somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিনেমার নাম মাসের শেষ!

৩১ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিনেমার নাম মাসের শেষ! এ যেন মাসের শেষ ক’টা দিনে ঈশ্বর হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা রবীন্দ্রনাথ -শেষ হইয়াও হইলো না শেষ! ফুরোবার নয়, কিছুতেই ফুরোবার নয়! ত্রিশের মাস একত্রিশে শেষ হয়ে মাঝে মাঝে এই সিনেমাকে অসম্ভব পূর্ণতা দেয়!


বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত জীবনে মাসের শেষ বলে নিদারূন এক সময় আছে! এসময় মঞ্জুরের মন বেশ খারাপ হয়। বেচেঁ থাকা হয়ে পড়ে অর্থহীন, ভাবটা এমন, পকেট ই যখন ফাঁকা তখন আর বেচেঁ থেকে কি হবে! বেনসন নেমে যায় হলিউডে! ভালোবাসার বাসর ধুঁকতে ধুকঁতে উঠে যায় সিএনজি থেকে রিক্সায়! ভর দুপুরে রাস্তার পাশে মুভ এন পিকের অর্ধনগ্ন গোল ঠোঁট, আইস্ক্রীমে চাটন্ত জিভ দেখে শিহরীত শরীর তৃষ্ণা মেটায় তাদের গলার! বড় অদ্ভূত এই সময়! অসহায় পুরোপুরি!

এই যেমন বাড়ির মেগাবাইট শেষ হয়ে যাওয়াতে অফিস থেকে আপডেট দেয়া! চব্বিশ ঘন্টা অনলাইন মঞ্জুরেরা বিরতিহীন হরতালের মত টানা অফলাইন থাকে! থাকতে বাধ্য হয়! বন্ধুদের সাথে আড্ডায় দু’কাপ চা তিন কাপে তিনজনে বেশ আরামসে খায় তখন মঞ্জুরেরা! এক সিগারেট ঘোরে বহু ঠোঁট, মোহনাদের মতামত- ছিহ, তোমাদের কি ঘেন্না বলে কিছু নেই?? তখন হয়ে যায় প্রাণ খুলে হাসার উপাদান! বাকির খাতায় ক্লান্ত হাতে লিখতে লিখতে চায়ের দোকানে সোহেল মামাকে অভয় দেয়া, স্মিত লাজুক হাসির সাথে কেউ যেন শুনতে না পারে এমন ভাবে বলা- মামা বেতনটা পেলেই শোধ করে দেব! শোনা যায় আস্তে করে কিন্তু নিয়মিত সোহেল মামার ছোট করে ফেলা দীর্ঘশ্বাস!!!

লন্ড্রীকে ভুলে যায় মঞ্জুর এসপ্তাহে পুরোপুরি, চার টাকার হুইল দিয়ে ডোবানো কাপড় ইস্ত্রি করতে করতে আয়রন হাতে আয়রনম্যান ভাবতে নিজেকে খারাপ লাগেনা মঞ্জুরের! অসহায় ক্ষোভ ইস্ত্রির শক্তি যোগায় বেশ! বেশ জোরেই ডলা খেয়ে ভাঁজহীন কাপড় ভাঁজ হয়ে যায়!! ধার চাইবে? বন্ধুদের কাছে, ফোনটা ধরেই হাসি মুখে বলবে দোস্ত, মাসের তো শেষ! সবার মুখে একই কথা! এ যেন টক অফ দ্য টাইম!

এ যেন প্রতিকারবিহীন এক অন্যায়! পকেটে থাকা মুঠোফোনে ব্যালেন্স শেষে সুকন্ঠীর গলা বড্ড অপমানের সুরে কানে বাজে তখন! প্রতিধ্বনি হয় যেন ক্ষণে ক্ষণে! ব্যর্থ রাগ জিদে খিটখিটে হয়ে থাকা মেজাজ তখন সহসাই দূষিত করে প্রেমকে, পরিবেশকে-প্রতিবেশ কে! সিলিং এ লোডশেডিং এ নিভে যাওয়া ফ্যানের তিন পাখাকে দেখে মনে হয় সরকারের কুৎসিত হাসি! সরকারের প্রতি বিষেদাগার উপচে ওঠে তখন, মনে হয় হাতের কাছে পেলে খুন করে ফেলতাম সবগুলোকে! তোরা যাবি কোথায়!!!


স্বাস্থ্য ঠিক রাখার অজুহাতে বিশ/ত্রিশ টাকার রিক্সা ভাড়া অনায়াসে হেটেঁ পাড়ি দেয় মঞ্জুরেরা। হাটেঁ আর ভাবে বিশ টাকায় ক’টা সিগারেট হয়! ক’কাপ চা হয়! অল্পকিছু টাকা যদি ফোনে ব্যালেন্স করা যেত, তবু মোহনাকে ফোনে আজ রাতে সে কাছে পেত! মোহনা হয়ত কাল গাল ফুলিয়ে বলবে একটা ফোন দেয়ার সময় কি তার আর কোনদিন হবে না? মোহনারা ভাবে মঞ্জুরেরা তাদের এড়িয়ে যেতে চায়, কিন্তু কিছুতে বুঝতে চায় না, জান, এখন যে মাসের শেষ!!! কেন জান? তুমি কি বোঝনা, এখন যে মাসের শেষ!!!


