সুচিস্মিতা,
তোমার ফিনফিনে কেশতুল্য কোমল কায়াখানি কলমের কালিতে রুপ দেবার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি বহুবার। কি আশ্চর্য জানো? হয়তো কপল থেকে চিবুকে নামতে আমার কলমের কালি ফুরিয়েছে। হয়তো তোমার চোখের কাজলের সাথে আমার কলমের কালি লেপ্টে গিয়ে সে কি বিশ্রী কান্ড ঘটেছে। হয়তো ঠোটের কোনে লেগে থাকা কারও ভালোবাসা আমার দৃষ্টি আটকে দিয়েছে, বিমর্ষ মনে আর কলম চালাতে পারিনি। কাকচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে তোমার কাধ থেকে বুকের ওপরের ভাজে কল্পনায় আমার কয়েকফোটা ঘাম পড়েছে সত্য। তারপরেও না আমি তোমার রক্তবর্ন কানের অবয়ব একটুকু ব্যখ্যা করতে গিয়ে চেষ্টা করেই যাচ্ছি।
হয়তো তোমার নখের স্পর্শ আমার হাতে কতটা দাগ ফেলবে ভাবতে ভাবতে ঘুম পেয়ে বসেছে কত। পাতলা কাপড়ের ফাঁক দিয়ে পেট থেকে কোমরের ভাজ অব্দি ব্যক্ত করতে গিয়ে হয়তো একটা দমকা বাতাস বাতি নিভিয়ে দিয়েছে কতবার। তারপরেও না আমি তোমার কাধের স্পষ্ট তিলকটার অকল্পনীয় আকর্ষনের ব্যখ্যা লিখেই চলেছি।
শব্দহীনা,
ঝড়ো বাতাসের ধুলো ময়লাগুলোও তোমার ঈষৎ রক্ত জমাট বাধা গোড়ালী থেকে আমার চোখ সরাতে পারেনি। বহুবার, ঠিক বহুবার আমার কলম আটকে রয়েছে তোমার শব্দহীন পদে পদে। তোমার ডানহাতের তর্জনীর নখের লাল রঙটা ব্যক্ত করতে গিয়ে একবার কি কান্ডটাই না ঘটেছিলো জানো? তাহলে শোনো!
নাহ থাক। সামান্য রঙকে অসামান্য করে তুললে পাছে আমি তোমার নির্লিপ্ততায় ডুবে যাই। আমি হারিয়ে যাই বয়সের মাঝে। আমি ভুলে যাই আমার তৈরি শেকলে আমি বহুকাল আবদ্ধ।
এই যে এত রস, এত প্রেম কোথেকে আসে জানো তো? জানবে কিভাবে? তোমার চশমার ফাঁকে আড়চোখা দৃষ্টি যে কোনকালেই আমার দিকে ছিলোনা সে বিষয়ে কিন্তু আমি শতভাগ নিশ্চিতই থাকি। পরম আনন্দে তোমার চোখের কোনের ভাজগুলোও না আমার গোনা হয়েছে হাজারবার। ডানপাশে তৃতীয় ভাজে ঈশ্বর লুকিয়ে আছেন। শ্রীমতি মঙ্গলাদেবী আমায় হাত ইশারা করে ডাকে। আমি কলম থামিয়ে দিয়ে আবারও চুপ হয়ে রই। কাধ বরাবর এলো কেশের একাংশ যখন সামনে মাড়িয়ে দাও, পিঠের ওপরে কাধের রঙচটা লোমগুলোও তখন হাহাকার করে ডাকে আমায়। সে কি মোহ, সে কি উন্মাদনা।
মিথ্যে বলবোনা, কোমরের নিম্নাংশ রচনায় বেশ উৎফুল্ল সাড়া দিয়েছিল কলমটা। কারন কি জানো? আর বাকি দশজন প্রকৃতির অলংকারের মত তুমি নও। কলমির ডালের মত তোমার নিতম্ব এমন অদ্ভুত কুৎসাকর্ষনীয় দোল খায়না। বরং সেটা উদ্দীপনা ছড়িয়ে দেয় শিরায় শিরায়, প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে। মাঝে মাঝে কেন জানি মনে হয় হঠাৎ করেই একটা ঝড়ো বাতাসের ভার সহ্য করতে না পেরে তুমি আমার কোলে আছড়ে পড়বে। আমি ডানে বায়ে না ভেবে তোমায় কোমল আদরে আচ্ছাদিত করবো আমার ছায়ায়।
মেধাবিনী,
তোমাকে ব্যক্ত করার ব্যর্থ প্রয়াস চলছে সেই জনম জনম থেকেই। তোমার উত্তরসূরীদের কিঞ্চিত প্রকাশ না করতে পেরেও রবি দা হয়ে গেলেন কবিগুরু, মহাকবির খেতাব পেলেন আলাওল। এ কি! তুমি হাসছো? ভেবে দেখো তো এই অধম যদি একবারের জন্য হলেও তোমার বদনের মলিনতা রচনার মাঝে আবদ্ধ করতে পারে- কি অঘটনটাই না ঘটবে সেদিন?
মোহময়ী,
এতটুকু পরিষ্কার করে যাই। একদিন এই খেলা শেষ হবে, এই মেলা শেষ হবে। আমাদের গড়া নিয়মেই হয়তো তুমি আগেই মুক্তি পাবে। পৃথিবীর পরিসর এতটা ক্ষুদ্র হওয়া সত্বেও হয়তো দেখা হবেনা, হবেনা কোন কথা। হয়তো এই মোহ ভুলে আমি মন দেবো অন্য মোহে, হবেনা তাকিয়েও না তাকানোর ছলে তোমাকে দেখা। জগতের চিরাচরিত নিয়মানুসারে নতুন রচনার জন্য উৎসুক আমি আবারও কলম ধরবো। তবে আমার চাওয়া একটাই- আগামিতেও যেনো প্রথম অন্তরায় তুমিই থাকো, প্রথম সুরেও যেন দুটি অক্ষরই থাকে। বিশ্বাস করো, কামোদ্দীপ্ত চোখে তোমায় রচনা করার জোয়ারহীন ভালোবাসা আমার ভেতরে কোনকালেই কাজ করেনি। বরং আমি তোমায় ব্যক্ত করতে চেয়েছি অন্যভাবে। কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি।।
-হয়তো!!!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:০২