অফিসর তাড়া নেই ঠিকই। তবু তাড়াহুড়ো করেই সকালের খাওয়ার তৈরী করছেন মিসেস মজুমদার। আর বিড়বিড় করে বলছেন ছেলেটার যেন খাওয়ার গুলো পছন্দ হয়। যা তিরিক্ষি মেজাজ হয়েছে ছেলের। কাল রাতে তো খেলোই না! না খেয়েই ওই কড়া ওষুধগুলো খেলো। চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো তাঁর। তিনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন, মাত্র আধ ঘন্টা বাকি ওষুধের। এরমধ্যে কলিং বেলের আওয়াজ।
দরজা খুলতেই দিয়া বলে ,কখন থেকে বেল বাজাচ্ছি। ৫মিনিট হয়ে গেলো । মিসেস মজুমদার জবাব দিলেন ,' পাশের বাড়িতে এমন জোড়ে গান বাজায় যে নিজেদের ঘরের কথা শোনা যায় না। ' দিয়া এই কথায় সায় দেয় ও দুজনেই রান্নাঘরের দিকে এগোয়।
তারপর পনীর এর স্টাফিং তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মিসেস মজুমদার । দিয়া ওনাকে টুকিটাকি সাহায্য করতে থাকে।
হঠাৎ , কী যেন একটা ভাঙার শব্দ আসলো ঋষভের ঘর থেকে। দিয়া ব্যস্ত হয়ে 'আমি দেখছি' বলে ছুটে যায় সেই ঘরের দিকে । সে ঢোকা মাত্রই ঋষভ বলে ' কেনো এসেছ তুমি? কেনো আসো? ' দিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে কাঁচের টুকরো তুলতে তুলতে দেখে সাইড টেবিলের গ্লাসটা ভেঙে পড়েছে। এবার স্বরটা আরো তীব্র ও কঠিন হয় ঋষভের । সে বলে ' কেনো এসেছো ?' দিয়া সরাসরি তাকায় বিছানায় বসা ঋষভের দিকে। দেখে কী ভয়াবহ ক্ষোভ তার চোখে। তার কথার ঠিক কী উত্তর দেবে ভাবতে না ভাবতেই দিয়ার চোখ বিছানার ভেজা চাদরে আটকে যায়। তখন অদ্ভুত ঠান্ডা গলায় ঋষভ বলে ওঠে ' মোবাইলে চার্য ছিল না । ডাকলাম । কেউ শুনতে পেল না.টেবিলটা নাড়তে যেতে গ্লাসটা পড়ে গেলো ।' কথাগুলো শুনতে শুনতে দিয়া অভিকর্ষের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে চোখের জল চোখেই আটকে রাখে। তারপর খুব ধীর কিন্তু প্রত্যয়ের সাথে বলে 'আপাতত কাকুকে ডাকছি। বাজারে গেছেন।এখনি আসবেন। তবে ,কয়েকদিন বাদে আর ডাকার দরকার হবে না । '
ভাবলে মনে হয় কালকের কথা। গত বছর অফিসিয়াল একটা প্রোজেক্টে গিয়েছিল ঋষভ । ফেরার পথে প্রবল বৃষ্টি। নিজেই ড্রাইভ করছিল সে। রাস্তায় গাড়ির চাকা স্কিট করে এক্সিডেন্ট। তারপর থেকে দীর্ঘ লড়াই। প্রাণ বাঁচলেও নিম্নাঙ্গ প্যারালাইজড হয়ে যায় তার।
এইসব উথাল-পাথাল ভাবতে ভাবতেই ,কোথা থেকে যেন শক্তি নিয়ে এসে ঋষভের দিকে ধীরেধীরে এগিয়ে যায় দিয়া । স্বাভাবিক ও দৃঢ় কন্ঠে বলে ' এসব কী শুনছি? রাগ দেখাচ্ছো? তুমি কবে থেকে মেল শভিনিস্ট হলে? একমাত্র তারাই মেয়েদের উপর রাগ দেখায়। নয়ত ছেলেদের রাগ দেখানোর রাইট নেই। যা কিছু রাগ মেয়েরা মানে এখানে আমি রাগ দেখাবো আর তুমি তোষামোদ করবে। ধরো আমি যদি সব দেওযালের রঙ কালো করেও দেই তবু তুমি ভালো বলবে! ওহো , একটা কথা জানানোর আছে আমি ড্রাইভিং শিখছি । কী হোলো ? বিশ্বাস হচ্ছে না ? ঠিক আছে , চালিয়ে দেখাবো তোমায় । হ্যাঁ সিগন্যাল খাবো ঠিকই! তো কী ? তুমি ফাইন দিয়ে দিয়ো ।তোমার অনেক পয়্সা আর সে জন্যেই তুমি কিপটে । বারবার ওয়াকিং ডিসট্যান্স দেখিয়ে হাঁটাও । কিন্তু আমি তো এতোটুকুও হাঁট্তে ভালোবাসিনা । তাই ঠিক করেছি , এখন থেকে সবসময়ই গাড়ি ইউজ করবো । আর ভাবছি ,একজন পার্মানেন্ট ড্রাইভার রেখে নেবো ।কারণ ,আমি কথা বললে তো বলতে থাকি বলতেই থাকি বলে , তোমার চালাতেও অসুবিধা হোতো । তাই , এখন থেকে নিজেরা নিশ্চিন্তে গল্প করবো আর ........
সে বলেই যাচ্ছিল । আর হতবাক হয়ে ঋষভ ভাবছিল , কীভাবে এসব কথা বলছে দিয়া ? যদিও দিয়ার কথার বাহ্যিক পরিবর্তন কিছু ছিল না । চিরকালই বেশী কথা বলে সে । যার বেশীরভাগটাই শুনতে লাগে হিজিবিজি , অকারণ ! এখ্নও তেমনই লাগছিল ।একমাত্র ঋষভ অনুভব করতে পারছিল , এর পিছনে কতো গভীরতা আছে ।সেই গভীরতায় ডুবে যাচ্ছিল সে .......
আজ , এই বদ্ধ ঘরে সব কালো মেঘ ছিঁড়ে বৃষ্টি এলো । এক পশলা প্রেম বৃষ্টি!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৫