ঊষানির বয়স তখন কত হবে??
২ কি ৩ মাস.....
আমি তখন মাত্র উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছি,
আমার জীবনে ঊষানির আগমন আমাকে উদ্বেলিত করে
তুলেছিল,
ছোট ছোট হাত, ঠিক মত নির্দিষ্ট করে কিছু ধরতে পারে না,
পা গুলো কি তুলতুলে, ঘাড় তখনো শক্ত হয় নি,
১ বছর কেটে গেলো, হাটতে হাটতে আছাড় খেয়ে পড়ে,
আবার উঠে আবার হুমড়ি খেয়ে পড়ে,
আমার সাথে সাথেই রাখি, ঈশ্বর নিজ হাতে আমাকে একটা জীবন্ত পুতুল তৈরী করে দিয়েছে, আমি খেলি, হাসি, কাঁদি....
চাকুরী নিলাম ইপি জেড এর বাইং হাউজে,
বেতন ৮ হাজার,
প্রোডাকশান ম্যানেজার হিসাবে.....
আমার কলিগ দীপ্তির সাথে খুব ভাল সম্পর্ক হয়ে যায়,
ঊষানিকে আমার সাথে করেই আমি ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম, সি ই ও স্যার বলেছিল বাইরে রেখে আসতে,
আমি চাকুরীকে স্যরি বলে উঠে যেতেই, আমার চাকুরী কনফার্ম হয়ে গেলো, আমার যোগ্যতা শুধু এটুকুই যে আমি সব পারি, কিন্তু সার্টিফিকেট নেই।
সেই থেকে আমি সবসময়ই অফিসে সাথে করে নিয়ে যাই ঊষানিকে। দীপ্তি আমাকে খুব সাহায্য করতো ঊষানিকে সামলাতে।
স্কুলে ভর্তি করালাম, ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো আমার ঊষানি।
কবে যে ক্লাস ফাইভে উঠে গেলো বুঝতে পারলাম না,
ততদিনে আমার ৪ টা প্রমোশন হয়ে ডিভিশনাল ম্যানেজার।
মাঝে মাঝেই ট্যুরে যেতে হয়, ঐ সময়টা দীপ্তি আর ঊষানি একসাথে থাকতো....
ধীরে ধীরে আমাকে বুঝালো দীপ্তি, যে, ঊষানী এখন দ্বাদশী তার সবকিছু এখন আর আমাকে বলা যাবে না। তার মা কে এখন খুব দরকার।
দীপ্তি জানে, আমার স্ত্রীর সাথে ঊষানির জন্মের পরেই ডিভোর্স হয়ে গেছে, ঊষানি কখনই আমাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করে নি।
মাঝে মাঝে আমিই অবাক হতাম।
দীপ্তির স্বামী , কুন্তলও খুব চমৎকার একজন মানুষ, তার ছেলে স্বপ্ন, ঊষানির চেয়ে ৪ বছরের বড়, দুজনেই খুব ভাল বন্ধু, সেই ছোটবেলা থেকেই।
ঊষানী খুব চঞ্চল, তবে গোছানো একটা মেয়ে। আমি ওকে ডাকি Careless Beauty.
কোঁকড়ানো চুল, আগোছালো ভাবে বাঁধা থাকে। আমি অফিস থেকে ফিরলেই এখনও আমার কাঁধে উঠে বসে থাকে.....
কেউ দেখলে বুঝবেই না যে উষানি Geology নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আমরা থাকি, বহদ্দরহাট।
একদিন দীপ্তি বললো, " অর্ঘ্য দা, ঊষানিকে কি আজীবন আপনার কাছেই রাখবেন??"
আমার টনক নড়লো, পরে জিজ্ঞেস করার সাথে সাথেই জানতে পারলাম, ঊষানির নিজের একটা পছন্দ আছে।
জিজ্ঞেস করলাম, " ছেলে কি করে??"
ঊষানি প্রায় কেঁদেই ফেলছিলো ভয়ে,কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো
" একটা স্টিল মিলে চীফ ইঞ্জিনিয়ার"
আমি শুধু বললাম, "কাল বাসায় আসতে বলো"
আজ ২৬ জুলাই, কাল ঊষানির বিয়ে।
হুট করেই চলে যাবে, যেভাবে এসেছিল আমার জীবনে,
একাকিত্বের সাথী হয়ে, আমার অপূর্ণ স্বপ্নের পরিপুরক হয়ে,
হ্যাঁ বিয়েটা, স্বপ্নের সাথেই হয়েছে। সে এখন দুবাইয়ে প্রজেক্ট ক্যাক্টাস দ্বীপের ইঞ্জিনিয়ার। বিয়ের সাথে সাথেই নিয়ে যাবে ঊষানিকে।
হঠাৎ, উষাণি আমার রুমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
"বাবা, Thanks for being my mom, আমি জানি না আমার মা কোথায়। কখনো জানতেও চাইই নি, তবে বাবা পরজন্মেও আমি তোমার ঘরে জন্মাতে চাই"
রুমটাতে আজ কেবল জিরো পাওয়ারের ড্রিম লাইট জালিয়ে রেখেছি,
নাহ উষানি তার নব জীবনের ঊষাতে দাঁড়িয়ে আছে। চোখেরজল নয়, হাসিটাই উপহার দিব।