somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বা দমন-পীড়ন চন

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনাম দেখেই হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন পুরো লেখায় কি প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। তবে আমি বাংলা সিনেমার কোন পরিচালক নই যে নায়ক নায়িকার গভীর মিলন দিয়ে শুরু করে সবশেষে পুলিশ আসার ব্যাপারটা দর্শকদের জানিয়ে দেবো আগেই। যাইহোক, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটেই। রাজনীতি, পেটনীতি, দুর্নীতি, ভাইনীতি কিংবা স্বার্থনীতি যে যেটাই করুক না কেন নির্বাচন নিয়ে টুকটাক মাথা ঘামাচ্ছেন সবাই। এটা অন্তত আপনি না স্বীকার করলেও তা সবার কাছেই পরিষ্কার। কারন একমাত্র এই নির্বাচন আসলেই আমাদের অধিকার জ্ঞানটা তীব্র থেকে তীব্র হয়ে ওঠে। যেটা বাকি চার বছর সুপ্ত অগ্নেয়গিরীর ন্যায় নিস্তেজ থাকে। নিস্তেজ থাকে বললে ভুল হবে, সেটা নিস্তেজ রাখা হয়। কারন গনতান্ত্রিকতার মোড়কে স্বৈরতান্ত্রিক একটা দেশে আপনি কখনোই সেটা প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখেন না। ওপর মহল যদি চায় আপনার খাওয়া প্রয়োজন একমাত্র তখনই আপনার খিদে লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আমি আলাদাভাবে কোন দলের কথা উল্লেখ করছিনা এক্ষেত্রে কারন বিএনপি-জামায়াতের সময়েও ব্যতিক্রম দেখিনি।

প্রসঙ্গে আসা যাক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার অংশগ্রহন করছে গত নির্বাচনে একা লড়তে ভয় পাওয়া সেই দল বিএনপি। বাংলাদেশের রাজনিতীতে প্রধান বিরোধী দল যারা। তবে তারা এবার নির্বাচন করছে এবং গোষ্ঠীর সবাইকে এক করে। মানে 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট' নামক জোট গঠন করে। একাদশ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহন থাকছে এবার এটা গনতান্ত্রিক ভাবাদর্শের দারুন এক বহিঃপ্রকাশ। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নয় বরং তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া আওয়ামী সরকারের অধীনে। এতক্ষন গনতন্ত্রের সাফাই গাইলেও এটা ঘোরতর গনতন্ত্রবিরোধী কর্মকান্ড এবং 'দ্যা টার্মস অব ডেমোক্রেসী'র সাথে সাংঘার্ষিক তা সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষের জানার বাইরে নয়। কিন্তু তারপরেও বিএনপি গঠিত জোট 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট' নির্বাচনে আসতে সম্মতি প্রদান করেছে একটাই কারনে। আর সেটা হলো আওয়ামী সরকারের 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' তৈরির করার প্রতিশ্রুতি। প্রশ্ন রাখতে পারেন আওয়ামী লীগ কখনোই বলেনি এই 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' এর কথা যেটা ইসি'র তত্বাবধানে। কিন্তু বর্তমানে ইসি'র কার্যকলাপ দেখলে বোঝাই যায় এক্ষেত্রে তারা কতটা নিরপেক্ষ!

এবার সংক্ষিপ্ত আকারে জানা যাক লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কি? এবং আওয়ামি সরকারের কি এমন প্রতিশ্রুতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিতে দশম জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন না করা দল বিএনপি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে যাচ্ছে?

'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' বলতে স্বাভাবিকভাবে যেটা বোঝায় সেটা হচ্ছে রাজনিতীর মাঠে নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলের সমান পদচারণা ও রাজনৈতিক অধিকারের সুষ্ঠু প্রাপ্তি নিশ্চিতকরন। তন্মধ্যে দলীয় প্রচার, প্রচারণার বিষয়গুলোই প্রাধন্য পায় মূলত। তবে রাজনীতির মাঠ ও খেলার মাঠ এক নয়। এক্ষেত্রে 'প্লেয়িং ফিল্ড' কথাটা যথেষ্ট আপত্তিকরও বটে। যাইহোক, এই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব হিসেবে বর্তায়। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে কতটা সফল হয়েছে তা বিবিসি সংবাদ সংস্থার অনলাইন সংষ্করনের ২৬ নভেম্বরের সংবাদগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন। এছাড়াও দেশিয় বিভিন্ন মূলধারার গনমাধ্যমসহ অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর রাজনীতির খবর কিংবা সম্পাদকীয় দেখলে বাকিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। উপরের প্রশ্ন দুটির উত্তর পেয়ে গিয়েছেন নিশ্চই। হ্যা, এই হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এবং তারই ধারাবাহিকতায় মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অগ্রসর হয় 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট' তথা বিএনপি। 'তথা বিএনপি' শব্দটা এই কারনে ব্যবহার করলাম কারন দেশের আমজনতার অনেকেই এখনো রাজনীতি বলতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেই বোঝে।



মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষ করে যখন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ টেলিভিশন, পত্রিকা কিংবা নানা সাময়িকীতে নিজেদের প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত ঠিক তখনই পুলিশ, ডিবি কিংবা র‍্যাবের দমন-পীড়নের যাতনায় ঘরছাড়া বিরোধী দলীয় প্রার্থীসহ সমর্থকেরা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলছে এই দমন-পীড়ন। প্রতিদিন খবর ছাপা হচ্ছে। পত্রিকার রমরমা ব্যাবসা চলছে। আওয়ামী সমর্থকদের মুচকি হাসির খোরাক বাড়ছে। অন্যদিকে পুলিশের নির্যাতন থেকে বাঁচতে একটুকু আশ্রয় খুঁজতে হন্য হয়ে এ প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন বিরোধী দলীয় সমর্থকেরা। প্রতিশ্রুতির সেই 'প্লেইং ফিল্ড' এ খেলা ঠিকই চলছে তবে রাজনীতির খেলা নয়। আমি এটাকে কখনোই রাজনীতি বলতে পারিনা যে রাজনীতি জনগনের জান, মাল কিংবা নিরাপত্তা প্রদানে ব্যার্থ হয়।

কি বিশ্বাস হচ্ছেনা দমন-পীড়নের কথা?
রাস্তায় হাটলে পুলিশের হয়রানী, রাতে বাসায় বাসায় গিয়ে তল্লাসীর নাম করে ধরে অর্থের দাবি করা এখন প্রতিদিনকার ঘটনা। এই হচ্ছে গনতন্ত্রিক দেশের অবস্থা। এই হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে নির্বাচন পূর্ববর্তী অবস্থা। একবার ভাবুন ৩০ ডিসেম্বরের পরে কি হতে যাচ্ছে। গা-ঢাকা দেয়া ওই নিরীহ লোকগুলো কি ফিরতে পারবে নিজের ঘরে? সন্তানের মুখ দেখাটাও তাদের জন্য হারাম হয়ে গিয়েছে। আওয়ামী ধর্মগ্রন্হ অনুযায়ী বিরোধী দল করা তো শিরক-বিদআতের পর্যায়ে পড়ে দেখছি। সংবাদপত্র থেকে শুরু করে অনলাইনগুলোও মুখে খিড়কি এঁটে বসে আছে। কি করবে? নইলে সরকার বন্ধ করে দেবে। সম্প্রতি ৪৭ টা ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হল কোন ধরনের কারন না দেখিয়েই। সুষ্ঠুভাবে সরকারের সমালোচনা করলে সেটা রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য বলে অপপ্রচার চালিয়ে দেয়া হয়। আরে ভাই, রাষ্ট্র আর সরকার দুটো আলাদা বিষয়। কেন গুলিয়ে ফেলেন বারবার। নাকি জানেন না?

পরিশেষে একটা প্রশ্নের উত্তর চাই- এই দমন-পীড়নের প্রতিকার কি আছে কোন? এরাও তো মানুষ, এরা একটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়। আর কতকাল এই ঘৃন্য রাজনিতীর শেকলে এরা আবদ্ধ থাকবে? এরাও বাঁচতে চায়, এদের বাঁচতে দিন।।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:০১
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×