আসলেই বড় অসহায় এই সময়! শেষ হয়ে যাওয়া টুথপেস্ট কেনার বদলে চলে যায় দক্ষ সার্জনের কাচিঁর তলায়! অসহায় টুথপেস্ট টিউবের পেট চিরে আসে ফেনা! অসহায় শ্যাম্পুর বোতলে পানি ঢুকিয়ে ফেনা বের নাহলে দু’টাকার সানসিল্কের স্যাশে দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে হয় মঞ্জুরদের। মঞ্জুর ভাবে, তাদের কথা চিন্তা করেই এই কোম্পানি এক টাকার স্যাশের ব্যবস্থা করেছিল! কোম্পানীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় ছেয়ে যায় মঞ্জুরেদের মন!!! শালারা ব্যবসা করলেও মন্যুষত্ব বজায় রেখেছে!!!

জনারণ্যের এইঢাকার শহরটাকে তখন বড্ড ফাঁকা ফাকাঁ লাগে, মঞ্জুরেরা তখন নিজেদের আরো নিঃসঙ্গের দিকে ঠেলে দিতে চায়! অবিবাহিত মঞ্জুর সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে পেপারে মুখ লুকিয়ে মা’কে জিগেস করে, কিছু টাকা হবে মা? বিবাহিত বন্ধুদের কাছে গল্প শুনেছে মঞ্জুর, মাসের শেষে বউ এর গোপন ব্যাঙ্কে হাত দেয়ার! ফেরত নেয়ার সময় বউয়েরা নাকি ভাংতির বদলে নোট চায়! ভ্যাট আর সার্ভিস চার্জের নাম করে!এ যেন মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীর রাস্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে প্রাপ্তিতে অক্ষম ক্ষোধের লজ্জার মত! না সইবার, না কইবার!!!

হয়ত জীবন তখন ফরাসী কবি আরতুঁর রেঁবোর বস্তিতে থাকা কবিতা, কিংবা ওপারের মানিক বন্দোপাধ্যায়ের যক্ষাক্রান্ত শেষ ক’টা দিন! ধুঁকে ধুঁকে চলা। ফুরোতেই চায়না, আবার সহ্য ও হয়না! মোহনার সাথে দেখা করবার ইচ্ছেকে মাঝে মাঝে গলা টিপে হত্যা করে মঞ্জুর! কিংবা দেখা হলে, নান্দুজের পেরি পেরি চিকেনের সুরভী পায় মোহনাকে দেয়া পাচঁ টাকার শুকনো-বাসী-জীর্ণ গোলাপ থেকে। তার খুব জানতে ইচ্ছে করে, আহা, মোহনারা কি সেই সুরভী পায়!!!!?

মাসের শেষ ক’টা দিন! এ যেন বিধাতার এক বড় অন্যায়, আদালতের অবিচার!! সইতে বড্ড কস্ট!!!

একমাত্র সুখ হয়ে দাঁড়ায় নতুন মাসের বেতনের চিন্তা! একহাজার টাকার নোটে বঙগবন্ধুর ছবি, লাল-বেগুনী নোট বড্ড আরাম দেয় তখন চিন্তাকে! একা, একা নতুন মাসের বেতনের সূর্যোদয়ের ছবি কল্পনা করতেই অদ্ভূত প্রশান্তি আসে মনে! ফখরুলের পাঞ্জেরী কবিতার মত ক্ষণে ক্ষণে মনে বাজে- মাস শেষ হওয়ার আর কত দেরী, পাঞ্জেরী??? জীবনানন্দের ধানসিড়ি কবিতার মত আবার আসে ফিরে নতুন মাস। ঈশ্বরেরা ভর করে যেন তখন!

কিন্তু! ঐ যে, ফুরোতেই চায় না!! এ যেন রামায়ন মহাভারতের মত বিশাল আখ্যান। সুদূর পথ পাড়ি দেবার মত লম্বা রাস্তা! কিংবা ঈদের নামায শেষে লম্বা মুনাজাত!!! শেষ হবার নয়!!! সেই অস্থিরতা -কখন শেষ হবে মাস!!! এ যেন প্রতিকার বিহীন এক অন্যায়, মধ্যবিত্তের অভিশাপ, পিছু লেগা থাকা মাসিক দুঃস্বপ্ন!

মাসের শেষ ক’টা দিন! এ যেন বিধাতার এক বড় অন্যায়, আদালতের অবিচার!!সইতে বড্ড কস্ট!!!




১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×