সমকামীদের কখনোই শ্রদ্ধার চোখে দেখি নি, আজও দেখি না। তাদেরকে কেন যেন বিকৃতি মানসিকতার পরিচায়ক বলে মনে হয়। এরা সমাজ থেকে বিশেষ করে আমাদের সমাজ থেকে সম্পূর্ণ বিছিন্ন। পরিবার, সমাজ, দেশ কেউ তাদেরকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে না। সমাজের প্রতিটা স্তরে তারা ঘৃণিত। আমরা তাদেরকে শ্রদ্ধা করতে না পারি তাই বলে গ্রেপ্তার হয়রানি করতেও পারি না। তারা কি খাবে, কি পড়বে, কার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করবে এটা একান্তই তার তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ বিষয়ে নাক গলানোর অধিকার কারো নেই। আমরা এর কারন ও ফলাফল বোঝাতে পারি, সমাজের মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারি কিন্তু এভাবে গণগ্রেফতার করে জেলে পুরে রাখতে পারি না।
কেরানিগঞ্জের আঁটিবাজার থেকে ২৭ তরুন সমকামী সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে সমকামী সন্দেহে দেশে কোথাও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে বেশ কয়েক বছর আগে দুটি মেয়ে বিয়ে করেছিল যা সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে ছাপা হয়েছিল। তখন কিন্তু গ্রেপ্তারের কোন প্রশ্নই আসে নি বরং বৈবাহিক জীবন কেমন চলছে তা নিয়ে রসাত্মক নিউজ পরিবেশন করেছে। তখন গণমাধ্যম, প্রশাসন, সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেউ বলে নি এটা অবৈধ, আইন বিরোধী। কিন্তু আজ হঠাৎ করে এতগুলো তরুনকে এক সাথে গ্রেপ্তার করে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে বুঝতে পারছি না। এরা আগে গত বছর ২৫ এপ্রিল জুলহাস মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয়কে সমকামীতার অভিযোগে নিজ বাসায় জঙ্গীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এছাড়াও একের পর এক ব্লগার, কবি, সাহিত্যিকে, সংস্কৃতিমনাদের হত্যা করতে থাকে জঙ্গীরা যা এখনো বিদ্যমান ঠিক এমন প্রেক্ষিতে সরকার জঙ্গি বিরোধী তৎপরতা না বাড়িয়ে লেখক-ব্লগার-মুক্তমনাদেরই সমালোচনা শুরু করে সরকার যা পরোক্ষভাবে জঙ্গীদেরই সমর্থন দেয় সরকার এমন কি অনেককে গ্রেপ্তারও করে সরকার। কেউ কেউ এখনো জেলে পঁচে মরছে। এটা তারই ধারাবাহিকতা কিনা কে জানে। কেউ কেউ ভাবতে পারেন আমি আমি সমকামীদের সমর্থন দিচ্ছি, না আমি কখনই সমকামীদের সমর্থন দেই নি, এখনো দিচ্ছি না, শুধুমাত্র তাদের অধিকারটুকু স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমাদের খাবার, বাসস্থান, পোশাক যেমন মৌলিক অধিকার তেমনই যৌন সম্পর্কও মৌলিক অধিকার এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে কারো মৌলিক অধিকার হরণ করতে পারি না। এমনকি কারো মৌলিক অধিকার হরণ হয়ে থাকলে তার প্রতিবাদ করা উচিত, তাতে সে শত্রু কিম্বা অপছন্দের বা ঘৃণিত ব্যক্তি হলেও। যদি সরকার মনে করে থাকে এটা প্রব্লেম, সমাধান হওয়া উচিত তবে সরকারের যথাযত প্রক্রিয়া অনুসরন করা উচিত যাতে করে জন সচেতনতা বাড়ে, পরিবার ও সমাজ সচেতন হয় তবে শক্তি প্রয়োগ করে নয় বরং কাইন্সিলিং করা যেতে পারে। এমনিতেই সমকামীদের তেমন কোন তৎপরতা আমাদের সমাজে নেই তারপর জুলহাস-রাব্বী হত্যার পর টোটালি তারা চুপসে গেছে, আর এখন শুরু হল ধরপাকড়। বিষয়টি এমন যে সরকার-জঙ্গী অলিখিত চুক্তি করেছে। এর আগে জাতিসংঘ যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়ে বেশ কয়েকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় দেশে সমকামী নেই আর ঠিক এমন প্রেক্ষিতেই এক সাথে ২৭জনকে সমকামী সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হল।
মদ্দাকথা হচ্ছে, আছে কি নেই তা নয়, জাতি, সম্প্রদায়, যৌন সংখ্যালঘু নির্বিশেষে প্রত্যেকের অধিকার রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। আমার আপনার অধিকার বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন হলে আপনি আজ চুপ থাকলে কাল আপনার অধিকার ক্ষুন্ন হলে তারাও চুপ থাকবে। কে চুপ থাকল কি থাকল না তার থেকে বড় কথা আপনার কথা বলা উচিত তাতে নিজের কাছে কিছুটা অস্বস্থি লাগলেও।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৭ সকাল ৭:১৬