ঘুরে এলাম শেলা নদীতে এবং দেখে এলাম পরিবেশ বিপর্যয়ের কিছু নগ্ন চিত্র।
কথায় আছে পানি আর তেল কখনও একসাথে মিশে না। গত ৯ তারিখে ডুবে যাওয়া ফার্নেস তেল বাহী অয়েল ট্যাংকার এ থাকা ৩,৫০০০০ লিটার ফার্নেস তেল এখন ভাসছে শেলা নদীর পানিতে। কয়েক মিলিমিটার পুরু এই ফার্নেস অয়েল এর আস্তরণ জোয়ার ভাঁটার টানে ছড়িয়ে পড়ছে আরও দুরদুরান্তে। আমরা ওখানে যেয়ে যতদূর জানতে পেরেছি এই তেল এখন মানিকতলা পয়েন্ট থেকে জয়মনি ঠোডা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিমি. জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
অসংখ্য জীববৈচিত্রে ভরপুর পৃথিবির সব থেকে বড় ম্যানগ্রোভ বন এর অভ্যন্তরে ঘটা সব থেকে বড় মানবসৃষ্ট বিপর্যয় এটা। এই রাসায়নিক বিপর্যয় এ যে সুন্দরবন এর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পরবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর জায়গাটি চাদপাই বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম অভ্যন্তরে এবং ডলফিন এর ব্রিডিং এরিয়া এর অন্তর্গত। এলাকাবাসীরা জানায় যে এলাকাতে মাঝে মাঝেই ডলফিন ভেসে উঠত কিন্তু তেল ছড়িয়ে যাবার পর থেকে একবারও দেখা যায়নি কোনও ডলফিনকে। কারন অই এলাকা এখন ফার্নেস তেলের ঝাঁঝালো গন্ধে ভারী হয়ে আছে। দুই দিকের সবুজ ঘাস এখন তেলে ভিজে কালো। যেখানে সকাল সন্ধ্যা পদচারনা ছিল হরিণদের তারা আজ ভয়ে পালিয়েছে বনের অভ্যন্তরে। সত্যি কথা বলতে কি একটা পাখি পর্যন্ত আমি দেখিনি নদীর পাড়ে কিংবা বনের মধ্যে যতদূর দেখা যায়। এই তেল এর লেয়ার যদি বেশিদিন পানির সারফেসে থাকে তাহলে নদীর ইকোসিস্টেম মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেই। কারন সূর্যরশ্মি যদি পানির ভেতর ঢুকতে না পারে তাহলে ফুড প্রোডাকশন সহ অক্সিজেন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেয়ে সমস্ত জলজ ইকোসিস্টেম টি ভেঙ্গে পরতে পারে। এতে অক্সিজেন ও খাদ্যের অভাবে অনেক জলজ প্রাণী যেমন বিভিন্ন জাতের মাছ সহ অনেক জলজ উদ্ভিদ মারা যাবে এবং সুন্দরবন এর কুমির গুলোও মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এলাকাবাসীরা নিজেদের মতো করে তেল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে ৬০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করছে।
পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ঘটনা বিরল না। এরকম পরিস্থিতিতে অয়েল ডিকম্পোজিং ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেগুলা অয়েলের বন্ড ভেঙ্গে সেগুলোকে পানিতে মিশে যাবার উপযোগী করে তোলে। তবে এটা প্রচুর পরিমানে অক্সিজেন ব্যবহার করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড প্রকৃতিতে অবমুক্ত করে। এবং এগুলো মারা যাবার পরেও পরিবেশ দূষণ করে। যা বনের পরিবেশকে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। তাই এখন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অনতিবিলম্বে টিম গঠন করে প্রয়োজনে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ এনে আমাদের সব থেকে বড় প্রাকৃতিক সম্পদকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো উচিত। এক্ষেত্রে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আর পরবর্তীতে এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য সরাকারের প্রতি কিছু দাবী জানাচ্ছি-
১) বনের মধ্যে কয়েকটি চ্যানেল ছাড়া বাকি চ্যানেল গুলা দিয়ে মালবাহী ভারী জলযান চলাচল অনতিবিলম্বে বন্ধ করা হোক।
২) সুন্দরবন আমাদের দেশে না হয়ে অন্য কথাও হলে তারা কি করতো বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এখন আমাদের বনের রক্ষনাবেক্ষনের জন্য পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ দের নিয়ে স্পেশাল টাস্কফরস গড়ে তোলা হোক যারা এরকম বিপর্যয়ে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে।
৩) এলাকার মানুষদের নিয়ে বন ব্যবস্থাপনায় একটি সম্মিলিত উদ্যোগ গঠন করা উচিত। যার মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে বনের জীববৈচিত্রের প্রয়োজনীয়তা এবং এদের রক্ষা করার কৌশল। এতে তারা অনেক সচেতন হবে।
৪) আইন ভঙ্গকারীদের প্রতি কোঠর শাস্তির বিধান রেখে নতুন কিছু আইন প্রনয়ন করা উচিত। এবং সেগুলো সঠিক ভাবে প্রয়োগ করার জন্য বাংলাদেশ নেভি এবং কোস্টগার্ড সদস্যদের নির্দেশ দেয়া উচিত। প্রয়োজনে বনাঞ্চলে আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হোক।
৫) আর এরকম বিপর্যয়কে পরবর্তীতে গুরুত্ব সহকারে দেখে এটাকে রাসায়নিক বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করে সর্বাত্মক ভাবে এটা মোকাবেলা করা উচিত।
সুন্দরবন তো আমাদের মায়ের মতো শত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আমাদের আগলে রেখেছে বারবার। আমরা কি আমাদের মায়ের জন্য কিছু করতে পারি না?
আমাদের সুন্দরবন এখন ঘোর সঙ্কটে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটু দেখবেন কি?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।
আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.
গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন
=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=
©কাজী ফাতেমা ছবি
বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।
ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন