আজ (০৯-০১-২০১৬) ষ্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যান্কের সৌজন্যে দেখলাম কথা সাহিত্যিক হুমায়ন আহমেদের গল্প অবলম্বনে নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম পরিচালীত চলচিত্র "অনিল বাগচীর একদিন"। সুন্দর একটি আয়োজনের জন্য অবশ্যই ষ্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যান্ক প্রশংসার দাবীদার।
বেঙ্গল ক্রিয়েশনস প্রযোজিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন অনিল বাগচীর চরিত্রে অভিষিক্ত অভিনেতা আরেফ সৈয়দ। এছাড়া উল্লেখযোগ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন গাজী রাকায়েত, তৌফিক ইমন, জ্যোতিকা জ্যোতি, ফারহানা মিঠু এবং মিশা সওদাগর। কথাসাহিত্যিক হুমায়ন আহমেদ এবং ছবির নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম নিজেরাই স্বস্থানে উজ্জ্বল নক্ষত্র, তা এ চলচিত্রে ছাপ রেখেছে। তবে কথাসাহিত্যিক হুমায়ন আহমেদের নিজ্বস্ব নির্মানে তার অভিনয় কুশলী নির্বাচনে গন্ডিবদ্ধতা এবং সমস্বরবিশিষ্ট পরিচালনা থেকে দর্শকদের প্রত্যাশীত ভাবেই মুক্ত করছেন নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। যদিও আমার কল্পনায় অনিল বাগচীর সাথে বাহ্যিক মিল আরেফ সৈয়দের ছিল না, তবে অভিষেক হিসাবে তার অভিনয় নৈপূন্য অত্যন্ত দক্ষতার প্রদর্শণ করতে সফলকাম হয়েছেন। গাজী রাকায়েত এমনই একজন প্রভাবশালী অভিনেতা যে, তার উপস্থিতি কখোনই মনে হতে দেয়নি তিনি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করছেন। প্রথম কোন চলচিত্র দেখলাম যেখানে বাস্তবপর্বগুলো সাদাকালো আর কাল্পনিক অংশগুলো রঙ্গিন দেখানো হয়েছে, যা ছবিটিকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। শব্দশৈলী প্রসংশনীয় এবং দৃশ্য নির্বাচনে তৎকালীন সময়কে ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট পরিশ্রমে ছাপ দেখা গেছে। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর তৎকালীন পরিবেশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পরিবেশ ও উপাদান খুজে নির্বাচন করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য কাজ। বিশেষ করে তৎকালীন খবরের কাগজ অনিল বাগচীকে পাঠ করতে দেখানোটা বেশ স্বকীয় ছিল।
তবে চরিত্র নির্বচনে কিছু ত্রুটি চোখে পড়ার মতো। যেমন গাজী রাকায়েতের যমজ পুত্রসন্তানদ্বয়ের হালফ্যাশনের চুলের ছাট তৎকালীন সময়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। পাকসেনা অফিসার হিসাবে মিশা সওদাগরের উপস্থিতি ক্ষণিকের জন্য গতানুগতিক বাণিজ্যিক ছবিতে দর্শকদের নিয়ে গিয়েছিল। মিশা সওদাগর কোনদিন বাস্তব সেনা অফিসারদের হাঁটার ধরন এবং ইংরেজী বলার বাচনভঙ্গী নিরিক্ষা করলে, উনি নিজের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করবেন। তবে পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম কিভাবে এটা মেনে নিলেন তা বোঝা গেল না। টাঙ্গাঈলগামী বাসটি চাকা পরিবর্তনের জন্য যেখানে থেমেছিল সেখানে রাস্তার দুপাশ কংক্রীটে বাধাঁনো থাকায় তৎকালীন সময় হিসেবে তা মেনে নেয়া ছিল প্রশ্নসাপেক্ষ্য। বেবীট্যাক্সী দুইটির নাম্বার প্লেটে "ঢাকা মেট্রো" উল্লেখ করা ছিলো ( ঢাকা মেট্রোপলিট প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৬ সালে ) যা চাইলেই ক্যামেরার চোখে বাদ দিয়ে দৃশ্যটা তোলা যেত।
যেহেতু অায়োজনটি ছিলো নির্বাচিত দর্শকদের জন্য, তাই দুপুরের অলস ঘুমকে জলাঞ্জলী দেয়া ছাড়া কাউকে ঘাঁটের পয়সা খরচ করে ছবিটি দেখতে যেতে হয়নি এবং ছবির শুরুতেই অনিল বাগচীর রাত দুপুরের ঘুম ভাঙ্গার দৃশ্য ব্যাপক হাসির রোল তুলে দর্শকমন্ডলী তাদের মেধার পরিচয় দিয়েছেন। তবে আমার সন্দেহ হয় স্বাধীনতা উত্তর ফেসবুক প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধ মানে প্রর্দশনী টি টুয়েন্টি ম্যাচে অন্তিম ওভারে খেলা জেতার মতো, "একটা ম্যাচ হারলেই বা কি" ধরনের। তাদের ইতিহাসের বই বক্তার অথবা ঘোাষকের স্তুতি পাঠ করিয়েছে, যা তাদেরকে শুধু বির্তকের খোরাক জুগিয়েছে। এই প্রজন্ম গ্রন্থাগারে গিয়ে "অনিল বাগচীর একদিন" খুজেঁ পড়ে না। তাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধে অনিল বাগচীর ( যিনি না মুসলিম, না মুক্তিযোদ্ধা, না রাজনৈতিক কর্মী) সন্কটময় বস্তবতা তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সন্কটময় পরিস্থিতিকে নিরপেক্ষ (স্বাধীনতা উত্তর রাজনীতির সাপেক্ষ) দৃষ্টিতে তুলে ধরার এই প্রচেষ্ঠা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং প্রসংশনীয়। নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের এই উদ্যোগটা যে সফল তা উপলব্ধিা করলাম শেষদৃশ্যে গুলীর শব্দের পর পুরো প্রেক্ষাগ্রহ স্তব্ধ হয়েছিলো কয়েক মুহূর্ত।
আমরা জানি নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের "অনিল বাগচীর একদিন" কোনদিন ব্যবসা সফল হবে না। যেমনটি ব্যবসা সফল হয়নি কথাসাহিত্যিক হুমায়ন আহমেদের লেখা "অনিল বাগচীর একদিন", তারই লেখা "হিমু"র মতো অন্যসব হালকা চালের উপন্যাসের তুলনায়। তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নিরপেক্ষ এবং প্রকৃত সংরক্ষণাগারে এই চলচিত্র্রটি উজ্জ্বল হয়ে থাকবে স্বমহিমায়। পরিশেষে বলতে চাই এই ধরনের চলচিত্র আরো নির্মিত হোক, যদিও এসকল ছবি মেরুদন্ডহীন র্দশকদের জন্য নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩২