তিন ল টাকা দিয়ে কেউ যদি হজ করেন তাহলে তার নামে এর সওয়াব ফেরেশতারা লিখে থাকেন। চার ল টাকার যাকাত আদায় করলে তার সওয়াব ফেরেশতারা লিখে থাকেন। আর কেউ যদি কষ্ট করে শীতের রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে থাকে তার পরও এর সওয়াব ফেরেশতারাই লিখে থাকেন। সিয়ামই এক আশ্চর্যজনক ইবাদত যার নেকি আল্লাহ নিজ হাতে লিখে থাকেন। সিয়াম হলো এক মজবুত দূর্গ যে দূর্গে সে নিরাপদ থাকে। এটা এমন এক দূর্গ যে দূর্গে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না। কোনো পাপ সে দূর্গকে নষ্ট করতে পারে না।
বিচারের মাঠে সিয়াম এবং কুরআন মাজীদ মানুষের পে কথা বলবে। সিয়াম বলবেÑ হে আল্লাহ, আমি এই বান্দাকে পাপ কাজ থেকে বিরত রেখেছিলাম। কুরআন বলবেÑ হে আল্লাহ, আমি এই বান্দাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। এই লোকটির ব্যাপারে আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আপনি এই বান্দাকে জান্নাতে দিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেন সিয়াম আমি তোমার সুপারিশ গ্রহণ করলাম। কুরআন, আমি তোমার সুপারিশ গ্রহণ করলাম। ঠিক আছে আমি একে জান্নাতে দিলাম।
সিয়াম বলবে আল্লাহ আমি এই বান্দাকে দুইটি কাজ থেকে বিরত রেখেছি। এক, খাদ্য খেতে দিইনি; দুই. প্রবৃত্তিকে ঠেকিয়ে রেখেছি।
সিয়ামের নির্দিষ্ট কোনো নেকির উল্লেখ নেই। কেউ যদি কোনো রুগীকে দেখতে যায় তাহলে সত্তর হাজার ফেরেশতা ওই লোকের জন্য দোয়া করতে থাকেন। কেউ যদি কোনো মানুষের জানাযায় শরিক হয়ে মাটি দেওয়া পর্যন্ত থাকেন তাহলে সে দুই কিরাত নেকি পাবে। এক কিরাত সামান উহুদ পাহাড় পরিমাণ নেকি। বার রাকায়াত নামাজ আদায় করলে তাহলে প্রতি বার রাকায়াত নামাজ সমান জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। তাহলে অন্যান্য কর্মের নেকি উল্লেখ আছে কিন্তু সিয়ামের কোনো নির্দিষ্ট নেকির কথা উল্লেখ নেই। আল্লাহ বলেন, সিয়াম আমার ব্যাপার আমি নিজে এর প্রতিদান দিব। সে আমারই কারণে দুইটা জিনিস ত্যাগ করেছে। এক. খাদ্য গ্রহণ; দুই. প্রবৃত্তিকে দমন। খাদ্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা সহজ তবে প্রবৃত্তিকে ঠেকিয়ে রাখা কঠিন। রাসূল (স.) বলেছেন, নিয়ম-নীতি দ্বারা জান্নাত ঘেরা আছে প্রবৃত্তির দ্বারা জাহান্নাম ঘেরা আছে।
সপ্তাহে দুই দিন বান্দার পাপ এবং নেকি আল্লাহ দরবারে পেশ করা হয়। তা হলো সোমবার এবং বৃহস্পতিবার। রাসূল (স.) বলেন, আমার মনটা চায় আমার যখন রিপোর্ট পেশ করা হয় তখন আল্লাহ যেন দেখেন আমি সিয়াম আছি। কেউ যদি আরাফার দিনে সিয়াম পালন করে তাহলে অতীতের এক বছর এবং ভবিষ্যতের সকল পাপ মা হবে। কেউ যদি মহররমের দুই দিন সিয়াম রাখে তাহলে বিগত এক বছরের পাপ মা করা হবে। প্রতি মাসের তিনদিন সিয়াম পালন করা উচিত তের, চৌদ্দ, পনের। শাবান মাসে রাসূল (স.) বেশি বেশি সিয়াম পালন করতেন। কারণ, এ মাসে মানুষের বার্ষিক রিপোর্ট পেশ করা হয়। কোনদিন রিপোর্ট পেশ করা হয় তা তার জানা ছিল না। তাই তিনি নির্দিষ্ট কোনো দিন সিয়াম না রেখে এ মাসে বেশি বেশি সিয়াম পালন করতেন। অমাদের ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তান যে পনের শাবান নির্দিষ্ট করে সিয়াম পালন করা হয় তা ঠিক নয়। সহিহ হাদীসের আলমের বিপরীত।
রাসূল (স.) কেউ যদি আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য একদিন সিয়াম পালন করে তাহলে তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছর দূরে সরিয়ে রাখা হবে। অন্যত্র আছে, তার থেকে জাহান্নামকে একশ বছর দূরে সরিয়ে রাখা হবে। আরেক জায়গায় আছে, তার মাঝে আর জাহান্নামের মাঝে পাচশ বছর দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে। আরো আছে, তার মাঝে আর জাহান্নামের মাঝে একটি গর্ত খোড়া হবে তার দূরত্ব হবে আসমান জমিনের সমান। কেউ যদি একদিন নফল সিয়াম পালন করে তাহলে সে জান্নাতে যাবেই। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি নফল সিয়াম পালন করে আল্লাহর সন্তুষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রাখা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার প্রিয় বান্দা হিসেবে কবুল করুন-আমিন, চুম্মা আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ দুপুর ২:১১