somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বরাহপোনাদের ঘৃণ্য কুকর্মের নতুন ধরণ( ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে হেয় করার অপচেষ্টা)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলুন জাফর ইকবালের নিজের এক সহকর্মীর কাছে শোনা যাক।

লিখেছেন আলমগীর
ইন্টারনেটে বাংলা ব্লগে, ফোরামে দেশের যে ব্যক্তিটিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশী আলোচনা সমালোচনা বাদানুবাদ হয় তিনি হচ্ছেন ড. জাফর ইকবাল। তিনি আমেরিকায় কী করেছেন, কীসে পাস করে কীসে প্রফেসর হয়েছেন, পাব্লিকেশন কী করেছেন, কার কার লেখা চুরি করে সায়েন্স ফিকশন লিখছেন, দুর্নীতি করে কাকে চাকুরি বঞ্চিত করলেন, ভারতের দালালী করলেন, আওয়ামী লিগের চামচামি করলেন, টিপাইমুখ নিয়ে কিছু বললেন না, শিক্ষানীতি থেকে ধর্ম তুলে দিচ্ছেন, তার নানা রাজাকার -- এমন কোন ইস্যু নেই ড. জাফর ইকবালের নাম আসে না।

তাকে নিয়ে যত অপপ্রচার দেখেছি, তার অধিকাংশই জাশির লোকজনের। তবে মাঝেমধ্যে হিসাব না মিলানো প্রগতিবাদীও দেখেছি দু'এক জন। আর এসব অপপ্রচারের উত্তর দেয়ার অলিখিত দায়িত্ব নিয়েছিল তার কিছু ছাত্র; নিজেদের নাম প্রকাশ করেই। আবার হঠাৎ হঠাৎ ছাত্র দাবী করে বিরূপ লেখাও দেখা যায়, যদিও নাম-পরিচয় দাবী করলে তারা চুপসে যায়।

ড. জাফর ইকবালকে নিয়ে যে কোন ধরনের লেখায় আমি কেবল পাঠক হয়ে থেকেছি। (একমাত্র ব্যতিক্রম সাস্টের সিএসইর নিজস্ব ফোরাম আর এই সচলায়তনে বজলুর রহমান নামে এক ভদ্রলোকের একটা মন্তব্য)। আমার এই নিষ্ক্রিয়তার কারণ হলো-
আমি নিজে তার ছাত্র ছিলাম, তারপর সহকর্মী। কেবল সহকর্মী বললে ভুল হবে; একান্ত সহকর্মীই বলা যায়। পাঁচ বছরের বেশী ধরে চাকুরিকালে প্রচুর কাজে সঙ্গী ছিলাম, তিনি ছুটিতে গেলে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বেও থাকতাম। তার বাসায় যেমন আমার নিজের যাতায়াত ছিলো, আমার বাসাতেও তিনি এসেছেন। এখনও ফোনে, মেইলে যোগাযোগ হয়। এই যখন অবস্থা, তখন স্বভাবতই তার সম্পর্কে আমার কোন বক্তব্য নির্মোহ হবে না। আমি কোন কিছু বললেই যে কথাটা আসবে, 'আপনে তার অমুক আপনে তো এটা বলবেনই।'। (এই বোধটা এসেছে ওই যে আগে সাস্ট ফোরামের কথা বললাম সেখানে কথাবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে।)

এই পোস্টটা লেখার আগে তাই বহুবার ভাবলাম। তাকে নিয়ে প্রচলিত সব কথার পয়েন্ট বাই পয়েন্ট উত্তর দেয়া যায়। তবে নিরুত্তর থাকাটাই নিজের কাছে শ্রেয় মনে হয়। তবু যে কারণে এ লেখা তা হলো সম্প্রতি ওয়েবে আসা একটা ভিডিও। ভিডিওটি একটা বাংলা ব্লগে একাধিক পোস্টে এসেছে এবং জাশির জানোয়াররা নিজেদের সুবিধামতো ব্যাখ্যা দিচ্ছে। তাদের কথামতো-
ড. জাফর ইকবাল একটা নাইট পার্টিতে ছেলেমেয়েদের সাথে হিন্দী গানের তালে তালে নাচছে। ভিডিও চালালে দেখা যায় শুধু নাচছে না, একটা মেয়ের কাঁধে হাতও দিচ্ছে।

এই এতটুকু বলে ভিডিওটি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ভিডিওর লিংক ধরে পাওয়া গেল একটা ফেসবুক গ্রুপ। সেটা নামে "জাফর ইকবালকে জানুন" টাইপ হলেও ওয়াল ভর্তি তিনকোণা ছাগুচিফের সব পোস্ট দিয়ে। সেখানেও কোথাও বলা নেই ভিডিওটি কোথায় ধারণ করা, কে ধারণ করেছে। কারো মতে, ডিপার্টমেন্টের পার্টি, কারো মতে থার্টি ফার্স্ট নাইটের। একই ভিডিও এবার ইউটিউবে চলে এসেছে। বর্ণনার শেষে লেখা আছে:we humbly request our sisters to keep distance from this characterless "teacher"... !!!

