সস্তা আবেগ বনাম ঈমানী বেগ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
“আবেগ” কথাটি আমাদের নিত্যদিনের সাথে, প্রতিটি মুহূর্তের সাধে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ।
আবেগ-কে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন।
আবেগকে অনেকে অনুভূতির সমার্থক ধরে নেয়।
যদিও অনুভূতি শারিরীক বা মানসিক দুইই হতে পারে, আবেগ মূলতঃ মানসিক । এটা এমন একটি মানসিক অবস্থা যা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই উদ্ভূত হয়; সচেতন উদ্যম থেকে নয়। এর সাথে মাঝে মাঝে শারিরীক পরিবর্তনও প্রকাশ পায়। সেক্ষেত্রে আবেগকে বলা যায় অনুভুতির উৎস।
সামগ্রিকভাবে, চেতনার যে অংশ অনুভূতি বা সংবেদনশীলতার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত তাকে আবেগ বলা যায় ।
আবেগ-অনুভূতি, দুঃখ-সুখ, আনন্দ-বেদনা এগুলো নিয়েই মানুষ । একমাত্র পাগল ছাড়া সকল মানুষের ভিতরেই আবেগ আছে । কারো কম বা বেশি ।
তবে বাঙালীর আবেগটা বোধহয় একটু বেশিই যে কোন বিষয়েই । হোক সেটা প্রেম-ভালবাসা, হোক সেটা ফুটবল-ক্রিকেট কিংবা হোক সেটা ধর্মীয় মূল্যবোধ ।
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা কিংবা নেশার অন্ধকার জগতে অনুপ্রবেশ, ফুটবল/ক্রিকেটে নিজের দল হারায় আত্মহত্যা, খেলাধুলার মত তুচ্ছ জিনিস নিয়ে খুন-খারাবি, নিজের পছন্দের দলের জন্য জমি বিক্রি করে পতাকা বানানো এগুলোই যেন বাঙালীর আবেগ অনুভূতির ব্যতিক্রমী বহিঃপ্রকাশ ।
না, আমি এ আবেগকে ছোট করে দেখছি না । প্রশ্নই উঠে না এ আবেগকে ছোট করে দেখার । তবু একটা কিন্তু থেকেই যায় ।
আবেগই কি সব???
আমার আবেগ নিয়ে লেখার ইচ্ছা হলো, ফেসবুকে ইসরাইলবিরোধী কতিপয় স্ট্যাটাসে সস্তা আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখে ।
এ লাইনটা পড়ার পর হয়তো আমাকে গালি দিতে ইচ্ছা করবে । অনেকে হয়তো কমেন্টে গালির ফুলঝুড়ি ছড়াতে পারেন ।
যদি তাই করেন, তাহলে আপনাকে প্রশ্ন করি, আপনাদের ঈমান কি সাহাবীদের চাইতেও বেশী ???
না, আমি বলছি না সাহাবীদের আবেগ অনুভূতি ছিল না । কিন্তু উনারা উনাদের আবেগটাকে ঈমানের বেগে পরিণত করেছিলেন ।
বর্তমান কিছু সস্তা আবেগের কথা উল্লেখ করলাম :
# প্রথমত উল্লেখ করতে হয় হ্যাশট্যাগের কথা
আপনার কি মনে হয় ???
একটা হ্যাশট্যাগ দিয়ে #supportGaza লিখলেই (যদিও আমি লিখেছি) ইসরাইল ভয় পেয়ে সব হামলা বন্ধ তাদের অস্ত্রশস্ত্র অস্ত্রাগারে গিয়ে জমা করবে ???
সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের বুকে টেনে নিবে ???
না, কখনোই নয় ।
আল্লাহ পাকের ঘোষণা,
“ঈমানদারদের জন্য মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে ইয়াহুদী ও মুশরিক” (সূরা আল-মায়িদা:৮২)
অর্থাৎ যারা মুসলমানদের চিরশত্রু তাদের শুধুমাত্র একটি হ্যাশট্যাগের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয় ।
# এবার দ্বিতীয় প্রসঙ্গে আসি । দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি হচ্ছে, ইসরাইল পণ্য বর্জনের ঘোষণা । আমার কাছে এ বিষয়টি খুব অবাক লাগে । কোনটি ইসরাইল পণ্য কোনটি পণ্য না সেটা নিয়ে আমার কোন বিতর্ক নেই । তবে আপনি কি করে মনে করেন, এ পণ্যগুলোর বিকল্প তৈরি করা ছাড়া আপনি সেগুলো পরিত্যাগ করতে পারবেন ???
