হজ্ব সম্পর্কে দুইটা পোস্ট দেখলাম এই ব্লগে আজ। তাই ভাবলাম আমিও একটা লিখে ফেলি। কষ্ট বলতে কিবোর্ডে আঙ্গুল বুলাতে হবে এই যা।
মাঝে মাঝে আমিও যে হজ্বের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবিনা তা না। অনেক আগে অর্থাৎ আমার বয়স যখন ছয় বা সাত হবে তখন আমি আমার বাবারে বলেছিলাম, "আল্লাহ তার ঘরটা মক্কাতে বানালো কেন? কা'বা ঘরটা যদি আমাদের দেশে হতো তাহলে আমরা কত সহজে হজ্ব করতে যেতে পারতাম।" কথাটা এই জন্যে বলেছিলাম কারণ আমাদের পাড়া থেকে একজন সেবার হজ্বে গিয়েছিল। এখনকার মত হজ্ব তখন যেমন তেমন ব্যাপার ছিল না। এত হাজ্বীও হজ্ব করতে যেত না। চার পাঁচ বছর পর একজন হাজ্বী হয়তো এক এক এলাকা থেকে যেত। তবে মজার ব্যাপার হলো এই যে, যে ব্যাক্তি হজ্ব কারার জন্যে যেত, তাকে প্রায় একমাস ধরে তার আত্মীয় স্বজনরা দেখা সাক্ষাৎ করার জন্যে তার বাসায় আসা যাওয়া শুরু করতো। কারণ মানুষের মধ্যে হজ্ব নিয়ে ভীষন ভয় ছিল। কারণ কা'বা শরিফ বাংলাদেশ থেকে অনেক দুর। যেতে প্রায় এক মাস আসাতে এক মাস আবার হজ্ব করার জন্যে সেখানে থাকতে হয় একমাস। প্রায় তিন মাসের জন্যে সে বাড়ী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে। এই জন্যে আত্মীয় স্বজনরা সবাই তাকে দেখার জন্যে আসেন। তাছাড়াও আগে হজ্বে গিয়ে অনেক হাজ্বী ফেরত আসতে পারতো না কারণ বিভিন্ন রকম দুর্যোগের ছিল। জাহাজ ডুবি থেকে শুরু করে আরবের গরম সহ্য করতে না পারা ইত্যাদি। তাই তিনি যদি হজ্বে গিয়ে না ফেরেন, তাই তার সাথে শেষ সাক্ষাৎ করা আর কি।
দুপুরে পোস্ট দুটি পড়তে পড়তে মনে পড়ে গেল সেই ছোট বেলার কথা। সত্যিই তো, আল্লাহ যদি তাঁর ঘরটা আমাদের বাংলাদেশে বানাতো তাহলে আমরা কত আগেই ধনী রাষ্ট্রে পরিনত হতে পারতাম। কারণ একটা অংকের হিসাব দেই। বাংলাদেশ থেকে যে হাজ্বীরা হজ্ব করতে যায় তাদের বর্তমানে প্রায় দেড় লাখ বা তারও বেশী টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে প্লেনের টিকেট ভাড়া ১১৫০/= ডলার যদি বাদ দেয়া যায় তাহলে এক লাখের কিছু কম টাকা যা আরবেই খরচ করে। রাফলি ধরে নিলাম জন প্রতি এক লাখ টাকা হাজ্বীরা আরবে খরচ করে বিভিন্ন প্রয়োজনে। যেমন থাকা খাওয়া খরচ, যানবাহন খরচ, হজ্ব পালনের কিছু সরঞ্জামাদি কেনা, কোরবানীর পশু কেনা এবং আত্মীয় স্বজনের জন্যে কিছু কেনা কাটা।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৫০,০০০ হাজ্বী হজ্ব করতে যায়। তাহলে প্রায় ৫০টার উপরে ইসলামিক কান্ট্রি আছে সারা বিশ্বে। প্রতিটি দেশ থেকেই যদি পঞ্চাশ হাজার হাজ্বী হজ্ব করতে আসে তাহলে মোট হাজ্বীর সংখ্যা হয় ২৫,০০,০০০ হাজ্বী। এই পচিশ লাখ হাজ্বী যদি এক লাখ করে খরচ করে তাহলে মোট ২৫০০০,০০,০০,০০০/- টাকা যা আরবে খরচ করে। অর্থাৎ পঁচিশ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন দেশ থেকে আরবে গিয়ে ঢুকে। তাহলে ভাবুন যদি কা'বা শরিফ আমাদের দেশে হতো তাহলে প্রতি বছর পঁচিশ হাজার কোটি টাকা আমদের দেশে এসে ঢুকতো, যা কি না আমাদের জাতীয় বাজেটের ১ বছরের একচতুর্থাংশ বাজেটের সমান। তাহলে আমাদের দেশ ধনী রাষ্ট্র হতে কয় বছর লাগতো? চুটকিতেই ধনী রাষ্ট হয়ে যেত। তখন আইএমএফ ব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং এডিবি আমাদেরকে চোখ রাঙ্গীয়ে কথা বলতে পারতো না। আমেরিকান রাষ্ট্রদূত আমাদের রাজনীতিবিদ এবং সরকারকে নাচিয়ে নিয়ে বেড়াতো না। কি না মর্যাদা পেত আমাদের দেশ সারা বিশ্বের কাছে।
তাই ব্লগার আরিফকে বলেছি, দেখ আল্লাহ তো তাঁর ঘর যেহেতু আরবে দিয়ে ফেলেছেন সেহেতু তিনি আর এখানে দিতে গিয়ে অযথা ক্যাচাল বাঁধাতে চাইবেন না। সেহেতু দেখ যদি তোমাদের নাস্তিকদের এইরূপ কোন তীর্থস্থান এখানে করা যায় কিনা। তাহলে প্রতি বছর তোমাদের নাস্তিকদের সকলে সারা বিশ্ব থেকে এখানে এসে তীর্থ যাত্রা পালন করে যেত, এতে দেশের জন্যে কত উপকার হতো। এখন যদি শুরু কর তাহলে তোমার জীবদ্দশায় হয়তো দেখে যেতে পারবে না, কিন্তু তোমার দেশের পরবর্তী প্রজন্ম এর ফল ভোগ করতে পারতো। সারাদিন শুধু মোহাম্মদকে গালিগালাজ কর, কিন্তু চিন্তা করে দেখ তিনি কোরআন লিখে, তাতে হজ্ব কথা ঢুকিয়ে তার পরবর্তী বংশধর বা দেশবাসির জন্যে আজ কত বড় উপকার করে গেছেন। এই গালাগালি করে অযথায় সময় নষ্ট করছো, এখনই নেমে পড়, প্রয়োজন হলে আমিও আছি। আরে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে না হয় নাস্তিক হলাম তাতে কি হয়েছে, তারাতো সুখে থাকবে? আরিফ কি বুদ্ধিটা কিন্তু খারাপ দেই নাই, একটু ভেবে দেখ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