ড. জাফর ইকবাল কী বিশ্বাস করেন, কী আন্দোলনের সাথে যুক্ত সেটা সবাই জানে। কে তার শত্রু কে তার মিত্র সেটাও জানে। তবে যে কথাটা অনেকেই জানেন না, তা হলো এত লোকজন থাকতে জাশির জানোয়াররা তাকে টার্গেট করে কেন। এর একটা উত্তর আমার জানা। আমাদের অনেকেই যখন "বর্বর হানাদার বাহিনী ও এ দেশীয় দোসর" বলে নিরীহ বর্ণনা শুরু করেন, বক্তৃতা দেন, তখন জাফর ইকবাল স্পষ্ট করে বলেন, "পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর দেশীয় রাজাকার যার নেতৃত্বে ছিল মতিউর রহমান নিজামি"। তার মতো নাম ধরে সুনির্দিষ্ট করে আর বেশী কেউ বলেন না। জামাতিদের গাত্রদাহের অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটা প্রধান।

ড. জাফর ইকবাল কিশোরদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়; তার লেখার জন্য, গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য এবং আরো নানা কারণে। তিনি যখন রাজাকারদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তখন সেটা নতুন প্রজন্মের কাছে খুব সহজেই পৌঁছায়। সর্বশেষ বিশ পৃষ্ঠায় যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখেন সেটাও বহুজনের কাছে সহজপাঠ্য হয় ও গ্রহণযোগ্যতা পায়। এত কিছু দেখে জানোয়ারদের ভয়তো হবেই। এজন্য ড. জাফর ইকবালকে পচানোর দরকার হয়, সেটা যে কোন উপায়েই হোক। এর সর্বশেষ সংযোজন এই চতুর ভিডিও।


ভিডিওটিতে প্রথমেই আমি দেখি ড. ইয়াসমিন হককে। তিনি পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক; একাধিক মেয়াদে ছাত্রীহলের প্রভোস্ট। সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন, বিভিন্ন কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ভিডিওতে গানের তালে তালে তিনি হাততালি দিয়ে নাচছেন: বেশী বেশী নাচ বোঝানোর জন্য ক্যামেরাটাকে ঝাঁকানোও হচ্ছে। তার অদূরে, এক থেকে দেড় মিটারের মধ্যেই ড. জাফর ইকবাল, সেই একই কায়দায় নাচছেন। তার সামনে আরেকটা মেয়ে। কয়েক মুহূর্ত পরেই কাঁধে হাত দিয়ে তিনি মেয়েটিকে কাছে টানছেন। এই মেয়েটি আর কেউ নয়, ড. ইয়াসমিন ও ড. জাফর ইকবালের কন্যা ইয়েশিম।

এখানে আমি যা বললাম তা জাশির জানোয়াররা গোপন করেছে। কন্যা ইয়েশিমকে তারা ছাত্রী বানিয়েছে। তাদের মতে, ড. জাফর ইকবাল ছাত্রীদের গায়ে হাত দেয়, চরিত্রহীন লম্পট। শুধু এ অংশটুকুর ক্লিপ বানিয়ে ইমেইলে বিতরণের খবরও আসছে (নিচে কনফুসিয়াসের মন্তব্য)।

কীসের অনুষ্ঠান ছিল সেটা, সেটা হাততালি না নাচ, নাচ হলে সেটা করা ঠিক হয়েছে কিনা, গান হিন্দী না হয়ে বাংলা নয় কেন- এসব প্রশ্ন তুলে ইচ্ছেমতো কথা বলছেন অনেকে। এ নিয়ে কোন নৈতিক/অনৈতিক তর্কে আমি যেতে আগ্রহী নই। তবে যেটুকু তথ্য না জানালেই নয় তা হলো: অনুষ্ঠানটি ছিলো ছাত্রী হলের সংসদের আয়োজনে, হলের ভেতরে। ড. ইয়াসমিন গিয়েছিলেন প্রভোস্ট বলে, আর তার সাথে আমন্ত্রিত হয়ে ড. জাফর ইকবাল আর তাদের কন্যা ইয়েশিম।

ড. জাফর ইকবাল অস্বাভাবিক মিশুক। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তিনি প্রচুর সময় দেন। রাস্তায় র‌্যালি করেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যান, গাছ লাগান, বন্যায় ত্রাণ দিতে যান। সব সময়ই তার সাথে ছাত্র-ছাত্রীরা থাকে। জামাতিতের কান-চোখ সব সময়ই সজাগ, তাই এসব কিছুর মধ্যেও ষড়যন্ত্র করার উপাদান পায়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে, উদ্যোগ শুরু হয়েছে তাতে তাদের মাথা ঠিক থাকার কথা না। ড. জাফর ইকবালকে কলঙ্কিত করার কোন চেষ্টাই তারা বাকী রাখবে না।

আরো ভিডিও, ছবি হয়তো অপেক্ষা করছে।
চোখ-কান খোলা রাখা খুব জরুরী


সূত্র ; সচলায়তন
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:৫৯
৫৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×