভাগ তোতলার ক্ষেত্রে এই কথা প্রোযোজ্য৷ কোনো কোনো পরিবারে অনেকেই তোতলা৷ যেমনটি রাইনার ননেনব্যার্গ-এর পরিবারে দেখা যায়৷ রাইনার বলেন, আমার বাবা ও দাদা তোতলাতেন৷ আমার একটি ছেলে আছে, সেও তোতলায়৷

রাইনার ননেনব্যার্গ নিজের তোতলামিটা গুরুতর বলে মনে করেন৷ কখনও কখনও একটা শব্দই বের হতে অসংখ্য সেকেন্ড পার হয়ে যায়৷ স্পিচ থেরাপি নেওয়া হয়নি তাঁর৷ সেসময় এই ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না৷

৭০ বছর পূর্ণ হচ্ছে তাঁর৷ সারাটা জীবন তোতলামির কারণে ভুগতে হয়েছে তাঁকে৷ অবশ্য মাঝে মাঝে কোথাও না ঠেকে কথা বলতে পারেন রাইনার৷ কিন্তু সময়টা খারাপ থাকলে কোনো শব্দই মুখ দিয়ে বের হতে চায় না৷ তবে কিছুটা সান্ত্বনা খুঁজে পান এই ভেবে যে, বিশ্বের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও এই সমস্যায় ভুগেছেন৷ যেমন প্রাচীন গ্রিসের বিজ্ঞানী ও দার্শনিক এরিস্টটল, ব্রিটিশ লেখক জর্জ বার্নার্ড শ', বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটন৷ এই সব বরেণ্য মনীষীরাও ছিলেন বাকপ্রতিবন্ধী৷


সেল্ফহেল্প গ্রুপ

কোলনে তোতলাদের জন্য একটি সেল্ফহেল্প গ্রুপ গড়ে তোলা হয়েছে৷ সপ্তাহে একদিন মিলিত হন ভুক্তভোগীরা৷ এই গ্রুপের লক্ষ্য: নিজের তোতলামিকে ভয় না পেয়ে সমস্যাটিকে কীভাবে সামলানো যায় তা শেখা৷ এই ভাবে বাধা ছাড়া কথা বলতে শেখেন অংশগ্রহণকারীরা৷ এখানে টেলিফোন করার ট্রেনিং দেয়া হয়৷ দেওয়া হয় ভিডিও ট্রেনিং৷ সবার সামনে বক্তব্য রাখার অভ্যাস করানো হয়৷ দৈনন্দিন কাজ কর্মে অসুবিধাগুলি কীভাবে কাটানো যায়, সে দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়৷ ব্যবস্থা করা হয় স্পিচ থেরাপির৷ এই গ্রুপের এক সক্রিয় সদস্যা পেটার সলবে৷ তিনি জানান, ‘‘কোনো বাক্য অন্যভাবে বললেও সুবিধা হতে পারে৷ যেমন যে সব শব্দ বলতে গেলে আটকে যায়, সেগুলিকে পাশ কাটিয়ে অন্য শব্দ নেওয়া যেতে পারে৷''


আরেক ধরনের ট্রেনিং হলো কণ্ঠস্বর নরম করে কথা বলা৷ এইভাবে কথা বললে তোতলামিটা থাকে না৷ মার্টিন সোমার এই প্রসঙ্গে বলেন, এ জন্যে আমাকে অদ্ভুতভাবে কথা বলতে হয়৷ আরেকটা পদ্ধতি হলো, ধীরে ধীরে চেপে কথা বলা৷ আমরা যে তোতলা, তাতে আমাদের কোনো হাত নেই, কিন্তু কী ভাবে আমরা তোতলাবো সেটা আমরা ঠিক করতে পারি৷


গানে গানে কথা
তোতলানোর সময় মস্তিষ্কের এক অংশ অন্য অংশের সমস্যাটা কাটাতে চেষ্টা করে৷ আর তাই গানের মাধ্যমেও তোতলামিকে আয়ত্তে আনা যায়৷ কেননা সংগীত ও গানের জগৎ থাকে মস্তিষ্কের ডান দিকে৷ আর বা দিকে থাকে কথার এলাকা৷ এ জন্য তোতলাদের গান গাইতে কোনো অসুবিধা হয় না৷ সে জন্য কোলনের ভূক্তভোগীদর সমাবেশে নিয়মিত গানের চর্চাও করা হয়৷ কোথাও হোঁচট না খেয়েই৷
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×