লক্ষ্য করুন, ২০০৯ -এ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের এক ভাগ মুসলমান । এ গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৬৮০ কোটি যার মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১৫৭ কোটি, অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩ শতাংশ মুসলমান ।
এরপর কথা হচ্ছে, এই ২৩% মুসলমানের মধ্যে কত ভাগ মুসলমান ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করে ? আবার এদের মধ্যে যারা নামায আদায় করে তাদের মধ্যে কত ভাগ নিজের ব্যবহারিক জীবনে ইসলামকে মেনে চলে । যারা ব্যবহারিক জীবনে ইসলামকে মেনে চলে, শুধুমাত্র তাদের পক্ষেই সম্ভব তথাকথিত ইসরাইলী পণ্য বর্জন করা । যে মুসলমান নামধারী লোকগুলো ইফতার শেষ না হতেই সিগারেটের জন্য পাগল হয়ে যায়, তারাবীহ পড়া বাদ দিয়ে শপিং মলে ছুটে বেড়ায় তাদের পক্ষে এ ত্যাগ সম্ভব নয় । আর সামান্য পরিমাণ লোক যদি পণ্যগুলো বর্জন করেও তাহলে ওদের কিছু আসবে যাবে না ।
#তৃতীয়ত যে কথাটি বলব, তা হল পিটিশনে সাইন করা ।
আবেগ আর কাকে বলে । আপনাদের কি মনে হয় আমেরিকার প্রেসিডন্ট খুব দূর্বল একটা লোক যার মুখ খুলানোর জন্য এক লক্ষ সাইন লাগবে ???
সে যদি সত্যি মন থেকে শান্তি চাইতো তাহলে সে ইসরাইলকে এমনিই বলতে পারতো । মূল কথা হচ্ছে সেও চায় মুসলমানদের ধ্বংস । এর জন্যই তার এই মৌন সম্মতি । তবুও যদি আপনার সেই স্পেনের মুসলমানদের মত Fool থেকে যান তাহলে, আমার আর কিছুই বলার নেই ।
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ,
আমরা আবেগের বশে অনেক কথা বলে বসি বা অনেক কাজ করে বসি যার কোন ফলাফল নেই । আজকে মুসলমানরা প্রযুক্তির দিক দিয়ে ইয়াহুদীদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে । এখন, কোন জাতি বা দেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে প্রযুক্তি । জ্ঞান-বিজ্ঞান ব্যতীত আজকে সবাই অস্তিত্বহীন ।
আইনস্টাইন যথার্থই বলেছেন :
“ধর্মহীন বিজ্ঞান অন্ধ
আর, বিজ্ঞানহীন ধর্ম পঙ্গু”
আজকে বিজ্ঞানের কলকাঠি ইয়াহুদীদের হাতে থাকার কারণেই তারা পুরো পৃথিবীকে ভেজে খাচ্ছে ।
আপনি তো ইয়াহুদীদের পণ্য বাদ দিতে চান ।
গুগল তো ইয়াহুদীদের কোম্পানি; পারবেন বাদ দিতে গুগলকে ।
আপনি যে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিবাদের আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন সেটার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গও তো একজন ইয়াহুদী । পারবেন আজকে থেকে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করে দিতে ।
পারবেন না । ততদিন এটা কোনভাবেই সম্ভব নয় যতদিন পর্যন্ত না কোন মুসলিম বিজ্ঞানী বা কোন মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার গুগল, ফেসবুকের মত বিকল্প কিছু তৈরি করতে পারবেন । এবং এগুলো থেকে লাভ করা অর্থ মুসলিম অস্ত্রাগারের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন ।
আমাদের ঈমানী শক্তি সাহাবীদের মত নয় যে কামানের বিরুদ্ধে ইট নিয়ে যুদ্ধ করতে পারবো ।
হ্যাঁ, প্রথমে এ কাজগুলো অসম্ভবই মনে হতে পারে । কিন্তু, আল্লাহর উপর ভরসা করে কাজে লেগে যান, আল্লাহর কসম তিনি সাহায্য করবেনই ।
পরিশেষে, আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই । মুসলানদের ভিতর আজ ২ টা শক্তির খুব অভাব: ১. চারিত্রিক শক্তি ২. ঐক্যের শক্তি ।
এ দুটো শক্তি যতদিন অর্জিত না হবে, ততদিন মিথ্যার মোকাবেলায় সত্যকে
বারংবার মুখ থুবড়ে পড়তে হবে ।
চিন্তা করুন, আজ মুসলমানদের ভিতরেই কত ভেদাভেদ, কত ফেরকা, কত হিংসা-বিদ্বেষ আর অহমিকা । এ কারণেই আজ মুসলামাদের সেই জৌলুস হারিয়ে গেছে । মুসলামনরা যদি আজ ঐক্যের শক্তিতে বলীয়ান থাকতো, তাহলে পৃথিবীর কোন পরাশক্তি মুসলমানদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করতো না ।
সুতরাং, নিজের সস্তা আবেগকে ঝেড়ে ফেলুন ।
নিজের ভিতর জাগিয়ে তুলুন ঈমানী শক্তিকে । সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নেমে পড়ুন প্রযুক্তির রণাঙ্গনে ।
আজকের পৃথিবীতে সস্তা আবেগের কোন প্রয়োজন নেই, আজ খুব বেশি প্রয়োজন ঈমানী বেগ ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য
ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার
(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন
সম্পর্ক
আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭
ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।
এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন
একাত্তরের এই দিনে
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন