somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাধু সাবধান : সিম তুলে বিকাশের টাকা আত্মসাৎ!

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকাশের অ্যাকাউন্ট আছে এমন মুঠোফোনের সিম বন্ধ করে বিকল্প সিম গ্রাহকদের অজান্তেই তুলে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। আর এই বিকল্প সিম তুলে সেখানে থাকা বিকাশের গ্রাহকদের টাকা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, একজনের সিম অজান্তেই তুলে নেওয়া এবং গোপন পিনকোড জেনে যাওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। তাঁদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে মুঠোফোন কোম্পানি, বিকাশ ও সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও প্রতারণার উৎস সম্পর্কে জানতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা, সমাধানও হচ্ছে না।
মুঠোফোন কোম্পানি ও বিকাশ কর্তৃপক্ষের দাবি, গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের অসতর্কতার কারণে সিম তোলার প্রয়োজনীয় তথ্য ও টাকা স্থানান্তরের জন্য পিনকোড জেনে নিচ্ছে প্রতারক চক্র।
গত বছরের ৯ মে প্রথম আলোয় ‘অন্যের সিম তুলে বিকাশের টাকা আত্মসাৎ করছে প্রতারক চক্র’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ওই সময় প্রতারণা প্রতিরোধে ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের কাছে বেশ কিছু নির্দেশনা দেয় বিকাশ কর্তৃপক্ষ। এরপর প্রতারণা কিছুটা থামলেও সম্প্রতি তা আবার শুরু হয়েছে। এ ছাড়া প্রতারণার নতুন কৌশল হিসেবে অনেকে ভুয়া খুদে বার্তার মাধ্যমেও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
বিকাশ ব্র্যাক ব্যাংকের মালিকানাধীন একটি মুঠোফোন আর্থিক সেবা। এটি মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে টাকা আদান-প্রদানের একটি পদ্ধতি। পাসপোর্ট আকারের ছবি, পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে যেকোনো মুঠোফোনের সিমে (সিটিসেল ও টেলিটক ছাড়া) যেকোনো বিকাশ এজেন্টের কাছে গিয়ে বিনা মূল্যে ব্যবসায়িক (এজেন্ট) ও ব্যক্তিগত (পার্সোনাল) দুই ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। অ্যাকাউন্ট খোলার পর মুঠোফোন নম্বরই হবে বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর। বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকা মুঠোফোনের সিম থেকে আরেক সিমে টাকা লেনদেনের জন্য প্রত্যেক বিকাশ অ্যাকাউন্টধারী নিজস্ব গোপন পিনকোড ব্যবহার করেন।
আবদুল কুদ্দুস নামের মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকার এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামীণফোনের তিনটি সিম তাঁর স্ত্রী মাকসুদা বেগমের নামে নিবন্ধন করা। ওই তিন সিমে বিকাশের নিবন্ধন করা হয়। গত ১৬ জানুয়ারি বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে ওই তিনটি সিম গ্রাহক সেবাকেন্দ্র থেকে তুলে কে বা কারা সিমগুলোতে থাকা ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ বিষয়ে কাফরুল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়।
একই অভিযোগে কাফরুল থানায় জিডি করেন রুহুল আমিন শেখ নামের একই এলাকার এক বাসিন্দা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২১ জানুয়ারি তাঁর নামে নিবন্ধন করা একই মুঠোফোন কোম্পানির তিনটি সিম তুলে বিকাশের ১৭ হাজার ৫৯৬ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
প্রথম আলোর কাছে একই অভিযোগ করেন আলী আকবর নামের ইব্রাহিমপুরের এক বাসিন্দা। তাঁর গ্রামীণফোনের তিনটি সিম অন্য স্থান থেকে উঠিয়ে বিকাশের ৪৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী আবদুল কুদ্দুস ও রুহুল আমিন ইতিমধ্যে গ্রামীণফোন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরেও লিখিত অভিযোগ করেছেন।
নিবন্ধন করা সিম অজান্তে উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের করপোরেট কমিউনিকেশনসের প্রধান তাহমিদ আজিজুল হক প্রথম আলোর কাছে সম্প্রতি একটি লিখিত বক্তব্য পাঠান। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘আমরা বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী সিম পরিবর্তন করে থাকি। তবে সিম পরিবর্তনব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নিরাপদ করতে জাতীয় পরিচয়পত্র ডাটাবেজে আমাদের প্রবেশাধিকার থাকাটা খুবই জরুরি। আমরা এ বিষয়ে সরকারের কাছে দীর্ঘদিন থেকে অনুরোধ জানিয়ে আসছি।’
গ্রামীণফোনের লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সিম পরিবর্তনের সঙ্গে বিকাশে টাকা খোয়া যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, বিকাশ অ্যাকাউন্টের আলাদা পাসওয়ার্ড বা পিনকোড আছে, যেটা না জানলে টাকা ওঠানো সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে বিকাশের জনসংযোগ ব্যবস্থাপক জাহেদুল ইসলামও প্রথম আলোর কাছে একটি লিখিত বক্তব্য দেন। সেখানে বলা হয়, বিকাশের অ্যাকাউন্টহোল্ডারদের পিন নম্বর গ্রাহকের বাইরে অন্য কারও জানা সম্ভব নয়। এমনকি বিকাশের পক্ষেও জানা সম্ভব নয়। তাই এ ক্ষেত্রে প্রতারক চক্র কোনো না কোনোভাবে ওই গ্রাহকের পিন নম্বর জেনে নিয়েছে। আরও বলা হয়, সিম পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের মুঠোফোন অপারেটর ছাড়া অন্য কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ফলে এখানে বিকাশের করণীয় কিছু নেই।
তবে বিকাশ কর্মকর্তারা জানান, প্রতারণা প্রতিরোধে তাঁরা একটি সমাধান বের করার চেষ্টা করছেন। সমাধানটি হলো, বিকাশ অ্যাকাউন্ট আছে এ ধরনের কোনো সিম তোলা হলে সংশ্লিষ্ট মুঠোফোন কোম্পানি তা বিকাশকে জানাবে। তখন বিকাশের এ অ্যাকাউন্ট দিয়ে কোনো প্রকার লেনদেন করা যাবে না। সিম তোলার পর গ্রাহক বিকাশের গ্রাহক সেবাকেন্দ্রে ফোন করে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলে অ্যাকাউন্টটি সচল করা হবে।
ভুয়া বার্তা পাঠিয়েও প্রতারণা: বিকাশের গ্রাহকেরা জানান, বিকাশের টাকা লেনদেন করতে গিয়ে যে ধরনের খুদে বার্তা আদান-প্রদান হয়, ঠিক একই ধরনের ভুয়া খুদে বার্তা পাঠিয়েও বিকাশের টাকা আত্মসাৎ করছে প্রতারকেরা। ভুয়া খুদে বার্তায় টাকা পাঠানোর কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে সেই অর্থ আসছে না। কিন্তু প্রতারকেরা সেই অর্থ ঠিকই তুলে নিচ্ছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রতারক সন্দেহে কয়েকজনকে থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় থানা-পুলিশের মধ্যস্থতায় মীমাংসা হয়ে যায়।
সূত্রাপুরের মো. ফরিদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, তাঁর মুঠোফোনে এ ধরনের অসংখ্য ভুয়া খুদে বার্তা এসেছে। এ ধরনের কয়েকজনকে তিনি আটকও করেছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মিরপুরের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ভুয়া খুদে বার্তায় টাকা তুলতে আসা এক যুবককে তিনি কাফরুল থানায় সোপর্দ করেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়।
জানতে চাইলে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপাতত মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সবকিছু আমরা খতিয়ে দেখছি।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন প্রতারণার কথা আমার নলেজে কেউ এখনো আনেনি। এ ধরনের প্রতারণা ঘটে থাকলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তথ্যসূত্র : কাজী আনিছ ,প্রথম আলো
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×